০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ উত্তম

-

লেবাননের রাজধানী ‘বৈরুত’ হঠাৎ করেই কেঁপে উঠেছিল সম্প্রতি। বৈরুত বন্দরের একটি ওয়্যারহাউজে দুই হাজার সাত শ’ পঞ্চাশ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ ছিল। সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না বলেই এ রকম ভয়াবহ একটি পরিস্থিতির শিকার হতে হলো লেবাননকে। এ রকম বিস্ফোরণ বাংলাদেশেও ঘটতে পারে যেকোনো সময়। আমরা যদি লেবাননে ঘটে যাওয়া ঘটনার পেছনের কথাগুলো খুঁজি তা হলে দেখতে পাবো, ২০১৪ সালে একটি মালবাহী জাহাজে করে ওই রাসায়নিক এসেছিল কিন্তু কাগজপত্রে গণ্ডগোল থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের জিনিস বাজেয়াপ্ত করে। তার পর বন্দরের রাসায়নিক গুদামে মজুদ করা হয় পণ্যগুলো নিয়ম মতো। নিলামের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও গত ছয় বছরে সে কাজ করা হয়নি। সেসব পণ্য যদি সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিলাম করা হতো তা হলে হয়তো এ দিন দেখতে হতো না।
একটু পেছনে গেলেই দেখতে পাবো চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালের। সেখানে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুন পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার বিস্ফোরিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। আরেকটু পিছিয়ে গেলে দেখতে পাবো, ২০১০ সালের জুনে পুরনো ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের কারখানার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সেই দুর্ঘটনায় ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। এরপর পুরনো ঢাকার আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের কারখানা বা সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
এ রকম বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায় বছরেই ঘটতে দেখা যায়। যখন গণমাধ্যমগুলো অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সরব থাকে ততক্ষণ উঁচু মহল থেকে লোক দেখানো কিছু কাজ করা হলেও ঘটনার রেশ কাটতেই প্রতিশ্রুতিও ফুরিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীনও হয়েছি। ঢাকার মীরহাজীরবাগে আবাসিক ভবনগুলোয় পরিবার নিয়েও যে রকম মানুষ বসবাস করে, তেমনি কারখানা দিয়েও কেউ কেউ জর্দা তৈরি করে থাকেন। বেশ কয়েকবার আগুন লাগলেও বড় আকার ধারণ করায় গণমাধ্যমগুলোতে আসেনি। তাই এখনো সেই আগের মতোই চলছে কার্যক্রম।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ১,১০৬ জন প্রতি বর্গকিলোমিটারে। এত অল্প জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শহরে আগুন লাগলে আগুন নেভানোর জন্য দমকল বাহিনীর ঘটনাস্থলে যাওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। এ রকম হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকরাই দায়ী। তারা বাড়ি করার সময় কোনো ধরনের জায়গা ছাড় না দিয়ে নিজেদের মতো বানিয়ে রাখেন। ফলে আগুন লাগলে কিংবা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে বেশির ভাগ মানুষ সঠিক সময়ে উদ্ধার না হওয়ার জন্য মারা যায়।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণ হয়েছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে। এটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, তবে এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কৃষিকাজে সার ও বিস্ফোরক হিসেবে। আগুনের সংস্পর্শে এলে এটি অত্যন্ত সক্রিয় বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে লেবাননে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও আমাদের দেশের সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অন্য কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের হাতে সাধারণ জনগণ পুড়ে মরবে!
শিল্পকারখানার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দেয়া, সুদক্ষ দমকল বাহিনী তৈরি করে রাখা এবং শহরের রাস্তাগুলো প্রশস্ত করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে আমাদের। এরই আগে অনেক মানুষ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন। তাই আমাদের আগের ঘটনা এবং লেবাননে অসতর্কতার কারণে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যাতে আমরা আমাদের দেশে এ রকম বিস্ফোরণ থেকে বাঁচাতে পারি।হ
লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
mdikbalhassansajib29@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement