২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এসএসএফের দায়িত্বশীলতার প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর

এসএসএফের দায়িত্বশীলতার প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর - ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর সদস্যদের দায়িত্বশীলতা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতার প্রশংসা করে বলেছেন, যুগের সাথে তাল মেলাতে এই বাহিনীকে আরো আধুনিক সুসজ্জিত করে গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, ‘এসএসএফ’র সদস্যদের ওপর দেশের অতিব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং বিদেশী অতিথিদের নিরাপত্তার ভার ন্যস্ত থাকে। আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি তাদের কর্তব্যপরায়নতা, আন্তরিকতা এবং কর্মদক্ষতা প্রত্যক্ষ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে এসএসএফ’র ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

এসএসএফ’র আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার প্রশংসা বিদেশী অতিথিরা করে যান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ভিআইপি অতিথিরা আসছেন বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন বা সপ্তাহে ভিআইপিরা আসছেন এবং যারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পাবেন তাদের নিরাপত্তার জন্য যখন আমরা এসএসএফকে দায়িত্ব দেই তখন এত নিষ্ঠার সঙ্গে এত চমৎকারভাবে তারা দায়িত্ব পালন করেন যে, এসব ভিআইপিরা প্রত্যেকেই যাবার সময় আমার কাছে এই এসএসএফ-এর নিরাপত্তার নিয়োজিতদের প্রশংসা করে যান।’
তিনি বলেন, ‘সেজন্য আমি সত্যি গর্ববোধ করি এবং সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই আমাদের এই বাহিনীর সকল সদস্যকে। যারাই আমাদের দেশে এসেছেন তাদের সকলেই প্রশংসা করে গেছেন। কাজেই এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় প্রাপ্তি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বিশ্বেই ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, যার অন্যতম একটি কারণ বৈশ্বিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। আর বাংলাদেশের মত একটি দেশে যেখানে হত্যার রাজনীতি, ক্যু, ষড়যন্ত্র, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা চলে এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের কর্মকান্ড বিদ্যমান সেখানে এটি আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং।
এসএসএফ সদস্যদের আরো দক্ষ এবং প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হয়ে গড়ে ওঠার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুগের পরিবর্তন হচ্ছে আর যারা অপকর্ম করতে চায় তারাও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে যথেষ্ট পারদর্শী সেই দিকটা মাথায় রেখেই আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।


এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শফিউর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এসএসএফ-এর সদস্যবৃন্দ উন্নত মনোবল, প্রশ্নাতীত আনুগত্য ও উঁচুমানের পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসএসএফ-কে শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনী নয় বরং পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর পেশাদার, দক্ষ ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভিআইপিগণের নিরাপত্তা প্রদানে এসএসএফ-এর সকল সদস্যের পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, উন্নত শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিক গুণাবলীর বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

এসএসএফ-এর উন্নয়ন ও আধুনকায়নে তাঁর বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ছাড়াও এসএসএফ-এর সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানাবিধ কল্যাণমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে। কার্যকর ফায়ারিং প্রশিক্ষণদানের জন্য একটি অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক ফায়ারিং রেঞ্জ স্থাপনের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ যেমন, কর্মচারিদের আবাসিক ভবন ও অফিসার্স মেসের সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিকল্পনা মোতাবেক সম্পন্ন হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ-এর সদস্যদের কর্তব্যনিষ্ঠার প্রশংসার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসা সাধারণ জনগণ এবং দলের নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তার কারণে যেন দুর্ব্যবহারে শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও এসএসফ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে রাজনীতি করি, সেখানে ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে জনগণ। আপনাদের কোন আচরণে সাধারণ জনগণ যেন কষ্ট না পায়, সেদিকে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এই মানবিক গুণাবলীর বিষয়টিও বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, আমরা রাজনীতি করি আমাদের তো গণমানুষের সাথে যোগাযোগ। কাজেই এটা একটু লক্ষ্য রাখতে হবে এই গণমানুষের সঙ্গেও যোগাযোগটা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘যে মানুষগুলোর জন্য কাজ করি সে মানুষগুলোর থেকে যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই তাহলে কিন্তু আমাদের জীবনটা অর্থহীন হয়ে যাবে। কাজেই এই যোগাযোগটা যেন থাকে সেটা অবশ্যই দেখতে হবে।’
‘তবে, অবশ্যই পেশাদারিত্ব এবং নিয়ম শৃঙ্খলা মেনেই এটা করতে হবে’,বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেহেতু জনপ্রতিনিধি তাই ৫ বছর পর পর আমাদের জনগণের কাছে যেতে হয়, জবাবদিহি করতে হয়। কাজেই জনগণের সঙ্গে আমাদের সেই যোগাযোগটা যেন থাকে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমি সবাইকে আহবান জানাব।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা নিয়ে অনুষ্ঠানে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যারা নিরাপত্তাকর্মী তাদের নিরাপত্তাটাও যেন বজায় থাকে। সে জন্যই তিনি ফজরের নামাজ পড়ে তাঁর সন্তান-সন্তুতি এবং দলের নেতা-কর্মীদের জন্য যেমন দোয়া করেন তেমনি তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের জন্যও দোয়া করেন।

তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত তাদের জন্য আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া চাই, আমার জন্য কারো যেন কোন ক্ষতি না হয়। কারণ, আমি বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে দেখেছি আমার দলের অনেক নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে। কাজেই আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের জীবন যেন নিরাপদ থাকে সেটাই আমি চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমি এটাই সবসময় চাইব- পেশাদারিত্বের ও আন্তরিকতার দিক থেকে এসএসএফ-এর সকল সদস্য সবসময় দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ এবং উর্ধ্বতন অফিসারদের প্রতি আনুগত্য সবসময় মেনে চলবেন।’
সুযোগ্য নেতৃত্ব, সঠিক দিক-নির্দেশনা এবং এই বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে এসএসএফ-এর উত্তরোত্তর উন্নতি অব্যাহত থাকবে বলেও শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement