পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের ওমান উপসাগরে তেলবাহী দু’টি ট্যাংকারে গত বৃহস্পতিবার হামলার ঘটনায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে জ্বালানি সরবরাহ সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার জন্য চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে শনিবার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আন্তর্জাতিক নৌপথ ও জ্বালানি সরবরাহের পথ নিরাপদ করতে বিশ্বশক্তির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। দুর্ঘটনায় অশোধিত তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর আঞ্চলিক সহযোগী সৌদি আরব কর্তৃক জানানো আহ্বানেরই প্রতিধ্বনি করেন তিনি।
উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের প্রভাবের তীব্রভাবে বিরোধিতাকারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানান। তিনি বুলগেরিয়া সম্মেলনে বলেন, আমরা এখনো একটি বৃহত্তর কাঠামো অর্জনে ইরানের সহযোগিতার ব্যাপারে আশাবাদী।’
এ দিকে সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল-ফালাহ বৃহস্পতিবারের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ পরে জ্বালানি সরবরাহের বিরুদ্ধে হুমকির ব্যাপারে দ্রুত এবং চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গলফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল লতিফ আল-জায়ানিও এই আক্রমণকে জ্বালানি সরবরাহে ‘প্রত্যক্ষ হুমকি’ বলে অভিহিত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল পথকে নিরাপদ রাখার জন্য ও অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য বিশ্বশক্তিকে আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ হামলার ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনার সত্যটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ‘তাদের দেশেরও ধারণা যে, এ হামলার পেছনে ইরানের হাত রয়েছে এবং এটা প্রায় নিশ্চিত।’ এ হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর বৃহত্তম ও শক্তিশালী শাখা ইসলামী বিপ্লবী গার্ডকে দায়ী করেছে লন্ডন।
গত ১২ মে ওমান উপসাগরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ফুজাইরাহ বন্দর উপকূলে চারটি তেলবাহী জাহাজে হামলার ঘটনার পেছনেও ইরান রয়েছে বলেই দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংকার দু’টির একটি নরওয়ের মালিকানাধীন ফ্রন্ট অলটেয়ার ভাড়ায় চালাচ্ছে তাইওয়ান এবং অন্যটি জাপানের মালিকানাধীন কোকুকা কারেজিয়াস। ইথানল নিয়ে কাতার থেকে তাইওয়ানের দিকে যাওয়ার পথে নরওয়ের ট্যাংকারটিতে তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে। এটি স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৫০-এ প্রথম হামলার সময় দক্ষিণ ইরানের বন্দর-ই জসকের থেকে ২৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। পরে বন্দর থেকে ২৮ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে সকাল ৯টা ৫০-এ জাহাজে আগুন লাগার পর ২৩ জন নাবিক সাগরে ঝাঁপ দেন। পাশের একটি জাহাজ তাদের উদ্ধার করে ইরানের উদ্ধারকারী দলের হাতে তুলে দেয়। পানামার পতাকা লাগানো জাপানি একটি কোম্পানির মালিকানাধীন ট্যাংকার সৌদি আরব থেকে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিল পেট্রলিয়াম পণ্য মিথানল নিয়ে। ওই জাহাজ থেকেও ২১ জন নাবিক পানিতে লাফ দেন। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ওমান উপসাগরে তেলবাহী দু’টি ট্যাংকারে রহস্যজনক হামলার ঘটনায় সম্পূর্ণভাবে ইরান দায়ী। ‘এ হামলায় ইরান কোনোভাবে জড়িত না’ তেহরানের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তাদের মধ্যে সঙ্ঘাত বেঁধে গেলে ‘ইরান বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহ পথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে’ তেহরানের আগে বারবার দেয়া এমন হুমকিও উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালী দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল যায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অন্যান্য জায়গায়; যার একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র আরব দেশগুলো এবং অন্য পাশে রয়েছে ইরান। পৃথিবীতে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল রফতানি হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ তথা প্রতিদিন এক কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল তেল এই প্রণালী দিয়ে যায়; যা ইরানের জ্বালানি তেল রফতানির প্রধান রুট।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তাদের কাছে থাকা এমন একটি ভিডিও ফুটেজ শুক্রবার প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ইরানের টহল দেয়া নৌকাটি ক্ষতিগ্রস্ত একটি তেলের ট্যাংকারের একপাশ থেকে একটি অবিস্ফোরিত মাইন বা বোমা সরিয়ে নিচ্ছে। ভিডিও ফুটেজটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প জোরালোভাবে বলেন, ‘ওই ভিডিও ফুটেজে ট্যাংকারগুলোর একটি থেকে অবিস্ফোরিত একটি মাইন ইরানের টহল নৌযানকে সরিয়ে ফেলতে দেখা যাচ্ছে। মাইনটি জাহাজের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ইরান এটা করে। আপনারা জানেন তারাই এটি করেছে, কারণ আপনারা নৌযানটি দেখেছেন। আমি ধারণা করছি, মাইনগুলোর একটি বিস্ফোরিত হয়নি। আর এটি তাদের সরিয়ে ফেলা জরুরি ছিল। কারণে এতে ইরানের নাম থাকতে পারে। এতে প্রমাণিত হয় যে এ হামলার ঘটনায় তেহরান পুরোপুরি জড়িত। আপনারা দেখেছেন নৌযানটি রাতে মাইনটি খুলে নেয়ার চেষ্টা করছে এবং এ কাজে তারা সফলও হয়।’
তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি টুইটার বার্তায় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রমাণ ছাড়াই এ হামলার ব্যাপারে তড়িঘড়ি করে তেহরানকে দায়ী করে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা