০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দল ছাড়তে শুরু করেছেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা

জাপাতে ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড  

এরশাদ ও রওশন এরশাদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে চলছে অস্থিরতা। মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের অসুস্থতার সুযোগে ভেঙে পড়েছে দলটির চেইন অব কমান্ড। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেউ কাউকে মানতে চাইছেন না। মহাসচিবের মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে অনেকে আবার দল ছাড়তে শুরু করেছেন।

এ দিকে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করার কথা বলে রুহুল আমিন হাওলাদার মাঠপর্যায়ের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে তার প্রেক্ষাপটে তারা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন। রুহুল আমিন হাওলাদারের গুলশানের বাসায়, তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়িক কার্যালয়, এমনিক বনানীর পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়সহ সর্বত্র হানা দিচ্ছেন টাকা দিয়েও মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত নেতারা। 

নীলফামারী-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনাভোটে এমপি হন তিনি। এবারো তাকে মনোনয়ন দেয়ার কথা বলে এক কোটি টাকা নেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম করে তার কাছ থেকে এই টাকা নেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শওকত চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিয়ে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এরশাদের ভাগ্নি জামাই জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলুকে। তিনি চট্টগামের মানুষ হলেও এই আসনটিতে তার শ্বশুরবাড়ি। তিনিও চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে বিনাভোটে জাতীয় পার্টির এমপি হয়েছিলেন।

বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়েও মনোনয়ন না পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার শওকত চৌধুরী এরশাদের বনানীর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, আমাকে টাকা ফেরত দিয়ে তারপর স্যারকে (এরশাদ) এবং হাওলাদারকে সৈয়দপুর যেতে বলবেন। অন্যথায় পুলিশও তাদের রক্ষা করতে পারবে না, বলে গেলাম। তিনি বলেন, আমি তাকে দেখে নেবো। তাকে ষাট লাখ টাকা দিয়েছি। যখন যা চেয়েছে সব দিয়েছি, কোন অনুষ্ঠানে টাকা দিইনি? যখন সৈয়দপুর গেছেন ওনার জন্য কী করিনি? আমার টাকা ফেরত দিতে বলিয়েন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের যদি মনোনয়ন দেয়া নাই হবে, তাহলে কেন এত টাকা নিলো রুহুল আমিন হাওলাদার। এত টাকাইবা খরচ করানো হলো কেন? তিনিও টাকা ফেরত দাবি করেন। জয়পুরহাট-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম রিপন বলেন, আমি নির্বাচনের জন্য প্রায় কোটি টাকার মতো খরচ করেছি। নেতারা মনোনয়ন দেয়ার কথা বলে উনি টাকা নিয়েছেন। মনোনয়ন যদি নাই দেয়া হবে তাহলে এভাবে টাকা নিলেন কেন? 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ক্রীড়া সংগঠক জামাল রানা বলেন, মহাসচিব এক কোটি টাকা চেয়েছেন। টাকা দিতে পারিনি তাই মনোনয়ন দেননি। এবারের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। সবার আগে নিজের এবং নিজের স্ত্রীর মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন। এরপর যারা টাকা দিয়েছে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যারা টাকা দেননি তারা জনপ্রিয় হলেও মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। 

এ দিকে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে দল ছাড়তে শুরু করেছেন দলটির তৃণমূলের নেতারা। ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও পার্টি চেয়ারম্যানের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার ইতোমধ্যে এ অভিযোগ এনে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় জাতীয় পার্টি ছেড়ে গতকাল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা শাখার সদস্য সচিব রোকনউদ্দিন বাবুল। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর হাতে ফুল তুলে দিয়ে আনুষ্ঠিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান উপস্থিত ছিলেন।

অপর দিকে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৃণমূল পর্যায়েও প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে এবার মনোনয়ন দেয়া হয় অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে। তিনি পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা। অথচ তার শ্বশুর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে পরপর দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। জিয়াউল হক মৃধা অভিযোগ করেন, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পার্টির মহাসচিব তাকে বঞ্চিত করে তার জামাতা রেজাউলকে মনোনয়ন দেয়। অথচ এই এলাকায় রেজাউলের কোনো পরিচিতি নেই, জনভিত্তিও নেই। রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছেÑ এ খবরে জিয়াউল হক মৃধার সমর্থকেরা গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা সোয়া ১১টায় সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া মোড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়। ফলে মহাসড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর জিয়াউল হক মৃধা এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, মহাজোট থেকে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার বদলে যেন সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। অন্যথায় সরাইল-আশুগঞ্জে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।  

 


আরো সংবাদ



premium cement
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা আ’লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত : কাদের মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি বাড়ানোর লক্ষ্যে গাম্বিয়ায় ওআইসির সম্মেলন শুরু ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনা প্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশী আহত মধুখালীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকচালক নিহত, আহত হেলপার বরিশালে নথুল্লাবাদ টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ নয়া দিগন্তের শৈলকুপা সংবাদাতার ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ সুন্দরবনে জ্বলছে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট শায়েস্তাগঞ্জে সাবেক সেনা সদস্য ট্রাকচাপায় নিহত ইসরাইল-গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে কায়রোতে জোরদার প্রচেষ্টা

সকল