২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শহরনামা

-

ভালো একটা চাকরির গোছ করে দিবে বলে নগদ তিন হাজার টাকা নিলো মুস্তাফিজুর ভাই। বলল, ঠিক সাত দিন পর আমি তোমাকে জানাব সব। সেই আশ্বাসে কেটে গেল সাত দিন। একটা সুসংবাদ পাবো; সময় গুনছি প্রতীক্ষায়। দিন শেষ রাত এলো; রাত শেষে ভোর হলো। মাঝখানে দুটো দিনও চলে গেল, তবু কোনো খেঁাঁজখবর মিলল না। উপায় না দেখে সরাসরি অফিসে গিয়ে তার সহকর্মী মাসুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করি, মুস্তাফিজুর ভাই কোথায়, বলতে পারেন? তার ভঙ্গিমা আমায় স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলো, ‘তাকে খুঁজতে এসে আমি যেন মহা ভুল করেছি’। মাসুম সাহেব বললেন, মুস্তাফিজুর সাহেবকে খুঁজছেন, বাহ! বেশ তো; আপনি আস্ত একটা বাটপারের পাল্লায় পড়ে গেছেন। গত পাঁচ দিন হলো অফিসের পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে উনি উধাও হয়েছেন। কোনো খোঁজ নেই।
মাসুম সাহেবের কথাগুলো শুনে বিশ্বাস হলো না বলে আবার বলিÑ ভাইজান আমার সাথে ফান করছেন না তো আবার?
‘ফান করলে আমি তো আর লাখ লাখ টাকা পাবো না যে, সচরাচর যার তার সাথে ফান করে বসব’Ñ বলে মাসুম সাহেব সত্যটা বুঝিয়ে দিলেন যথাযথভাবে। আর বাড়ালাম না কথা । ‘কী করব’ ‘কী করা উচিত’ বোধে এলো না। কত কষ্ট করে হাজার তিনেক টাকার গোছ করে দিলাম মুস্তাফিজুর ভাইকে, অথচ সে কী করল! বেরিয়ে পড়লাম বাইরে। কোথায় যাবো! সেøাথ হয়ে এলো পায়ের গতি। শক্তিহীন হয়ে পড়ল মেরুদণ্ড। শহরের মানুষগুলো কত নিষ্ঠুর। বিশ্বাস তাদের কাছে একটা শুকনো পাতাবিশেষ। আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের ওপর মুস্তাফিজুর সাহেবেরা এমন দু-দণ্ড অমসৃণ নাটক করে কিভাবে? বুকের পাঁজর ভেদ করে বেরিয়ে আসে নোনা দীর্ঘশ্বাস। ডানাভাঙা শালিকের মতো তাকাই চার পাশ! বুঝতে পারি; এই জাদুর শহরে কোথাও যাওয়া নেই আমার! রঙবেরঙের এই শহরের কাছে আমি এক অসহায় দর্শক মাত্র। পা চালিয়ে এলাম নির্জন জায়গায়। পাশে ডাস্টবিন। ইচ্ছে হলো নিজেকে এই ডাস্টবিনে ছুড়ে দিয়ে পালিয়ে যাই জীবন থেকে। তবে যদি একটু সুখ পেতাম! স্বস্তি পেতাম। আবার মনে হলো জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচা যায় না। জীবন এক যুদ্ধক্ষেত্র । এখানে আমি সৈনিক। লড়ে যেতে হবে আমাকে। দ্বিধা আর মনের সাথে দ্বন্দ্বে দ্বন্দ্বে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এলো। ঘর নেই আমার। ঘরেও কেউ নেই। কেউ অপেক্ষায়ও নেই। তাই ফেরার তাড়াও নেই । বসে থাকি, অভিমানে। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ টের পাই। কানে শব্দ ভেসে আসে ‘ভাইয়া, ১০টা ট্যাকা দেন; কিছু খামু; খিদা লাগছে।’ ঘোর আর অভিমান তৈরি করল উদ্ভট রাগ। কী একটা ভেবে ছেলেটার গালের ওপর শক্ত করে দিলাম এক চড়। এমন অবিচার সে একদমই আশা করেনি, তার চোখের নোনা জল বুঝিয়ে দিলো আমাকে। চোখে চোখ রেখে নির্জীব পাথরের মতো দাঁড়িয়ে কাঁদছিল; কেন জানি মায়া হলো না; বড্ড রাগ হলো। বুকের ভেতর হয়তো এই শহরের মানুষের প্রতি জন্ম নিয়েছে প্রচণ্ড রাগ কিংবা এই শহরের প্রতিও। চোখের সামনে থেকে চলে যায় কাঁদতে কাঁদতে। একটাবারের জন্যও তাকানোর প্রয়োজন মনে হলো না। মানুষের প্রতি সমূহ ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছি হয়তো। কিছুক্ষণ পর রাগ ঝেরে সহজ হই; স্বাভাবিক হই। হঠাৎ মনে হলো, কারো কাছে আমি বড় ধরনের অপরাধী হয়ে গেছি। খুঁজতে থাকি সেই ছেলেটাকে। নেই; কোথাও নেই। একটু এগিয়ে এসেই দেখি ডাস্টবিনের নিচু এক জায়গায় পচাবাসি কিছু একটা খাচ্ছে। মানুষ কতটা ক্ষুধার্ত হলে সে খেতে বসে ডাস্টবিনের নষ্ট খাবার । তীব্র অপরাধ বোধে নাড়া দিলো মন। কাছে ডাকি। অভিমানের সেই অবিচার আমার প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছে ভয়।
দু’জন রিকশায় চড়ে বসি গুলিস্তানের উদ্দেশে। ১০ বছরের ছেলেটা বারবার তাকাচ্ছে ভয়ে, বিস্ময়ে। গুলিস্তানে নেমে আমায় বলেÑ এই হানে ক্যানে নুয়াইলেন আমারে? কোনোরূপ কথা না বাড়িয়ে এগোই দোকানের দিকে। পকেটে আমার টাকা আছে ক’টা । ছেলেটাকে কিছু একটা কিনে দিতে ইচ্ছে হলো। একটা শার্ট, প্যান্ট আর জুতা কিনে দিলাম। এগুলোতে অনাগ্রহ প্রকাশ করল। বিশ্বাসও করতে চায় না এসব ওর জন্যই। হাসিমুখে খুব জোর গলায় ‘এই সব তোমার, সত্যি বলছি তোমার, নাও’ বলে হাতে তুলে দেই। আর ক’দিন পর ঈদ। আমার কিছু না হোক। আমার অল্প টাকার পণ্য যদি ওকে সামান্য আনন্দ দিতে পারে। তাতেইবা কম কোথায়! ওকে কিছু একটা দিতে পেরে বড্ড তৃপ্তি অনুভব করলাম। বিস্ময়ে প্রাণখুলে হেসে ওঠে ছেলেটা। ওর হাসিমিশ্রিত বাতাসে উড়ে যায় আমার তাবৎ দুঃখ।
সিরাজগঞ্জ

 


আরো সংবাদ



premium cement
বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল