জাতি স্তম্ভিত : এ কেমন নির্বাচন!
- অধ্যাপক সারওয়ার মো: সাইফুল্লাহ্ খালেদ
- ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:৪৯
কথায় বলে, দুর্বৃত্তেরও একটা নীতিবোধ আছে। যে বাড়িতে ডাকাতি হয় সে বাড়ির লোকের ভরণপোষণের মতো মালামাল রেখে যায়, যেন তাদের পথে বসতে না হয়। কিন্তু এবার কী হলো! একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের বিপুল বিজয় এবং বিএনপির শোচনীয় পরাজয়কে আওয়ামী লীগ কী করে জাস্টিফাই করবে? বিএনপি আওয়ামী লীগের মতোই একটি প্রতিষ্ঠিত বড় দল। এ দলকে ‘পথে বসাতে’ যে নীতি বিবর্জিতহীন ভোট-প্রতারণা করা হলো তা বিশ্বের গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিরল। এটি কোনো মতেই মেনে নেয়া যায় না। অনেকে বলছেন, এ নির্বাচনে ২০১৪ সালের নির্বাচনের চেয়েও বেশি জবরদখল হয়েছে। সঙ্গত কারণেই বিএনপি মহাসচিব দাবি করেছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগই যদি আবার ক্ষমতায় আসে, বলার কিছু থাকে না। তবে এবারের নির্বাচন প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের মতো দেশের ক্ষমতাধর সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় না।
বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের প্রায় সব ক’টি প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। কেবল দফায় দফায় স্যালুট দিলেই দায় সারে না। জনগণের অর্থে লালিত-পালিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ঘোরতর অন্যায়। তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার যোগ্যতাও রাখেন না? এবার নির্বাচনে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে নামকাওয়াস্তে সেনাসদস্য মোতায়েনের সাথে সাথে রহস্যজনকভাবে সহিংসতা বেড়ে গেল। নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হলো। সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনটা কী? এ কি কেবল সেসব রাজনীতিককে ‘শিক্ষা’ দেয়ার জন্য, যারা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের অবিরাম দাবি করে আসছিলেন? কোনো কোনো বাহিনীপ্রধানের হাবভাবে মনে হলো আওয়ামী লীগের এ নির্বাচনী বিজয় তাদেরই কৃতিত্ব। রাষ্ট্রীয় আইন মোতাবেক তারা কতটা করতে পারেন?
ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে আসছিলেন- ‘আমাদের বিজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে, ভোট একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’ এমন অদ্ভুত দাবি তিনি করতেই পারেন। কারণ, তাদের দলীয় ক্যাডারদের অপকর্মে সহায়তা করার জন্য নানা বাহিনী, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি সবই ছিল। জনগণ যাতে পছন্দের প্রার্থীদের অবাধে ভোট দিতে না পারে, ভোটকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের যাতে উন্মুক্ত ভোটের ব্যবস্থা করতে হয়, ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা যায়- এ জাতীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করে রাখা হয়েছিল। এটি নতুন নয় এ দেশে। যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, তাদের কাছে এই চেতনা এবং স্বাধীনতার আদর্শ কী, তারা এবারের নির্বাচনে যা করলেন, এটা নয়। মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে যা করেছেন সে জন্য জাতি গর্বিত ও তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। অন্য দিকে, স্বাধীন দেশে যারা লুটপাট ও অন্যায্য সুবিধা আদায় করেছে, তার জন্য তারা না হলেও জাতি লজ্জিত। যারা বোঝা ও কলঙ্ক, এদের ঔদ্ধত্য ও জবরদস্তি থেকে জাতি মুক্তি চায়।
মুক্তিযুদ্ধের দল হিসেবে যতই বড়াই করা হোক না কেন এবং যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেওনি, সেসব নিরপরাধ তরুণকে মুক্তিযুদ্ধের নামে যতই বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করুক না কেন; সে প্রচেষ্টা সফল হবে না। অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ভোট ডাকাতি, লুটপাট, চুরি-চামারি, খুন, গুম, ধর্ষণ-জাতীয় কার্যকলাপ করার অধিকার কারো নেই।
হাজার মাইল দূরে এবং তাদের শত্র“রাষ্ট্র পেরিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কাল্পনিক কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া অযৌক্তিক। যখন ১৯৮০-এর দশকে টাঙ্গাইল করটিয়া কলেজে শিক্ষকতা করি, তখন বাংলার এক জ্যেষ্ঠ অমুসলিম সহকর্মী আমাকে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর পাঁচ লক্ষাধিক সদস্য কর্মরত। তিনি হাসতে হাসতে আরো বলেছিলেন ‘আর আমরা দুই কোটি ভারতীয় অ্যাম্বাসেডর তো আছিই।’ বছর কয়েক আগে তিনি টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বাস্তুভিটা বিক্রি করে সপরিবারে ভারত চলে গেছেন। তার কথাগুলো উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। অসাম্প্রদায়িকতা ও বাঙালিয়ানার নামে অনেক বাড়াবাড়িও হচ্ছে।
আওয়ামী লীগকে জাতির কাছে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। দেশে যত অনাচার, অবিচার ও অপসংস্কৃতি; এর জন্য সরকারকে দায়ী করা যায়। এ দেশে ব্যক্তিপূজার চল ছিল না। আওয়ামী লীগ এ নষ্ট কালচার প্রবর্তন করেছে। যেসব লোক ভোট ডাকাতি করেছে, তাদের কোনো ধর্ম নেই। যারা তাদের এ কর্মে নিয়োজিত করেছে, তাদেরও ধর্ম থাকার কথা নয়। নির্বাচনে ভোট ডাকাতিতে জাতি স্তম্ভিত। এর প্রতিকার হতেই হবে। ক্ষমতাসীন দলকে অনুরোধ করব, আপনারা যদি আল্লাহর বিচারে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন তবে সরকার গঠনের এক মাসের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের বিধান রেখে সংবিধান সংশোধন করে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্বচ্ছ জাতীয় নির্বাচন দিন। সে নির্বাচনে যদি আপনারাই ক্ষমতায় আসেন, সবাই আপনাদের স্বাগত জানাবে। অন্যথায় ভোটবঞ্চিত জনগণ কোনো দিন ক্ষমা করবে না। আর কিছু করতে না পারলেও আল্লাহর দরবারে হাত তুলে ভোটসন্ত্রাসীদের অভিশাপ দেবে।
লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা