২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তোমার সংজ্ঞা কী?

-

নির্বাচন কমিশন মনে হয় সরকারের দেয়া ছকে বাঁধা। কিছুতেই যেন সে ছক ভেঙে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছুক নয় এই নির্বাচন কমিশন। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের মুখ্য দায়িত্ব। কিন্তু শুরু থেকেই এই কমিশন যেনতেন উপায়ে একটি নির্বাচন আয়োজন করে সরকার পক্ষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতেই যেন সমধিক আগ্রহী। নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখনো থামছে না নির্বাচন কমিশনের সরকারের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে পুরো প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আচরণে তেমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, সরকারই সব কিছু চালাচ্ছে। আর নির্বাচন কমিশন তারই বাস্তবায়ন করে চলেছে।

খবরে প্রকাশ- এরই মধ্যে বিএনপি অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য ওই ব্রিফ দেয়া হয়, এমনটি দাবি করে দলটি এর তদন্ত করে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছে। কিন্তু ইসি বলছে, তারা এ বিষয়ে অবহিত নন। তবে নির্বাচন কমিশনের গৎবাঁধা জবাব : অভিযোগ খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এই খতিয়ে দেখার কাজ আর শেষ হবে না, সেটি নিশ্চিত বলে দেয়া যায়। এরই মধ্যে নির্বাচন গত হয়ে যাবে।

৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের জন্য ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৩ নভেম্বর তাদের ঢাকায় ডেকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। বিএনপি নির্বাচন কমিশনে যে চিঠি দিয়েছে তাতে দাবি করা হয়, ইসির অনুষ্ঠান শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তারা যখন কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তাদের তলব করা হয়। সেখানে তাদের সরকারি দলের পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য বলা হয়। সব রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কললিস্ট যাচাই করে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে এই অভিযোগের সত্যতা নির্ণয় করা সম্ভব।

বিএনপি বলেছে, এ ধরনের আচরণ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বড় বাধা। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে অশনিসঙ্কেত। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ইসির অনুমতি ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের টেলিফোনে ডেকে এনে সভা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিকের মতে, যদি এই অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে সেটি নির্বাচনসংক্রান্ত আইনের ভয়াবহ বরখেলাপ। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেছেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তারা যেহেতু ইসির অধীন, তাই তাদের অন্য কোনোভাবে ডেকে নিয়ে যেন কোনো বৈঠক করা না হয়, সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে ইসি।’ কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেকে এনে সভা করার ফলে তা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে কি না, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই কেন। নির্বাচনসংক্রান্ত আইনের এই বরখেলাপের জন্য সরকার পক্ষকে কিছুই করা হলো না কেন?

নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার দাবিই হচ্ছে বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে একটি মুখ্য বিষয়। কিন্তু এ দাবিটি মানতে সরকার পক্ষ বরাবর অস্বীকার করে আসছে। সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলসহ সুশীলসমাজের মুখ্য দাবি ছিল : সরকারকে পদত্যাগ করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। কারণ, একপক্ষ সরকারে থেকে অপরপক্ষ সরকারের বাইরে থেকে নির্বাচন করলে তা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পথে একটি বাধা। একই কারণে বিরোধী পক্ষের দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করার। সরকার পক্ষ বোধগম্য কারণে তা কিছুতেই মানতে রাজি হয়নি। তাই এ দাবি দু’টি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সরকারের ইচ্ছামতো সংশোধিত সংবিধান রক্ষার দোহাই দিয়ে।

এ দিকে বাস্তবতা হচ্ছে- এক দিকে সংসদ সদস্য পদে থেকে সরকারপক্ষীয় সংসদ সদস্যরা পুলিশ সাথে করে নিয়ে নির্বাচনে তাদের প্রার্থিতার পক্ষে প্রচারাভিযান চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন। অপর দিকে নানা ধরনের মামলায় পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ভয়ে নির্বাচনে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অবাধে নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালানো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কতটুকু ব্যাহত করবে, তা বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ জানে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনও সরকারের সাজানো। তফসিল ঘোষণার পর দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে কোনো ধরনের রদবদল করেনি ইসি। অপর দিকে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব, জনপ্রশাসন ও পুলিশের ৯২ জন কর্মকর্তার অবিলম্বে প্রত্যাহার চেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। তাদের দাবি, এসব কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের অনুগত ও বিতর্কিত। এদের সংশ্লিষ্ট পদে রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পৃথক ১৩টি চিঠি ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিএনপির নেতারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জমা দেন। ওই সময় নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে ইসি মতবিনিময় করছিল। ঐক্যফ্রন্ট যাদের প্রত্যাহার দাবি করেছে, তাদের অনেকেই এই মতবিনিময় সভায় ছিলেন।

ইসি সূত্র মতে, এ সময় পুলিশ সুপারদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- তাদের মধ্যে বদলি ও প্রত্যাহার আতঙ্ক কাজ করছে। এই আতঙ্ক নিয়ে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। এই সময় তাদের আশ্বস্ত করে ইসি বলেছে, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। তাদের বদলি করা হবে না। এই আশ্বাস নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা সভাশেষে কর্মস্থলে ফিরে যান। এর ওপর অর্থ সরকারের সাজানো পুলিশ প্রশাসনই ইসি বহাল রাখছে এবং সরকার পক্ষের সাজানো প্রশাসন দিয়েই যেনতেনভাবে ইসি আসন্ন নির্বাচনটি সম্পন্ন করতে চায়।

এ দিকে খবরে প্রকাশ- তফসিল ঘোষণার আগে যে পুলিশ গায়েবি মামলা করেছে, তফসিল ঘোষণার পর তাদের পক্ষে রাতারাতি পাল্টে গিয়ে নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন কতটা সম্ভব? এ প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ না হলে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক বিশেষ সভায় ইসি কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার চার পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে এসব প্রশ্ন তোলেন। সিইসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইজিপি, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, গাজীপুরে নির্বাচনের সময় ইউনিফর্মধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ অনেক ব্যক্তিকে বাসা থেকে কিংবা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। অনেককে অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের একজন ছাড়া অন্যদের গ্রেফতার বিষয়ে পুলিশ কোনো স্বীকারোক্তি করেনি। নির্বাচনের পরে দেখা যায়, তাদের অন্তত ১০ জনকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে পাওয়া গেছে। মাহবুব তালুকদার বলেন, গ্রেফতার না করলে তারা কারাগারে গেলেন কিভাবে? এ প্রশ্নের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

বহুল আলোচিত গায়েবি মামলা সম্পর্কে মাহবুব তালুকদার বলেন, বর্তমানে বহুল প্রচলিত গায়েবি মামলা এখন আর গায়েবি আওয়াজ না। হাইকোর্ট পর্যন্ত এ ধরনের মামলায় পুলিশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট হয় বলে উল্লেখ করেছেন। ঢাকার পুলিশ কমিশনার পুলিশবাহিনীকে গায়েবি মামলা না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও অনেক ক্ষেত্রে এরূপ মামলা চালু আছে। আমার প্রশ্ন হলো, শিডিউল ঘোষণার আগে যে পুলিশ গায়েবি মামলা করেছে, শিডিউল ঘোষণার পর তার পক্ষে রাতারাতি পাল্টে গিয়ে নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন কতটা সম্ভব? এ প্রশ্ন মনে জাগে। তিনি বলেন, পুলিশবাহিনী নির্বাচনে সবচেয়ে সহায়ক শক্তি। এরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, কিছুসংখ্যক গায়েবি মামলার আসামিদের তালিকা বিরোধী দল থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। যদিও বেশির ভাগই পুরনো মামলা। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা অনেক আসামির আদালত থেকে জামিন নেয়া সম্ভব হবে না। কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা থাকার কারণে তারা নির্বাচনী প্রচারকাজ চালাতে ভয় পাচ্ছেন। এ ধরনের ভয়ভীতি অমূলক নয়। নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে প্রার্থীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন থেকে যে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করা প্রয়োজন।

মাহবুব তালুকদার তার বক্তব্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মিডিয়ায় যে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে তা হলো, নির্বাচন কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশ দুই মাস আগে থেকে মাঠে নেমেছে। এরা প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং কর্মকর্তাদের বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অথচ এই তথ্যানুসন্ধান বিষয়ে পুলিশকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কমিশন নির্বাচন কর্মকর্তাদের এমন তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়নি। সুতরাং এসব কর্মকাণ্ড কে কী উদ্দেশ্যে করছে, তা রহস্যজনক। বলা বাহুল্য, অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্যের এই কর্মকাণ্ডে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যার দায় নির্বাচন কমিশনের ওপর এসে পড়ে।

মাহবুব তালুকদার বরিশাল সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিরোধী প্রার্থীদের পুলিশ অযাচিতভাবে হয়রানি করেছে। আবার সরকারি দলের প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় পুলিশকে নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, উল্টো বিরোধী প্রার্থীর প্রচারে পুলিশের অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমরা সব কমিশনার একমত হলেও নির্বাচন বন্ধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে কি না এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হবে কি না, তা ভেবে নির্বাচন বন্ধ করা থেকে আমরা বিরত থাকি।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড-সংক্রান্ত আরেকটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি দলের প্রার্থীরা যখন অবাধে মুক্ত অবস্থায় তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, তখন বিএনপি নেতাকর্মীরা অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গত ১৮ নভেম্বর বিএনপি একটি চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার কাছে।

গত জানুয়ারি থেকে গত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে চার হাজার ৪২৯টি। এসব মামলায় অভিযুক্তদের সংখ্যা চার লাখ ৩৪ হাজার ৯৫ জন, যাতে নামোল্লেখ করা হয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৪৪১ জনের। আর অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৫৩৪ জন। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১০ হাজার ৪৭২ জনকে। আর তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির ৭৭৩ জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যাপারে আরো জানিয়েছে : ২০০৯ সাল থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ভুতুড়ে মামলা করা হয়েছে ৯০ হাজার ৩৪০টি; জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত দায়ের করা মামলার সংখ্যা চার হাজার ৪২৯টি; জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে দায়ের করা মামলার আসামির সংখ্যা চার লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৫। এদের মধ্যে তিন লাখ ২৫ হাজার ৫৩৪ জন অজ্ঞাতনামা আসামি। বাকিদের নামোল্লেখ করা হয়েছে। এই সময়ে গ্রেফতার হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৭৭৫ জন। বিএনপির অভিযোগ- তাদের এক হাজার ৫১২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। দলটির দাবি মতে, ৭৮২ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এক হাজার ২০৪ জন নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে নিখোঁজ রয়েছেন ৭২ জন কর্মী। ৫১৭ জন নেতাকর্মীকে নেয়া হয়েছে রিমান্ডে।

এসবের বাইরে আমরা এখন দেখছি, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা যখন নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে, তখন বিএনপি নেতাকর্মীরা জামিনের জন্য আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করছে। জামিনপ্রার্থীদের ভিড় এতটাই ব্যাপক যে, দেখে মনে হচ্ছে আদালত প্রাঙ্গণে মনে হয় কোনো সমাবেশ হচ্ছে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সহজেই অনুমেয় কী ধরনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে বিএনপি নামের দলটি আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। অথচ সরকার পক্ষের বক্তব্য মতে, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিদ্যমান রয়েছে। আর এই পরিবেশে সরকার ও আমাদের নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এরা নাকি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেতে তাদের কাছে একমাত্র বাধা বিএনপি। তখন প্রশ্ন জাগে : লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, তোমার সংজ্ঞা কী?


আরো সংবাদ



premium cement