৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে চলতি মাসেই মামলা : অর্থমন্ত্রী

-

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে চলতি মাসেই মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে মামলায় কে বা কাদের আসামি করা হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল সচিবালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে কি করণীয় সে সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকর গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী তাদের সাথে প্রায় তিন ঘণ্টারও অধিক সময় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মামলার জন্য ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এ জন্য আমাদের একজন আইনজীবী এবং আমেরিকার একজন আইনজীবী আছেন, তারা যৌথভাবে বসে মামলার সময় ঠিক করবেন।
তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে নিউ ইয়র্কে। তাই মামলা সেখানেই করতে হবে। আমাদের আইনজীবী এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। তবে কার বিরুদ্ধে কে মামলা করবেন তার সিন্ধান্ত এখনো হয়নি। এ ছাড়া কয়জনকে আসামি, কয়জনকে বাদি ও কয়জনকে সাক্ষী করা হবে তা দুই আইনজীবী বসে ঠিক করবেন।
রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ড. ফরাস উদ্দিনের তদন্ত রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের প্রয়োজন হলে করব, না হলে করব না। মামলার আগে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হলে মামলার দরকার কি? এ ছাড়া তদন্তে নেগেটিভ বা পজেটিভ কি আছে আমি কিছুই জানি না। ঢাকায় বসে কে কি কমিটি করলো, কে কি রিপোর্ট দিলো, তা নিয়ে আলোচনার জন্য এখন সঠিক সময় না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার আইনজীবী যে আমাদের পক্ষে লড়বেন তাদের কমিশন অনেক বেশি। প্রত্যেক আইনজীবীর একটি নির্দিষ্ট কমিশন থাকে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ দিকে গত ডিসেম্বরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন, রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে দুই প্রতিষ্ঠানকে আসামি করে মামলা করা হবে। তারা হলো; ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। মূল আসামি আরসিবিসি হলেও এ ঘটনার সাথে অনেক দেশ জড়িত। এ মামলার জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা এবং ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। এ ঘটনার প্রায় এক মাস পর ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে বিষয়টি বাংলাদেশ জানতে পারে। এ ঘটনা চেপে রাখতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। বড় ধরনের রদবদল করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডি এ পর্যন্ত ২০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করা হয়নি। একইভাবে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে রিজাল ব্যাংকের ওপর করা তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসপি (ব্যাংককো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপাইনস)। ফলে বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার ভেতরের অনেক তথ্যই প্রকাশিত হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার জন্য তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকেই এখন পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। যদিও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি)।

 


আরো সংবাদ



premium cement