২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


করোনার বদৌলতে নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন

-

ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহান শহরে যখন কোভিড-১৯ শনাক্ত হলো; তখন আমরা অনেকে ভেবেছিলাম, এটি বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরের ঘটনা। দেশের অনেকেই এটি চিন্তা করিনি, করোনা দেশে না হয় শনাক্ত হয়নি; কিন্তু পৃথিবীতে তো শনাক্ত হয়েছে। দূর দেশের কোনো বিপদে মনে করি আমরা তো নিরাপদে আছি! এটি ভেবে দেখি না, দেশে না হোক, পৃথিবীতে বিপদটা তো হয়েছে। সেই বিপদ আমাদের ওপরে আসবে না তার কী কোনো নিশ্চয়তা আছে?
ইউরোপ বা আমেরিকাতে করোনা যত দ্রুত প্রবেশ করেছে, সে দিক থেকে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে। বিশ্বে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার তিন মাস পর ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। দীর্ঘ সময় পাওয়ার পরও দেশের প্রশাসন ছিল নির্লিপ্ত।
কিভাবে এ দুর্যোগের মোকাবেলা করা যায় তার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে শুধু কাগজে-কলমে আর প্রজ্ঞাপনে সীমাবদ্ধ ছিল। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন ব্রিফিংগুলো অনেকেই নিয়মিত শুনতেন। অধীর আগ্রহে বসে থাকতেন কখন বেলা আড়াইটা বাজবে। কতজন আক্রান্ত হলো, দেশে কতজন মানুষ মৃত্যুবরণ করল সেই পরিসংখ্যান শুনতেন। যতই দিন যেতে লাগল ধীরে ধীরে এ পরিসংখ্যানের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন দেশবাসী। স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসামগ্রীর যে ব্যবহার প্রথম দিকে ছিল, ধীরে ধীরে তা হ্রাস পেতে শুরু করল। যখন খবরে দেখতাম আজ এতজন আক্রান্ত হয়ে এবং এতজন মৃত্যুবরণ করেছে; তখন অনেকেই বলত এত কোটি মানুষের মধ্য এত কম ব্যক্তি মারা গেছেন, এটি কোনো ব্যাপার নয়।
দেশে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সমাজের দৃষ্টিতে রাতারাতি তারা ভিন্নগ্রহের প্রাণী হয়ে গেছেন। তাদের সাথে খারাপ আচারণ থেকে শুরু করে সামাজিকভাবে বয়কট করতেও আমরা দ্বিধাবোধ করিনি। একবার ভেবে দেখিনি যে, এটি একটি রোগ। যেকোনো সময়, যে কারো হতে পারে। আবার কিছু মানুষরূপী হায়েনাকে দেখলাম যারা স্বাস্থ্য সুরার নকল জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত। আবার করোনা পরীার নামে ভুয়া রিপোর্ট, বিশ্ববাসীর কাছে দেশকে করেছে লজ্জিত। এ সঙ্কটকে পুঁজি করে অনেকেই হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, পৃথিবীব্যাপী স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশা। যারা নিজেদের উন্নত দেশ বলে দাবি করে, তাদের করুণ দশা এবার উদাম হয়েছে। বরাবরই আমরা যেহেতু দুর্নীতিতে চাম্পিয়ন, এ সঙ্কটকালে স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে; তা অকল্পনীয়। করোনার কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্নীতি দৃশ্যমান হলেও অন্য সব মন্ত্রণালয়ে দৃষ্টির অগোচরে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। আমরা যেমন দেখলাম করোনাকালে দেশে কিছু ব্যক্তি অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ে কিছু
মানবিক ব্যক্তিও দেখা মিলেছে। যারা মানবসেবায় অসহায়দের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় যাদের পরিবার বা সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছিল, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
কোভিড-১৯ মৃত্যুবরণ করায় পরিবার বা আত্মীয়স্বজন, যে লাশকে দাফন করতে যায়নি। সেই লাশের দাফন পর্যন্ত করেছে কিছু বিশাল হৃদয়ের মানুষ। যারা সত্যিই মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে করোনা মোকাবেলায় ভূমিকা রেখেছেন। নিঃসন্দেহে তা প্রশংসনীয়। করোনাভাইরাসের কারণে আমরা যারা প্রাণের বিদ্যাপীঠ ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছি, তাদের করোনা একটা বার্তা দিয়েছে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আমাদের এভাবে একবারে চলে আসতে হবে।
প্রিয় শিাঙ্গন ছেড়ে জীবনের তাগিদে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। আর পৃথিবীব্যাপী মানুষ স্বার্থরায় অন্যায়-অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিগ্রহ, হত্যা ধর্ষণ, নির্যাতন যেন সস্তা পণ্যতে পরিণত হয়েছিল। অর্থের নিশায় মানুষ এতটা বিভোর হয়েছিল যে, মানবিকতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। ঠিক তখনই করোনা এক মানবিক সমাজ গঠনের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। শুধু অর্থ, গোলাবারুদ বা অস্ত্রের শক্তি থাকলেই জীবন বাঁচানো সম্ভব নয়। বরং সবাইকে একে-অপরের প্রতি মানবিক হতে হবে। যুদ্ধবিগ্রহ বাদ দিয়ে এক ভালোবাসার বন্ধনের সমাজ গঠন করতে হবে। আমরা এতটাই অমানবিক হয়ে গেছি। যে পৃথিবীতে আমাদের বসবাস। সেই পৃথিবীর পরিবেশ আমরা
বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছিলাম। ঠিক তখনই পরিবেশে আশীর্বাদস্বরূপ উপস্থিত নোভেল করোনাভাইরাস। এর প্রাদুর্ভাবে মানুষ যখন ঘরবন্দী; তখন প্রকৃতি যেন নিজের চেনারূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। পৃথিবী সুস্থ হলে নিয়ম করে বছরে কমপে দুই মাস সময় সারা পৃথিবী লকডাউন করে রাখতে হবে। তা হলে পৃথিবীর পরিবেশ স্বাভাবিক থাকবে এমনটিই মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। শুধু মানুষ নয়, সব পশুপাখির সাথে আমাদের মানবিক আচারণ করতে হবে সেই বার্তা দিয়েছে করোনা। পৃথিবীবাসীর জন্য করোনা হলো একটি বার্তা যে, হয়তোবা এর চেয়েও মারাত্মক কোনো ভাইরাস অথবা বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। এর চেয়ে বেশিদিন ঘরে থাকতে হতে পারে। তাই স্বাস্থ্য, শিা, কৃষি, যাতায়াতসহ জীবিকা নির্বাহে সব বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখতে সরকারকে নিতে হবে নতুন উদ্যোগ। সেই সাথে এক মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলতে হব। যে পৃথিবীতে মানুষের অহঙ্কার বলতে কিছুই থাকবে না। শুধু ভালোবাসা ও মানবিকতায় গড়ে উঠবে আমাদের নতুন পৃথিবী। হ
লেখক : শিার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।


আরো সংবাদ



premium cement
এনজিওর টাকা তুলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গৃহবধূ নিহত ভিজিএফবঞ্চিতদের মানববন্ধনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা, আটক ২ ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে : আর্টিকেল নাইনটিন ও টিআইবি পিনাকীসহ দু'জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট, একজনকে অব্যাহতির সুপারিশ সিরাজদিখানে প্রচণ্ড গরমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থী অসুস্থ মানিকগঞ্জে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর গাড়িতে গুলিবর্ষণ বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন পাচ্ছেন ৫ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠান বিরোধী দল নিধনে এখনো বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে : মির্জা ফখরুল রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রুখতে ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট দেবে যুক্তরাষ্ট্র আইনগত সহায়তা পাওয়া করুণা নয় অধিকার : আইনমন্ত্রী টিউবওয়েলের পানি খেয়ে আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসুস্থ

সকল