২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা চলবে না

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা চলবে না - ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী সরকার বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে পানি ঘোলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ করে দেয়া। তাকে চিকিৎসা না দেয়ার জন্যই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন আর আবোল তাবোল বকছেন। তবে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালে দিতে হবে। এ নিয়ে কোনো টালবাহানা জনগণ মেনে নিবে না। অপপ্রচারের মিথ্যা-সন্ত্রাস করে ধারাবাহিক অশান্তি জিইয়ে রাখলে এর খেসারত সরকারকেই দিতে হবে। সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা চেতনায় মানবকিতা সহমর্মিতার কোনো বালাই নেই, আছে শুধু হত্যার হুমকি আর রক্তের নেশা। অসহিষ্ণু মননে থাকে না কোনো নান্দনিক বোধ। তাই দেশব্যাপী চলছে বেআইনি বিচারবর্হিভূত হত্যার যজ্ঞ, রক্ত জমাট বাঁধা আতঙ্ক দেশের জনপদে জনপদে তাড়া করে ফিরছে। আর এ জন্যই আওয়ামী শাসনের কোথাও আস্থা ও স্বস্তির লেশ মাত্র নেই।

তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অগণতান্ত্রিক সরকারের মিথ্যাবাদী গোয়েবলস-এর ভূমিকা পালন করছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা। যারা গণবিচ্ছিন্ন তাদেরকে ‘হাইপার প্রোপাগান্ডার’ উপর নির্ভর করতে হয়। সরকারের টিকে থাকার নিবু নিবু দীপটিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ওবায়দুল কাদের মরিয়া হয়ে উঠেছে। অবশ্য ১/১১’র সময় গ্রেফতার অবস্থায় নিজ নেত্রীর টাকা লেনদেন সম্পর্কে যা বলেছেন সেটিকে আড়াল করার জন্যই বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার প্রাণন্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আসলে তারা বেগম খালেদা জিয়াকে সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন নানাভাবে যেমন, বাথরুম আর মেঝেতে ইঁদুর আর তেলাপোকার অবাধ বিচরণ, জরাজীর্ণ ভবনের মধ্যে দেশনেত্রীর কক্ষের চারদিকে দেয়াল থেকে সিমেন্ট আর বালি ঝড়ে পড়া, বেগম জিয়ার সদ্য অস্ত্রোপচারকৃত দুটি চোখকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। ৫/৬ মিনিট অজ্ঞান হয়ে পরে থাকার পরও ঘটনাটি কারাকর্তৃপক্ষের অগোচরে ছিল যদি না স্বজনরা দেখা করেত গিয়ে সেটি না জনতেন। প্রকৃত যে কারণে তিনি অজ্ঞান হয়েছিলেন সেটি সম্পর্কেও তারা মিথ্যা কথা বলছে।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যখন সাব-জেলে ছিলেন তখন কিভাবে তার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছিল এটার উত্তর দিবেন কী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক? বিরোধী প্রতিপক্ষের প্রতি আওয়ামী লীগের আচরণ ২৫ শে মার্চের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চাইতে কোনো অংশেই কম নয়। যেমন ঈদের দুদিন আগে থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের উপর ওবায়দুল কাদের সাহেবের নির্দেশে যে বাধা ও নির্দয় আচরণ করা হয়েছে তার নজির একমাত্র আওয়ামী লীগই। ঈদুল ফিতরের ন্যায় একটি প্রধান উৎসবের দিনেও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিজ গ্রামের বাড়িতে পুলিশের দ্বারা অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে। উৎসবের দিনে তিনি বাইরে বের হতে পারেননি এবং নিকটজনরা তার বাসায় ঢুকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে পারেননি। আসলে সরকার অবৈধ ক্ষমতার অহংকারে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। এরা বিরোধী দলের স্বাভাবিক জীবন যাপন, সামাজিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসবেও বর্বোরচিত হস্তক্ষেপ করছে। আওয়ামী লীগ হানাদার বাহিনীর ন্যায় জ্ঞানশুন্য, বিবেকহীন, মানবধিকার লঙ্ঘনকারী এক বেআইনি গণবিরোধী আগ্রাসী শক্তি। এরা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সব সময় তটস্থ তাই বিরোধী নেতৃবৃন্দের চলা ফেরা দেখলেই এরা পুলিশকে লেলিয়ে দেয়। এভাবে তারা সারা দেশে জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছে।

ওবায়াদুল কাদেরের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, রাস্তা ঘাটের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী যদি ঈদকে কেন্দ্র করে যাতায়াতে মানুষের নাজেহাল অবস্থা বিবেচনায় নিতেন তাহলে রাস্তা ঘাটের দূর্ঘটনায় নিহত মানুষের মিছিল এতো দীর্ঘ হতো না। খানাখন্দে ভরা চারদিকে রাস্তা ঘাটে শুধু লাশ আর লাশ, তাই নিজের ব্যর্থতা ঢাকা দিতেই তিনি দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে আবোল তাবোল বকছেন। অপরাধীরা একটা অপরাধ ঢাকা দিতে আরো অপরাধের আশ্রয় নেয়। ঠিক তেমনি রাস্তাঘাটে বেহাল দশায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ওবায়দুল কাদের ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে তার নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলী হেলনে উঠেন বসেন বলেই আওয়ামী মন্ত্রীরা কান্ডজ্ঞান বিবর্জিত।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আসলে কাল্পনিক বানানো গল্পে চ্যাম্পিয়ন আওয়ামী নেতারা। বাণিজ্যমন্ত্রী আপনি ভুলে গেছেন, কারাগার থেকে চিকিৎসার নামে বিদেশে যাওয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আপনার নেত্রীর। রাজনীতি থেকে প্রধান নেতৃত্বকে মাইনাস করার তত্ত্ব আপনাদের কয়েকজনের মাথা থেকে এসেছে এরকম একটা ধারণা জনগণ পোষণ করে। এক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত মাইনাস টু তত্ত্ব আপনাদেরই মানস সন্তান। এখন আমার প্রশ্ন আপনারা কী এখন মাইনাস টুতে আছেন না মাইনাস ওয়ানে আছেন? এটা একটু খোলাসা করে জনগণকে জানাবেন কী? দেশনেত্রী বেগম জিয়া এমন নেত্রী যাকে জোর করে দেশ থেকে পাঠানো যায়নি। কিন্তু আপনার নেত্রী সহজেই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার অনঢ় ও অনমনীয়তার কারণে ১/১১’র সরকার ব্যর্থ হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী এবং আপনি মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিগত পাঁচ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছেন।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement