২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তৃণমূলে ঘোর, শীর্ষ নেতারা বিস্মিত, তবুও কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলো বিএনপি?

নেতৃত্ব অটুট রাখতেই হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল - সংগৃহীত

আকস্মিভাবেই সিদ্ধান্ত বদল করে দল থেকে নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে বিএনপি। দলটির হাইকমান্ডের হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে এখনো ঘোর কাটেনি মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের। তারা নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। শীর্ষ অনেক নেতাও এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত। এর পেছনে কোনো সমঝোতা আছে কি না তাও বোঝার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। খোঁজ নিয়ে যতদূর জানা গেছে, সংসদে যেতে নানা যুক্তি তুলে ধরে শেষ পর্যন্ত অনড় ছিলেন বিএনপির নির্বাচিতরা। শত বুঝিয়েও যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন বৃহত্তর স্বার্থে এদের ওপর দলীয় ‘নিয়ন্ত্রণ’ রাখতেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়েছে। 

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে বরাবরই একমত ছিলেন বিএনপির বেশির ভাগ নীতিনির্ধারক। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেছেন, ‘শেষ মুহূর্তে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ অটুট রাখতেই সিদ্ধান্ত বদল করেছেন।’ ওই নেতা আরো বলেন, শপথ নেয়ার অপরাধে এদের বহিষ্কার করা হলেও সংসদে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার মুক্তির কথাই তারা তুলে ধরবেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। এমন অবস্থায় সংসদ ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির মধ্যে এক ধরনের মতপার্থক্য সৃষ্টি হতে পারে, এমন উপলব্ধিও সিদ্ধান্ত বদলের পেছনে কাজ করেছে। 

এমন সিদ্ধান্তের পেছনে বেগম জিয়ার মুক্তি প্রক্রিয়ার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সে সম্পর্কে অবশ্য বিএনপির হাইকমান্ড থেকে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে তারা মনে করেন, সরকারের নির্দেশেই বেগম জিয়া ১৪ মাস ধরে কারাবন্দী আছেন। জামিন পাওয়ার যোগ্য হলেও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। শীর্ষ নেতারা কখনো কখনো এমনো বলেছেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়, এটি নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। এজন্য সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।’ বিএনপি সংসদে যাওয়ায় বেগম জিয়ার জামিন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে এমন আলোচনাও বিএনপির বিভিন্ন স্তরে রয়েছে। 

সংসদে যোগ দেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সংসদে কথা বলার সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংসদ ও রাজপথের সংগ্রামকে যুগপৎভাবে চালিয়ে যাওয়াকে তারা যৌক্তিক মনে করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি কোনো সিদ্ধান্তই কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে থাকবে, স্থবির হয়ে থাকবেÑ এটা সব সময় সঠিক নয়। আমরা ন্যূনতম যে সুযোগটুকু আছে সংসদে কথা বলার সেই সুযোগটিকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে অনেকে অনেক রকম কথা বলছেন। এ সিদ্ধান্তটা খুব খারাপ বলে মনে করি না এবং আমাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় যুক্তি হচ্ছেÑ সামান্যতম যে স্পেসটা রয়েছে, সেই স্পেসটাকে ব্যবহার করা। যদিও বিএনপি মহাসচিব সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। তার এই শপথ না নেয়াও দলের সিদ্ধান্ত ও কৌশল হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন। 

চার এমপির মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ শপথ নেয়ার পর সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েই বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। সংসদে দেয়া বক্তব্যে তিনি এও বলেছেন, ‘অনেক কাঠখড় পেরিয়ে তারা সংসদে যোগ দিয়েছেন।’ এই বক্তব্যে সংসদে যেতে তাদের অনড় অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। নির্বাচিতরা শপথ গ্রহণের আগে বলেছেন, সংসদে যেতে তাদের ওপর জনগণের চাপ আছে। বিএনপির তরফ থেকে বলা হচ্ছিলÑ সরকার তাদের দলের এমপিদের শপথ নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে যেটিই হোক সংসদে যাওয়ার জন্য এক ধরনের চাপ যে ছিল সেটি স্পষ্ট। বিএনপির এক নেতা বলেছেন, কূটনৈতিক মহল থেকেও তাদের কাছে বারবার জানতে চাওয়া হয়েছে তারা সংসদে যাবেন কি না। 

বিএনপির সংসদে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক হয়েছে, তা নিয়ে বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেহেতু এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, ভিন্ন মত থাকলেও সবাই তা মেনে নেবেন বলে নেতারা জানান। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। সরকারের ভেতরে একধরনের চাপ রয়েছে। তাদের নতুন নির্বাচনের দাবি নানা কৌশলেও আদায় হতে পারে। বিদ্যমান বাস্তবতায় এই মুহূর্তে যেহেতু রাজপথে কঠোর কোনো আন্দোলনের সুযোগ নেই, সে ক্ষেত্রে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচকভাবে দেখা যেতে পারে। 

তবে সিদ্ধান্তের আকস্মিকতায় বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা বিব্রত অবস্থায় রয়েছেন। তারা পুরো পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement