০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গাজায় ইসরাইলের তিন বিকল্প

গাজায় ইসরাইলের তিন বিকল্প - ছবি : সংগৃহীত

বিগত মার্চের ৩০ তারিখে ফিলিস্তিনিরা ‘ঘরে ফেরার মহান মার্চ’ কর্মসূচি শুরু করলে ইসরাইল এটাকে নেয় সঙ্ঘাতের সুযোগ হিসেবে। এটি শুরু হয়েছিল মূলত একের পর এক নিরস্ত্র সাধারণ বিক্ষোভকারীদের গুলি করার মধ্য দিয়ে। এ সময় কিভাবে এই ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের জন্য ‘হুমকি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং কোন কোন উপায়ে এদের হাত থেকে রক্ষার অধিকার ইসরাইলের আছে, এসব বিষয়ে প্রপাগান্ডা চালানো হয়। এখন পর্যন্ত ইসরাইলি সেনারা ১২০ জন নিরস্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদকারী ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। কিন্তু ইসরাইলিরা এখানেই থেমে থাকেনি।

যখনই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাধারণ মানুষের মতামত তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া শুরু করেছে, তখনই ইসরাইলি দখলদারবাহিনী গাজায় সশস্ত্র প্রতিরোধ গ্রুপ, তাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও অস্ত্রাগার, টানেল ও সরঞ্জাম সংগ্রহের স্থানে বোমা হামলার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে। একই সাথে এদের কয়েকজন গুপ্ত হত্যারও শিকার হয়েছেন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী এসব আক্রমণের সময় কোনো বাছ-বিচার করেনি, এরা যুদ্ধক্ষেত্রের নতুন বাস্তবতায় শুধুই শক্তি প্রয়োগ করতে চেয়েছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের জবাবে তারা নৃশংস হামলা চালাতে চেয়েছে এবং ‘প্রয়োজনে’ আরো বড় ধরনের সামরিক অভিযান।

উসকানিমূলক এমন কার্যক্রমের পরই গাজা থেকে সামরিক জবাব দেয়া হয়। বেশ কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন এই অবস্থান নেয় যে, ইসরাইলকে এমন একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করতে দেয়া উচিত হবে না এবং তাদের বুঝতে হবে, তাদের সামরিক অভিযানের উচিত জবাব দেয়া হবে।

এ পর্যন্ত দেখে বোঝা যায়, আর যাই হোক ইসরাইলের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখা কঠিন। তাদের কৌশল অনুযায়ী, ‘গাজা বাঁচবেও না মরবেও না’- এই নীতি এখন আর কাজ করছে না। তারা এই ভয় পেয়ে যায় যে, ছোট ছোট অগ্রগতি ও টুকরো টুকরো সফলতা ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ মেয়াদে শান্ত রাখবে না এবং এই প্রেক্ষাপটেই ইসরাইলকে গাজায় তিনটি উপায় অবলম্বন করতে হতে পারে : পুনর্দখল, আরো একটি যুদ্ধ কিংবা দখলদারিত্ব থেকে সরে আসা।

পুনর্দখল : ইসরাইল সরকার, সেনাবাহিনী ও এলিট বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মধ্যে কট্টর ডানপন্থী কিছু মানুষ আছেন, যারা গাজা পুনর্দখলের কথা বলছেন। তাদের বিশ্বাস- এই উপত্যকায় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করলেই ঝুঁকি দূর হবে।

তারা বলছেন সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুরো গাজা উপত্যকা দখলে নিতে এবং এরপর গাজার সশস্ত্র গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে। তাদের মতে, এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর গাজাকে তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে। ওই এলাকায় মানবিক সহায়তা পরিচালনার জন্য এটা হতে পারে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অথবা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা। এসব সমাধানের ব্যাপারে যারা পরামর্শ দিচ্ছেন, তারা ভালোভাবেই জানেন যে, তারা একটা রক্তাক্ত ধ্বংসযজ্ঞের দিকে এগোচ্ছেন। নিঃসন্দেহে গাজায় ইসরাইল কঠোর প্রতিরোধের মুখে পড়বে, ফলে কয়েক শ’ না হলেও কয়েক ডজন ইসরাইলি সেনা মারা পড়বে। ইসরাইলের জন্য কালো ব্যাগে ভরা সেনাসদস্যের লাশ ফেরত নেয়ার চেয়ে বেশি বেদনার আর কিছু হতে পারে না।

গাজা উপত্যকা পুনর্দখল করলে ইসরাইলকে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত জনপদে ন্যূনতম খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। আর এটা ইসরাইল সরকারের বাজেটের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।
গাজার সাধারণ মানুষের ওপর এ ধরনের একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করলে হতাহতের যে সংখ্যা দাঁড়াবে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরাইলের নির্মম পরাজয় হিসেবেই উপস্থাপিত হবে। এমনিতেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরাইলের অপরাধ একের পর এক বেড়েই যাচ্ছে। ফলে তা সীমা অতিক্রম করে যাবে নিঃসন্দেহে, তা বলাই যায়।

একটি কথা বলে রাখা ভালো, এই অপশনটি তেল আবিবের সিদ্ধান্তগ্রহণকারী পক্ষ- সরকার, সেনাবাহিনী বা বুদ্ধিজীবী শ্রেণী কারো কাছেই খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তারা ভালোই বোঝেন, এমন পদক্ষেপের মূল্য কিভাবে পরিশোধ করতে হবে।

গণবিধ্বংসী যুদ্ধ : এ অপশনটিও গাজায় সামরিক হস্তক্ষেপের আরেকটি উদ্যোগ যা ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কেননা মনে করা হয়, উপত্যকাটি পুনর্দখলের চেয়ে এর খরচ কিছুটা কম পড়বে। গাজার নিকটবর্তী ইসরাইলি বসতিতে হামাসের সাম্প্রতিক মিসাইল হামলার জবাবে এই পদক্ষেপ ‘অতি দ্রুত নেয়া প্রয়োজন’ বলে মনে করা হচ্ছে।
‘ঘাস কেটে ছোট করে রাখার নীতি’ অনুযায়ী গাজায় কয়েক বছর পরপরই হামলা চালানো ইসরাইলের নিয়মিত কাজের একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখনই লোকবল বা সরঞ্জামাদির দিক দিয়ে হামাস সক্ষম হয়ে ওঠে, তখনই বিমান হামলা বা গুপ্ত হত্যার মধ্যদিয়ে তাদের দমিয়ে রাখার জন্য কয়েক বছরের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা বোধ করে ইসরাইল।

২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কয়েক দফা অভিযান পরিচালনার পর এখন আবারো এমন একটি অভিযান পরিচালনা করা হতে পারে। অতি দ্রুত এই পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে, তাদের এমন দৃঢ় বিশ্বাস সত্ত্বেও উচ্চপর্যায়ের জেনারেলরা এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। কারণ তারা জানেন যে, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গ্রুপগুলো ঠিকই নিজেদের সক্ষমতা পুনর্গঠন করতে পারবে এবং আবারো চার বছর আগের সক্ষমতায় ফিরে যাবে। গাজার সাথে যুদ্ধ কোনো বনভোজন নয়; কিন্তু তারা এটাকে দেখে ‘প্রয়োজনীয় ক্ষতি’ বা ‘অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ’ হিসেবে।

পরিপূর্ণভাবে সরে আসা : গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের সরে আসার এই বিকল্পটিকে দেখা হয় অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিশ্চয়তা আর ইসরাইলের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এখানে একটি সমুদ্রবন্দর বা বিমানবন্দর নির্মাণ করার বিষয়টিও এর অন্তর্ভুক্ত।

ফলে গাজার ২০ লাখ মানুষকে সমর্থনের অতিরিক্ত বোঝা হিসেবে ইসরাইলি সেনাদের ফেরত আনতে হবে। কিন্তু দেশটির নীতিগত অবস্থানের কারণে নেতারা এমন পদক্ষেপ নিতে ভয় পাচ্ছে। এর ফলে পশ্চিম তীরের মতো ইসরাইলের প্রতি ‘আনুগত্য প্রকাশ’ ছাড়াই রাষ্ট্রের আদলে একটি পৃথক ফিলিস্তিনি জাতিসত্তা গঠিত হতে পারে।

এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই যে, বাইরে থেকে অস্ত্রশস্ত্র আনার মতো কাজে হামাস এ নতুন বন্দরের সুবিধা কাজে লাগাবে না। আর তাই যদি হয়, তাহলে তা হবে সামরিক স্থিতাবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি।
যেহেতু গাজার পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরাইলি হুমকি বাড়ছে, এই তিনটি অপশনের যে কোনোটি ঘটা সম্ভব। ইসরাইল এই তিন পদক্ষেপের প্রতিটির বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতিই নির্ধারণ করবে যে, কোন ঘটনাটি আসলে ঘটবে।

লেখক : গাজার ‘উম্মাহ বিশ্ববিদ্যালয়’-এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি ও আরব গবেষণা সংস্থার খণ্ডকালীন গবেষক। আলজাজিরা, নিউ অ্যারাবিক ও দ্য মনিটরে নিয়মিত লেখেন। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ এবং হামাস সম্পর্কিত বিষয়ে ২০টিরও বেশি বই লিখেছেন। আল জাজিরা থেকে ভাষান্তর করেছেন
মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম

 


আরো সংবাদ



premium cement
গ্রিড লাইনের ত্রুটিতে সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ভুক্তভোগী নারী ও তার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের হয়রানির প্রতিবাদ বাড্ডায় নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার কথিত স্বামী পলাতক গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবে খতমে নবুওয়ত ঝিনাইদহ-১ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নায়েব আলী জাতীয় গ্রিডে ত্রু‌টি, সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিতে নিয়মিত ২০ আসন বরাদ্দ রেকর্ড গড়ে সাদিক খান আবারো লন্ডনের মেয়র আগামী ২ মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে : জিল্লুল হাকিম ফতুল্লায় ব্যবসায়ী অপহরণ, গ্রেফতার ৭ তাপদাহের কারণে গোসল করতে গিয়ে কলেজছাত্রের মৃত্যু

সকল