২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বগুড়ায় পুলিশের মামলায় প্যারালাইজড রোগী ও প্রবাসীরা আসামি

মামলার অন্যতম অসামী প্যারালাইজড রোগে আক্রান্ত ৮৬ বছরের আব্দুল খালেক সরকার - নয়া দিগন্ত

বগুড়ায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা আবারো মামলার জালে আটকে পড়ছেন। গত ১৫ দিনে জেলার ৭ উপজেলায় ১৫ টি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানা গেছে । এতে প্রায় ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে আরো পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে দুটির বাদী আ’লীগ ও বাকী ১৩টির বাদী পুলিশ।

এসব মামলার আভিযোগ নাশকতার পরিকল্পনা, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র , ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতংক সৃষ্টি ।

এসব মামলায় আসামী থেকে বাদ যাননি ৮৬ বছর বয়সী প্যারালাইসড রোগী, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী ও সৌদি আরব প্রবাসী ও হজ পালনকারী ব্যক্তিও।
বিএনপি বলেছে, এসব মামলা গায়েবী ও অভিযোগ বায়বীয়। এসব মামলায় এ যাবত গ্রেফতার করা হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জন। এর মধ্যে জামায়াতের ২২জন।
রাজনৈতিক সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারী দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে রাখতে তাদের নামে এসব গায়েবী মামলা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে বসবাসকারী বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাবশালী নেতাদের নির্বাচনের আগে জেলে বন্দি করার অংশ হিসেবে এসব মামলা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।


জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর ধুনট থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আওতায় নাশকতার মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় ধুনট পৌর বিএনপির সভাপতি আলীমুদ্দিন হারুন মন্ডল, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরাফত জামান পাশা অন্যতম আসামী।
এ ছাড়া অন্য আসামীদের সাথে আব্দুল খালেক সরকার (৮৬) নামের এক বিএনপি কর্মী ( যিনি প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাসায়ী ) আসামি করা হয়েছে। তিনি ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের নান্দিয়ারপাড়া গ্রামের মৃত মোবারক আলী সরকারের পুত্র। এ ছাড়া ওই মামলায় বিএনপির আরো ১৮জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার কান্তনগর বাজারে মাদক বিরোধী অভিযান ও থানা এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটিতে আসে থানা পুলিশ। এসময় নিমগাছী ইউনিয়নের নান্দিয়ারপাড়া রহমানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার পিছনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠকে নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে খবর পেয়ে রাত ৮টায় অভিযান চালায় থানা পুলিশ।

পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ধুনট থানায় ওই মামলা করা হয়েছে। সেখানে প্যারালাইসিস রোগী আব্দুল খালেক সরকারকে ৩৮ বছর বয়স দেখিয়ে আসামি করা হয়। প্যারালাইসিস রোগী হিসেবে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে মেডিসি বিভাগে ৩১ জুলাই থেকে ৪ঠা আগষ্ট পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে ছাড় পত্র নিয়ে বাড়ি যান। বর্তমানে তিনি বাড়িতেই শয্যাশয়ী আছেন। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে খালেক সরকারের পরিবার।

এই মামলার অপর আসামী মালয়েশিয়া প্রবাসী নাংলু গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া। তিনি গত ৭ মাস আগে জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় গমন করেছেন। কিন্তু তার নামেও মামলা দেয়া হয়েছে।
নিমগাছী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমান মোল্লা বলেছেন, পুলিশ কার নামে মামলা দিচ্ছে তার বর্তমান অবস্থা কি এসবের কোন তোয়াক্কা করছে না। ইচ্ছে মত বিএনপি নেতা কর্মিদের নামে মিথ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

শাজাহানপুর উপজেলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা হয়েছে । এতে আসামীর তালিকায় রয়েছেন দুই বিএনপি নেতা যারা সৌদি আরবে রয়েছেন হজ¦ পালনের জন্য। এরা হলেন মাদলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোকলেছুর রহমান ও মাঝিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি খায়রুল বাশার। এসব মামলার সময় তারা দুইজনই সৌদি আরবে ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেছেন, প্রাথমিক তথ্যে ভুল থাকইে পারে। তদন্ত শেষে তা সংশোধন করা হবে।
বগুড়া সদর থানায় এ যাবত মামলা হয়েছে ৬টি। এখানে ৪টি বিএনপির বিুরদ্ধে ও একটিতে আসামী করা হয়েছে জামায়াতের মহিলা নেতাকর্মীদের বিুরদ্ধে। বিএনপির আসামী করা হয়েছে , সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল, জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বোখতিয়ারের নাম রয়েছে। এ ছাড়া শহরের কাটনারপাড়ায় কোরআন শিক্ষার আসর থেকে জামায়াতের ৬জন মহিলা কর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গাবতলী উপজেলায় দুটি মামলা হয়েছে। সেখানে আসামী করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টন, পৌর মেয়র সাইফুল ইসলামকে।
শাজাহানপুর উপজেলায় দুটি মামলা হয়েছে। এতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল বাশারসহ নেতাকর্মীদেরআসামী করা হয়েছে।

দুপচাচিয়া উপজেলায় একটি মামলা হয়েছে। এতে তালোড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন সরকার, তালোড়া পৌর মেয়র বেলাল হোসেন আসামী রয়েছেন।

সর্বশেষ গত শুক্রবার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল এলাকা থেকে জামায়াতের উপজেলা আমীর আনারুল হক সহ ১৬জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তাদের বিুরদ্ধে পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে।

এসব মামলা প্রসঙ্গে বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বলেন, ‘বগুড়া সদরে আবার শুরু হলো মিথ্যা ও হয়রানিমুলক মামলা। পুলিশ কোন কারণ ছাড়াই এসব মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তার দৃষ্টিতে এগুলো গায়েবি মামলা। বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ভিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে পুলিশ’।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেছেন , সারকার বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে দমিয়ে রাখার চেস্টা করছে। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হবে। মিথ্য মামলা দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না। দেশমাতাকে কারামুক্ত , গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধার ও নিরদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে জনগনের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement