২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে তুরস্ক

নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে তুরস্ক - সংগৃহীত

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানবলেছেন, সিরিয়ার চলমান সমস্যা নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তার বৈঠক সফল হয়েছে এবং এই বৈঠকের মাধ্যমে তিনি সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য ‘নতুন আশার’ সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।

‘ব্লাক সী রিসোর্টে’ পুতিনের সাথে বৈঠক শেষে এরদোগান সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের বলেন, ‘আমরা এই বৈঠকে সিরিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য একমত হয়েছি এবং তা এই অঞ্চলে আশার আলো নিয়ে আসবে।’ তবে তিনি বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানান নি।

তুরস্ক বাসার আল-আসাদ বিরোধী সিরিয়ার কয়েকটি বিদ্রোহী দলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তুরস্ক বাসার আল-আসাদের অন্যতম মিত্র দুটি দেশ রাশিয়া এবং ইরানের সাথে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছে। বাসার আল-আসাদ ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন যে, তিনি ইদলিব শহর পুনরুদ্ধার কারার জন্য বদ্ধপরিকর। গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়ার সেনা সমর্থন নিয়ে সিরিয়ার সরকার বিদ্রোহীদের নির্মূল করে চলেছে।

রাশিয়া ভ্রমণের পরে এরদোগান জানিয়েছেন, তুরস্ক ইদলিবে যে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল তা ফল দিতে শুরু করেছে। তবে আমাদের এখনো অনেক কাজ করার বাকি রয়েছে। চলতি মাসে তেহরান সামিটে তুরস্কের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলো। তবে পুতিন জনসম্মুখে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

ওদের আছে ডলার, আমাদের আছেন আল্লাহ : এরদোগান
বিবিসি ও আনাদোলু, ১২ আগস্ট ২০১৮

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘ওদের যদি ডলার থাকে, তাহলে আমাদের আছে আমাদের জনগণ, আমাদের অধিকার এবং আমাদের আছেন আল্লাহ।’ শুক্রবার আঙ্কারায় এক ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

এরদোগান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের যেমন ডলার আছে, আমাদের আছে আল্লাহ ও আমাদের জনগণ। আমরা প্রতিদিন উন্নতি করছি। গতকালের চেয়ে আজ ভালো আছি, আগামীকাল আরো ভালো থাকব। এরদোগান আরো বলেন, অর্থনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে জাতীয় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ডলার কখনোই আমাদের অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না। তাই আমি আবারো বলছি, আপনাদের যাদের কাছে ডলার ও স্বর্ণ মজুদ আছে, ব্যাংকে গিয়ে সেগুলোর বিনিময়ে লিরা সংগ্রহ করুন। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটন যদি ‘একলা চলার ও সম্মান না দেখানোর’ পথ ত্যাগ না করে তাহলে তার দেশ নতুন বন্ধু ও মিত্র খুঁজে নেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার তুরস্কের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়ার পর নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক লেখায় এ মন্তব্য করেন এরদোগান। তিনি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্কের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। 

এরদোগান লিখেছেন, ‘এমন একটি সময়ে যখন শত্রু দেশগুলো ওঁৎপেতে আছে সেই মুহূর্তে তুরস্কের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এক তরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা দশকের পর দশক ধরে আমাদের মিত্র। এই পদক্ষেপে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও নিরাপত্তাই বিঘিœত হবে।’ এরদোগান আরো বলেন, সন্ত্রাসের অভিযোগে তুরস্কে বিচারাধীন মার্কিন ধর্মযাজক অ্যান্ডু ব্রানসনের ব্যাপারে বিচারের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষা না করেই ওয়াশিংটন পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে।

শুক্রবার হোয়াইট হাউজ ঘোষণা করেছে, তুরস্ক থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে নতুন করে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ১৩ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে নতুন এই শুল্ক। এর ফলে ন্যাটো মিত্র তুরস্কের সাথে নতুন করে বিরোধী জড়িয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। শুল্ক বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের পর থেকে ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রা লিরার ১৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরপরই মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা শুরু হয়, ইউরোর দর ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়ে পড়ে, ডলারের দাম বাড়ে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপকে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মবিরোধী’ অভিহিত করে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আঙ্কারা। যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার অ্যাখ্যা দিয়ে তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে বলে প্রত্যাশা আমাদের’। 

ট্রাম্প শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে টুইট করার কিছু পরই এরদোগান ফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে। লিরার দর পতনের প্রেক্ষাপটে তুরস্কের ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রকরা এ নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করতে যাচ্ছেনÑ এমন এক খবর বের হলেও পরে নিয়ন্ত্রকেরা তা অস্বীকার করেন। এরদোগান ওয়াশিংটনের ওপর ক্ষুব্ধ। কারণ সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুর্দি যোদ্ধাদের অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকানরা, তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফতহুল্লাহ গুলেনকেও তারা বিচারের জন্য তুরস্কের হাতে তুলে দিচ্ছে না। এ ছাড়া আংকারা যে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার পরিকল্পনা করছেÑ সেটাও একটা বড় কারণ। অন্য দিকে আঙ্কারার অভিযোগ, ফতহুল্লাহ গুলেন পেনসিলভানিয়ায় তার বাড়িতে বসে এরদোগানের বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কলকাঠি নেড়েছিলেন।


ব্রানসনের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযোগ এই যে, তার সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টি ও ফতহুল্লা গুলেনের সম্পর্ক আছে। আমেরিকার শক্তিশালী ইভানজেলিকাল খ্রিষ্টান লবি এ নিয়ে হইচই শুরু করার পর এর জবাবে তুর্কি স্বরাষ্ট্র ও বিচারমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। তুরস্কের মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কিছু দিন পরেই ট্রাম্প এই শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেন। এ ছাড়া আরো কারণ আছে। তুরস্ক তাদের প্রায় অর্ধেক তেল আমদানি করে ইরান থেকে। সে কারণে ইরানের ওপর পুনঃআরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুরস্কের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করা হয়। তুরস্কের মাটিতে আছে ন্যাটো জোটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনজারলিক সামরিক বিমান ঘাঁটি। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য ন্যাটো এ ঘাঁটিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।

এ ঘাঁটিটি বন্ধ করে দেয়ার জন্য তুরস্কে অভ্যন্তরীণ চাপ আছে। তুরস্কের কিছু সরকার সমর্থক আইনজীবীর অভিযোগÑ ইনজারলিকে মোতায়েন কিছু আমেরিকান সেনাকর্মকর্তা এরদোগান-বিরোধী অভ্যুত্থানের পেছনে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানাও চেয়েছিলেন তারা। গত সপ্তাহে এক অভিযোগে এই আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি আবেদন জানানÑ যেন ইনজারলিক থেকে সব বিমান উড্ডয়ন বন্ধ করে দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement