পণ্ড প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ : ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আলটিমেটাম
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আহূত মহাসমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবিতে ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মবিরতি পালনের পর গতকাল বুধবার ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে-ট্রেনে ও লঞ্চে করে আগত হাজার হাজার প্রথমিক শিক্ষক শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ দফায় দফায় ধাওয়া-লাঠিচার্জসহ শিক্ষক নেতাদের আটক করে। এমনকি সাধারণ শিক্ষকদের টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরই মধ্যে পুলিশ দ্রুত সমাবেশ শেষ করে কর্মসূচি ঘোষণার সুযোগ দিলে শিক্ষক নেতারা, আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে মহাসমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। শিক্ষক নেতারা ঘোষণা করেন, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করবেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এর পরও সরকার দাবি মেনে নিতে গড়িমসি করলে পরে ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করবেন শিক্ষকেরা। এতেও সরকারের টনক না নড়লে শিক্ষকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালা ঝুলানোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষক নেতারা।
শিক্ষক নেতারা জানান, আগের দিন রাতে (২২ অক্টোবর রাত ৯টার পর) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেনের সাথে প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ নেতাদের প্রায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গতকাল শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস প্রদান করেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্য দূরীকরণ ও যৌক্তিক দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ করার প্রতিশ্রুতি দেন। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। অন্যথায় বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
কর্মসূচি ঘোষণার আগে সারা দেশ থেকে আগত প্রাথমিক শিক্ষকেরা খুব ভোরেই ঢাকায় প্রবেশ করতে শুরু করে। তারও আগে মাঝরাতের পরপরই কয়েক প্লাটুন পুলিশ পুরো শহীদ মিনার চত্বর কর্ডন করে রাখে এবং শহীদ মিনারের পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব ক’টি প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়। পুলিশ রাত থেকে কাউকে শহীদ মিনার এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়নি। ভোর ৬টার পর থেকে কয়েক জন করে শিক্ষকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জমায়েত বাড়তে থাকে। আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থানরত প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ শীর্ষ নেতারা সকাল ৭টার মধ্যে শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন। সাড়ে ৭টায় শিক্ষক নেতাদের এলাকা ত্যাগ করতে চাপ দিতে থাকে পুলিশ। এরই মধ্যে শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢোকার চেষ্টা করলে ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক আতিকুল রহমান আতিক এবং সিরাজগঞ্জ জেলার সহকারী শিক্ষক নেতা মাসুদ রানাকে পুলিশ তুলে নিয়ে শাহবাগ থানায় আটকে রাখে। এখানেও পুলিশ শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য লাঠি চার্জ করে এবং পুলিশের লাঠিচার্জে সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাবেরা খাতুনসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। শহীদ মিনারে জড়ো হওয়া শিক্ষকদের তাড়িয়ে দেয়া হলে তাদের একাংশ শাহবাগের দিকে অপর একটি বড় অংশ কার্জন হল এলাকা ও দোয়েল চত্বরের সামনে সমবেত হন। সকাল ৮টার কিছু পরে পুলিশ দোয়েল চত্বর এলাকায় আধা ঘণ্টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে স্থান ত্যাগ করতে শিক্ষক নেতাদের চাপ দেন। এ সময় শিক্ষক নেতাদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইসলাম তোতা, নীতিনির্ধারনী কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সরকার, সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দীন মাসুদ, প্রধান মুখপাত্র বদরুল আলম, রবিউল হাসান, কামরুল ইসলাম, সাবেরা বেগম, আব্দুল হক, আব্দুস সবুর, শিবাজী বিশ্বাস, রোজেল সাজু, আব্দুল খালেক, ওমর খৈয়াম বাগদাদী রুমী প্রমুখ বক্তৃতা দেন। শেষে শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিছুর রহমান ও ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র মো: বদরুল আলম আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্রশাসনের চাপে দ্রুত মহাসমাবেশ শেষ করার কারণে সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দোয়েল চত্বরে মহাসমাবেশের সমাপ্তির পর শহীদ মিনারের চারদিকে পুলিশের বাধায় আটকে থাকা শিক্ষকরা মিছিলসহ আবারো শহীদ মিনারে প্রবেশ করেন। এখানেও হাজার হাজার শিক্ষকের সমাবেশ ঘটে। শহীদ মিনারেও শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ আবার লাঠি চার্জ করে। পুলিশের সাথে শিক্ষকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এতে প্রায় ৩০ জন শিক্ষক আহত হন এবং চারজন শিক্ষককে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ধস্তাধস্তির পর শিক্ষকেরা শহীদ মিনার ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা