২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পোস্ট মর্টেম : জাতীয় নির্বাচন-২০১৮

-

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের কথিত নির্বাচনকে সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে সরকারি ঘরানার বুদ্ধিজীবী মহল এবং শপথ নিয়ে সাংবিধানিক কর্তারা যতই গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছেন দেশ-বিদেশ থেকে ততই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসছে। সরকার থেকে বারবারই বলা হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র বিগত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে House of Foreign Affairs Committee-এর ছয়জন সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের কাছে পত্র পাঠিয়েছেন।

যার বক্তব্য নিম্নরূপ- ‘জনাব সেক্রেটারি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নেতিবাচক গতিবিধি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভুল পথে চলছে উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। এটি দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেও মন্তব্য করেছে মার্কিন আইন পরিষদ। একই সাথে বাংলাদেশে গণতন্ত্রে হুমকির বিষয়ে নজর দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ভোট জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এল এঞ্জেলসহ ছয়জন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি পেন্টাগন থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ছয় কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুরক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে বাংলাদেশে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতি, ভোট কারচুপি ও ভোটারদের ওপর নিষ্পেষণের কথা উল্লেখ করা হয়। এলিয়ট এল এনাজেলের নিজের ওয়েবসাইটে ওই চিঠি এবং এ সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এর শিরোনাম হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি কলস ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একশন টু প্রটেক্ট ডেমোক্র্যাসি ইন বাংলাদেশ। যার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের কাছে যে ছয়জন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে স্বাক্ষর করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান প্রতিনিধি এলিয়ট এল এনজেল। প্রতিনিধি মাইকেল টি ম্যাকল (টেক্সাসের রিপাবলিকান) তিনি কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার। প্রতিনিধি ব্রাড শারমান (ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট)।’

নির্বাচন কমিশনের অন্যতম কমিশনার মাহবুব তালুকদারের ০৬-০২-২০১৯-এর বক্তব্য অনুযায়ী প্রমাণ হয় যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল একটি বিতর্কিত নির্বাচন। মাহবুব তালুকদারের কথা প্রতিয়মান হচ্ছে যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতীয় নির্বাচন ও অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অকাতরে মিথ্যার পর মিথ্যা বলে যাচ্ছেন, যার ফলে সাংবিধানিক পদের প্রতি গণমানুষের দিন দিন আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে, তবে মাহবুব তালুকদারের মতো যারা রয়েছেন তাদের সংখ্যা চোখে না পড়ার মতো।

তথাকথিত জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কথা বলা শুরু করেছেন। একটি অনির্বাচিত সরকারকে চিন্তাবিদেরা দেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে মনে করছেন। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। কথিত জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে আমলাদের বিশেষ করে পুলিশি ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমলাতান্ত্রিক অব্যবস্থাপনা একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের অনির্বাচিত বা ভোটবিহীন সরকার প্রতিষ্ঠায় বিদেশী তথা গোয়েন্দাদের প্রভাব রয়েছে। গোটা বিশ্ব রাজনীতির প্রভাব বিশেষ করে ভারতীয় প্রভাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আচরণে ভারত বাংলাদেশকে তাদের তাঁবেদার রাজ্য মনে করলেও জনগণ ভারতের এই উদাত্তকে মেনে নেয় না। তদুপরি শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের গণতন্ত্র খানিকটা এগোলেও বর্তমানে তা মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে।

বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র ভারত। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা অনস্বীকার্য বটে। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে ভারত কার্যত একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হলেও বাংলাদেশের ধর্মীয় রাজনীতির প্রতি ভারতের একটি এলার্জি আছে। নিজেদের সাফাই গাওয়ার জন্য ভারত প্রতিনিয়তই বলে থাকে যে, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু। কিন্তু বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে মনে হয়, তারা বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বন্ধু। বাংলাদেশের অন্যান্য বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোও বন্ধু হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ১৯৭১ বা এর পূর্ববর্তী যে দলটির সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল সে দলের সাথেই ভারত বন্ধুত্ব কার্যকর রাখতে আগ্রহী। ভারতের সরকার পরিবর্তন হয়েছে বটে, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক গতিধারা বা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতিমালা থেকে ভারত সরে আসেনি। বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রপতির আগমনে বিএনপি সময় নির্ধারণ করেও সাক্ষাৎ না করাটাও ভারত-আওয়ামী লীগ প্রতি জোরদার হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

যে রাষ্ট্রের ভেটো পাওয়ার আছে মূলত তারাই জাতিসঙ্ঘের মালিক মোক্তার। জাতিসঙ্ঘ কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য ভেটো পাওয়ার সংবলিত রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। মিয়ানমারের গণহত্যার কথা সবাই স্বীকার করে রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য পাঠায়, কিন্তু তাদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর কোনো বক্তব্য নেই। আন্তর্জাতিক রাহুগ্রাস থেকে মিয়ানমার যেমন মুক্ত নয়, তেমনি আন্তর্জাতিক চক্রের রাহুগ্রাস থেকেও বাংলাদেশ মুক্ত নয়। ভৌগোলিক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ভারত বাংলাদেশের ভূমি তাদের বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করছে, তাদের আরো দাবি রয়েছে। চীন-আমেরিকার লোলুপ দৃষ্টি থেকেও বাংলাদেশ মুক্ত নয়। ফলে কে কখন বাংলাদেশকে বা বাংলাদেশের গণমানুষের অধিকারকে বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নেবে তা সহজেই অনুমান করা যায় না। ফলে দেশের জাতিগত সমস্যার সমাধানের জন্য জাতীয় ঐক্যবদ্ধতার কোনো বিকল্প নেই। ন্যায়বিচার বা ন্যায্য অধিকার আদায়ের সেøাগানের চেয়ে বাহুবলে প্রতিরোধ করাই এখন অপরিহার্য। (ক্রমশ)
লেখক : কলামিস্ট ও আইনজীবী (আপিল বিভাগ)
E-mail: taimuralamkhandaker@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত

সকল