২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি মৃত্যু এবং মন্ত্রীর হাসির পাঁচালি!

একটি মৃত্যু এবং মন্ত্রীর হাসির পাঁচালি! - ছবি : সংগৃহীত

কী নিয়ে লিখব বুঝে উঠতে পারছি না। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা নিয়ে কেবল বড় বড় একটি নয়- রীতিমতো জমজমাট উপন্যাস লিখে ফেলা সম্ভব। দস্যু বনহুর, মাসুদ রানা, দস্যু পাঞ্জা প্রভৃতি জনপ্রিয় কাহিনীর আদলে দেশের চোর-ডাকাত-গুণ্ডা-বদমাশদের নিয়ে রহস্য উপন্যাস লিখলে বাজারে মার মার কাট কাট অবস্থা হয়ে যাবে। সিনেমার জন্যও চিত্রনাট্য লেখা যেতে পারে। সোনা কেন তামা, কয়লা কেন ময়লা, জঙ্গল কেন দঙ্গল, মন্ত্রী কেন হাসেন ইত্যাদি নাম দিয়ে কে কী চিত্রনাট্য রচনায় হাত দিয়েছেন তা অবশ্য আমি জানি না। তবে এ কথা খুব ভালো করেই জানি, এখন কোনো ভালো সাহিত্য রচনা সম্ভব নয়। কারণ, অস্থির সময়ের উত্তেজিত মন, বিভ্রান্ত চিন্তাশক্তি ও দ্বিধাগ্রস্ত কর্মশক্তি দিয়ে কোনো কালে সাহিত্য রচনা করা যায়নি। এখনকার কবিরা কবিতা লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন- গায়েনরা আর আগের যতো সুরের ঝঙ্কার তুলছেন না এবং চিন্তাশীলেরা মানবকল্যাণের আশ্চর্য সব সূত্র নিয়ে প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা করে চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন না। ফলে আমার মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নিবন্ধ লেখক হররোজ লিখতে গিয়ে যে হোঁচট খাবে, তা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না।

দেশে লেখার মতো নানান জিনিসের বাহারি রস ও রসদ থাকা সত্ত্বেও আমি লেখার বিষয় স্থির করতে পারছি না- নিজের অবাধ্য মনের নির্লজ্জ বেহায়াপনার কারণে। ইট-পাথরের পাষাণ সমাজের বেশির ভাগ মানুষের মতো আমার মন কেন এবং কী কারণে স্বার্থের মাঝে আবদ্ধ থেকে রাক্ষসের মতো নির্মম হতে পারে না তা আমি বুঝি না। আমি এ কথাও বুঝি না যে, কেন আমার মন ক্ষণে ক্ষণে খারাপ হয়ে যায় বিভিন্ন সংবেদনশীল ঘটনার কবলে পড়ে। অন্যের দুঃখে কেন আমি হাসতে পারি না এবং কেন নিজের কুকর্মের জন্য নিজে না কেঁদে অন্যের ওপর কান্নার ভার চাপিয়ে দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারি না- তাও বুঝতে পারি না। সম্ভবত এ কারণেই হয়তো ঢাকা বিমানবন্দর সড়কে একটি ছেলে এবংএকটি মেয়ের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা আমার চিন্তার জগৎকে এলোমেলো করে দিয়েছে। মন এতটাই ভার হয়ে আছে যে, কাজকর্মে মন বসাতে পারছি না।

ব্যক্তিজীবনে আমারও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছেলেসন্তান ও কন্যাসন্তান রয়েছে, যারা প্রায়ই গণপরিবহনে চড়ে যাতায়াত করে। মিম নামক মেয়েটির মায়াবী মুখ এবং তার হতভাগ্য পিতার আহাজারির দৃশ্য দেখার পর বারবার নিজের কথা মনে হয়েছে এবং বেদনার পাহাড় বুকের ওপর চেপে বসেছে। বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগ, যানবাহনের নিবন্ধন ইত্যাদি বিষয়ে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার কারণে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের দানব ও মাফিয়াদের সম্পর্কে আমি কম-বেশি ওয়াকিবহাল। নবম জাতীয় সংসদে আমি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকার সুবাদে দেশের যোগাযোগ খাত-কেন্দ্রিক মাফিয়া চক্রের কুকর্মগুলো আমার নজরে আসে। আমি সাধ্যমতো সেই সময়ে আলোচ্য মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে আমার অন্য সহকর্মীদের নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তাদের বেশ কিছু কুকর্ম রুখে দিয়ে সংবাদমাধ্যমে ঝড় তুলেছিলাম। তারা আইনগতভাবে আমাকে মোকাবেলা করতে না পেরে নানা বেআইনি তৎপরতা চালিয়েছিল, যার দায় আমাকে আজ অবধি পোহাতে হচ্ছে।

পাঁচটি বছর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার বারবার মনে হয়েছে, রাষ্ট্রশক্তির মতো সঙ্ঘবদ্ধ শক্তি আর দ্বিতীয়টি নেই। এটি অনেকটা আলাদিনের চেরাগ অথবা সিন্দবাদের বোতলজাত দৈত্যের মতো। যারা রাষ্ট্রের সেই দৈত্যকে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে পারেন, তারাই ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেন। অন্য দিকে, মন্দলোকেরা রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে যে অনাসৃষ্টি ঘটাতে পারেন, তার সঙ্গে মানুষ সৃষ্ট অন্য কোনো বিপর্যয়ের তুলনা করা চলে না। আমাদের দেশের বোধসম্পন্ন প্রায় সবাই জানেন, গণপরিবহন খাতে যে নৈরাজ্য, অনাসৃষ্টি, জুলুম-অত্যাচার, চাঁদাবাজি, অনিয়ম ইত্যাদি চলছে তার জন্য কারা কারা দায়ী। এসব দায়ী ব্যক্তি বিভিন্ন সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের বশীভূত করে কিভাবে রাষ্ট্রশক্তিকে নিজেদের তাঁবেদার বানিয়ে ফেলে, তাও আমরা কম-বেশি জানি। কিন্তু যেটি আমরা জানি না সেটি হলো- এই অবিচার ও অনিয়ম আর কত দিন চলবে এবং কিভাবে ও কখন তা বন্ধ হবে!

বাংলাদেশের রাস্তাঘাটগুলোতে যেসব ত্রুটিপূর্ণ, বীভৎস ও ভয়ঙ্কর সব বাস, ট্রাক, টেম্পো, নসিমন, ভটভটি ইত্যাদি চলাফেরা করে তা পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশ তো দূরের কথা, আমাজনের জঙ্গলে বসবাসরত অসভ্য ও উলঙ্গ উপজাতিদের জনপদেও চলে না। এসব যানবাহন কিভাবে সরকারি দফতর থেকে চলাচলের ছাড়পত্র পায়, সেই কাহিনী যদি আপনারা জানতেন তবে কিছু অসৎ, লোভী ও নির্মম মানুষের অমানবিক আত্মার বীভৎস গর্জনে আপনার ঘুম হারাম হয়ে যেত। গণপরিবহনে চালক হিসেবে যে অদক্ষ লোকজন নিয়োগ পান এবং বিনা বাধায় দেশের সর্বত্র যেভাবে শত মানুষকে খুন করার বাহন নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তা কেবল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে এই গাঙ্গেয় বদ্বীপেই সম্ভব। কয়েক যুগ ধরে এসব অপকর্ম গাণিতিক হারে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এদের দমন করার জন্য একমাত্র বিধাতার হাত ছাড়া অন্য কোনো মানুষের হাত যেমন নেই, তেমনি এদের ক্ষতিকর যন্ত্রণা ও উন্মত্ততা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়ও দেখা যাচ্ছে না।

যে দুর্ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আমার মন খারাপ হয়েছে, তা এখন গোটা দেশকেই নাড়া দিয়েছে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা প্রতিবাদের জন্য রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা সরকারের কাছে ৯টি দাবিনামা পেশ করেছে। অন্য দিকে সুপ্রিম কোর্টের নামকরা আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল জনস্বার্থে একটি রিট মামলা দায়ের করলে হাইকোর্ট দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছে, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ পাঁচ লাখ টাকা করে তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধের জন্য ঘাতক বাসের মালিক পক্ষ জাবালে নূর পরিবহনকে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের সাধারণ মানুষ শত দুর্ভোগ সত্ত্বেও ছাত্রদের আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্যরাও আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে যথাযথ নমনীয়। ফলে অন্য সব আন্দোলনের মতো সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য ছাত্র-আন্দোলন হঠাৎ স্তিমিত হয়ে যাবে, এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, দেশের সুধী সমাজ এবং সামাজিক মাধ্যমে সরব সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সরকারের একজন মন্ত্রীর দিকে অভিযোগের আঙুল তাক করে তার বিচার দাবি করছে। কেউ কেউ তার পদত্যাগ, কেউ বা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি আবার অনেকে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছেন। মূলত মন্ত্রীর একটি হাসির কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকেরা তির্যক প্রশ্ন করলে মন্ত্রী নিজের হাসি হাসি মুখ এবং আমুদে প্রকৃতি বোঝাতে গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেছেন, আপনারা কি কখনো আমাকে মুখ বেজার করে বসে থাকতে দেখেছেন? অন্য দিকে, পদত্যাগের ব্যাপারে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগ কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং তার পদত্যাগে সমস্যা আরো বাড়বে। কারণ, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সারা জীবন ক্রমাগত সড়কে দুর্ঘটনা কমানো এবং পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য দুর্বার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সব সময় দম্ভ করে বেড়ান।

আজকের নিবন্ধ লেখার সময় অর্থাৎ ৩১ জুলাই বিকেলবেলায় ইন্টারনেট মাধ্যমে জানতে পারলাম, মাননীয় মন্ত্রী তার হাসিমাখা মুখের অগোছাল ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন, যা তার মতো লোকের কাছ থেকে একেবারেই আশা করা যায় না। মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশে তৃপ্ত হয়ে আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে যাবে এবং তার পদত্যাগের দাবি থেকে সরে আসবে কি না তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। অন্য দিকে, অতীতের রেকর্ড মতে, গণদাবির কাছে নতি স্বীকার করে মন্ত্রীর পদত্যাগ অথবা মন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করার নজির খুব কম। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগের পেছনে যেমন নানামুখী রসায়ন ছিল, তেমনি সৈয়দ আবুল হোসেনের বিদায় কোনো স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পতন যে কেবল গণদাবির কারণে হয়েছে, এমনটিও বলা যাবে না।

মন্ত্রীদের উল্লিখিত ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে অবশ্য আমাদের হাস্যপ্রিয় আমুদে মন্ত্রীর বেশ পার্থক্য রয়েছে। তাকে যেমন বহু চিন্তাভাবনা করে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই দেয়া হয়েছে- তেমনি তাকে সরানোও বহু চিন্তাভাবনার বিষয়। কারণ, চল্লিশ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি বাংলাদেশের পরিবহন শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। হাল আমলে তিনি তার সেই নেতৃত্বের ব্যাপ্তি পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে গার্মেন্ট শ্রমিক, বন্দর শ্রমিক, লঞ্চ শ্রমিক, ব্যাংকের শ্রমিক ইউনিয়নসহ পরিবহন মালিক সমিতিতে বিস্তৃত করেছেন অত্যন্ত সফলভাবে। একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তার রাজকীয় পদ-পদবি, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে সাধারণত যেসব কর্ম করেন, তিনি তা না করে তামাম দেশের সব শ্রমিক সংগঠন এবং পরিবহন মালিক সমিতিতে কিংবদন্তির ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন, যার নজির দ্বিতীয়টি দেশে-বিদেশে অতীতে এবং বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

দেশের সব শ্রেণী-পেশার নিন্দুকেরা একযোগে ক্রমাগত আক্রমণ করেও এযাবৎকালে মন্ত্রীর একটি পশমে কম্পন অথবা লোমকূপ শিরশির অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারেনি। তাদের দাবি বা মামুবাড়ির আবদারের কাছে নতি স্বীকার করে মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন অথবা সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল তাকে বহিষ্কার করবেন, এমন চিন্তা যে কতটা অলীক তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা খুব ভালো করেই জানেন। কারণ, তিনি দৃশ্যত ও অদৃশ্যভাবে সরকারকে যে শান্তি দিচ্ছেন তা অন্য কেউ দিতে পারবে না। আমরা গত ৪০ বছরে এরশাদ জমানা, বিএনপি-জামায়াত শাসনামল এবং ১৯৯৬ সালের প্রথম দফার আওয়ামী শাসনামল দেখেছি। প্রতিটি সরকারই লঞ্চমালিক বা লঞ্চশ্রমিক, পরিবহন মালিক বা পরিবহন শ্রমিক এবং চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের উপর্যুপরি ধর্মঘটে নানাভাবে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারকে নানা ফাঁদে ফেলে বহু নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর পর শেষ অবধি শ্রমিক-মালিক সংগঠনগুলোই জয়লাভ করত। অতীতের সেই বিষাদময় উপাখ্যান গত ১০ বছরে একটি বারের জন্যও বর্তমান সরকারকে বিব্রত করেনি। মাননীয় মন্ত্রী মনে করেন, তার কল্যাণেই এটা সম্ভব হয়েছে। কাজেই তার টিকি স্পর্শ করা এত সহজ নয়

আমরা যদি মন্ত্রীর মনোভাব, বিশ্বাস ও আস্থাতে নির্ভর করতে পারতাম তবে অবশ্যই নির্বোধের মতো তার পদত্যাগ চাইতাম না কিংবা অর্বাচীনের মতো তার বহিষ্কারের স্বপ্নে বিভোর হতাম না। আমরা যদি মন্ত্রীর কৃতকর্মের জটিল সব রসায়ন চমৎকারভাবে সমন্বয় করে অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছার যোগ্যতা অর্জন করতাম, তবে তার কমনীয় ও নির্ভার হাসি হাসি মুখ ও উজ্জ্বল নয়নের ভাতির মধ্যে অহেতুক দোষ খোঁজার দুষ্টামি করতাম না। মন্ত্রী আসলে কেন হেসেছিলেন তা তিনি ৭১ টিভির একটি সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বলেছেন। সেদিন তিনি খুব ভালো মুডে ছিলেন। রাষ্ট্রীয় কর্মে অতীব বিভোর থাকার কারণে রাস্তার কোনো খোঁজখবর তার জানা ছিল না। তিনি সচিবালয়ে নিজ দফতরে বসে একটি বিরাট আন্তর্জাতিক ক্রয় আদেশ চূড়ান্ত করছিলেন। মংলা বন্দরের ৬৮ বছরের ইতিহাসের বৃহত্তম ক্রয় আদেশ এবং ক্রেন কেনার ব্যাপারটি চূড়ান্ত হওয়ার পর তিনি যখন একধরনের আত্মতৃপ্তিতে খুবই আহ্লাদিত অবস্থায় ছিলেন, তখন সাংবাদিকেরা হঠাৎ করে সড়ক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গটি তুললে তিনি প্রশ্নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাতারাতি মুখের হাসি হাসি ভাবে বিষ মাখিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে অশ্রুসজল নয়নে বক্তব্য দিতে পারেননি। ফলে তার হাসিমাখা মুখ, আহ্লাদিত কণ্ঠের উৎফুল্লময় জবাব এবং সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ভারতের উদাহরণ জনগণ ঠিকমতো নেয়নি বা বোঝেনি!!

মন্ত্রী মহোদয় সম্পর্কে বহুজনের বহু অভিযোগ থাকতে পারে। তবে মানুষ হিসেবে তিনি জটিল ও কুটিল প্রকৃতির নন। তিনি যা করেন তা খোলামেলাভাবে এবং অত্যন্ত দৃঢ়তা নিয়ে প্রকাশ্যেই করেন। অনুরূপ তিনি যা বলেন তা-ও কোনোরকম রাকঢাক না করে খোলামেলাভাবে বলেন। সচিবালয়ে তিনি তার রুমে সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন সম্ভবত ক্রেন কেনার কাহিনী বলার জন্য। সেখানে হঠাৎ করে তারা যদি কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা, যা বৈঠকরত মন্ত্রীর পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না তা সম্পর্কে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান এবং মুহূর্তের মধ্যে মন্ত্রীর মেলোডি মুডকে ট্র্যাজেডিতে রূপান্তর করতে বলেন; তবে সেটি কতটা সম্ভব কিংবা আদৌ সম্ভব কি না এই বিবেচনার ভার পাঠকদের ওপর রইল।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

 


আরো সংবাদ



premium cement