২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেলফি থেকে সেলফাইটিস

-

নিজে ছবি তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার প্রবণতাকে এক ধরনের মানসিক বৈকল্য বলে চিহ্নিত করেছেন অনেক গবেষক। তারা এই ‘রোগের’ নাম দিয়েছেন ‘সেলফাইটিস’। যদিও নিজের তোলার ঝোঁক আদৌ রোগ কি না, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। তবে এতে সন্দেহ নেই, দিন দিন এ প্রবণতা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে।
যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো জায়গায় নিজের ছবি তুলে ফেসবুকে সেঁটে দাও, একে বলে ‘স্ট্যাটাস’ দেয়া। স্রেফ বিয়েবাড়ি বা পুজোয় ঠাকুর দেখা কিংবা বেড়ানোর সময় নয়, আকছার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে পোস্ট করাটাও আসক্তির চেহারা নিয়েছে। ছবির সাথে কিছু বাক্যও লেখা থাকতে পারে। তবে তার বানান ও উচ্চারণ বোঝার ক্ষমতা অনেক সময় নিজ নিজ প্রতিভার ওপর নির্ভর করে। মোবাইলের অ্যানড্রয়েড সেটের দৌলতে এখন প্রত্যেকের হাতেই ক্যামেরা। আর তাতেই বাড়ছে বিপদের ঝুঁঁকি। সম্প্রতি পবিত্র কাবা ঘরে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র হজে গিয়েও মানুষ সেলফি তুলছেন। তাই এই সেলফিকে একটি রোগ বলা যায়। বর্তমান সময়ে আলোচিত হচ্ছে সেলফি।
কোনো দৃশ্যের সাথে নিজের ছবি স্মার্ট ফোনে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে আত্মতৃপ্তি পান একশ্রেণীর ফেসবুক ব্যবহারকারী। এতে অনেকে মৃত্যুকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করেছেন। সম্প্রতি ট্রেনের ছাদে ছবি তুলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। এ ব্যাধিতে সব বয়সীরা আক্রান্ত হলেও বেশি হচ্ছে লাখ লাখ উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী।
নিজের ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার নেশা এভাবেই একধরনের মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। কোনো ভ্রƒক্ষেপ না করে শুধু নিজের ছবি কেমন দেখাচ্ছে, তাতে মজে থাকা। যেন সমাজ সংসার সব মিছে, মিছে এ জীবনের কলরব! অনেক সময় আগে-পিছু অবস্থান দেখতে মানুষ ভুলে যায় ছবি তোলার উন্মত্ত ঝোঁকে। তার জন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। চলন্ত ট্রেন থেকে ঝুঁকে সেলফি তুলতে গিয়ে কেউ রেলের খুঁটির সাথে ধাক্কায় মারা গেছে, কখনো পাহাড়ের কোলে সেলফি তুলতে গিয়ে খাদে তলিয়ে গেছেন কেউ। বিষধর সাপের সাথে সেলফি তুলতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনার নজিরও রয়েছে। সেলফির ফাঁদপাতা ভুবনে, কখন কে মরে তা কে বা জানে! এ ভয়ানক ‘রোগ’ থেকে বাঁচা খুব শক্ত। কারণ নেশা থেকে মুক্তির উপায় নেশারুরা জানলেও মানতে চায় না। মানসিক রোগের চিকিৎসকরা দাবি করছেন, অতিরিক্ত সেলফি তোলার সাথে নার্সিসাস সিনড্রম ও আসক্তির সম্পর্ক থাকতে পারে। গবেষক ডেভিড ভিল জানিয়েছেন, বডি ডিসফরমিক ডিজঅর্ডারে ভুক্তভোগী দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রে সেলফির সম্পর্ক দেখেছেন তিনি।
প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত, সেলফি নামের মারণফাঁদ থেকে আমাদের সরে আসা একান্ত দরকার হয়ে পড়েছে। না হয় পৃথিবীতে জন্মের সার্থকতা শেষ হয়ে যাবে এক নিমেষে।
লেখক : সংবাদকর্মী
hossainimam445@gmail.com

 

 


আরো সংবাদ



premium cement