ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে এই হামলায় ছাত্রদলের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের সময় তিন সাংবাদিক হামলার শিকার হন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সাংবাদিক ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মোবাইল ও বাইক ছিনতাই করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে নূর চত্বর, হাকিম চত্বর ও টিএসসিতে কয়েক দফায় এ হামলা হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করেছেন ছাত্রদলের নেতারা। তবে এ ঘটনায় বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোনো নির্দেশনা ছিল না দাবি করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদ্য নির্বাচিত ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকার দিতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উসকানিমূলক সেøাগান দিতে থাকেন। এতে সাক্ষাৎকার প্রদান বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। পরে মধুর ক্যান্টিনের বাইরে এসে তারা সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। পরে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা টিএসসিতে আসেন। সেখানে সংগঠনটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল কর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তিনি চলে যাওয়ার পরক্ষণেই ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মী ছাত্রদলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
একাধিক সূত্র জানায়, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ স্যার এ এফ রহমান হলের আপেল মাহমুদ, জসিম উদ্দিন হলের মহসিন আলম তালুকদার, সূর্যসেন হলের যুগ্ম-সম্পাদক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম শপু, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাইসুল ইসলাম, সূর্যসেন হল সংসদের ভিপি মারিয়াম জামান খান সোহান, জগন্নাথ হল সংসদের জিএস কাজল দাস, জসীম উদ্দিন হল সংসদের জিএস ইমামুল হাসান, ঢাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক হাসান রাহাত, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক তারেক রহমান, কর্মী ধ্রুব ফকির প্রমুখ এই হামলায় অংশ নেয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, হামলার সময় রড, বাঁশের লাঠি, স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার ধরন দেখে আগে থেকেই ছাত্রলীগের প্রস্তুতি ছিল বলে ধারণা করা যায়।
হামলায় ছাত্রদলের আহত নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেনÑ সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী খোরশেদ আলম সোহেল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল সংসদে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী মাহবুবুল আলম শাহিন, ফজলুল হক মুসলিম হল সংসদে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী কার্জন মাসুম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাকিউল ইসলাম শাহীন, সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের নেতা ফিরোজ আলমসহ ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজসহ বিভিন্ন ইউনিটের ৪০ নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে সাত-আটজনের অবস্থা গুরুতর।
আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান শেষে বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিক্যালে রাখা হয়েছে বলে জানান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।
এ দিকে হামলার সংবাদ সংগ্রহকালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সদস্য আনিসুর রহমান, বিজনেস বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নুরুল আফসার এবং ক্যাম্পাসে কর্মরত রাফাতুল ইসলাম রাফির ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নুরুল আফসার তেমন গুরুতর আঘাত না পেলেও আনিসুর রহমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি আছেন। এর আগে আনিস গণমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস তাকে থাপ্পড় মারেন। সাথে সাথে তার অনুসারীরা আনিসের ওপর হামলে পড়ে। হামলার সময় আনিসুরের মোবাইল ছিনতাই করেন ছাত্রলীগের নেতারা। তবে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আশ^াস সত্ত্বেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার মোবাইল ফেরত দেয়া হয়নি।
পরে হামলার ঘটনায় বেলা সোয়া ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। তিনি বলেন, সনজিতের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের হামলায় আমাদের ৩০ থেকে ৪০ জন আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের মোবাইল ফোন ও বাইক ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। তিনি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। এটি কারো কাম্য নয়। ডাকসু নির্বাচনের পরে বিরাজমান যে পরিবেশ তা অব্যাহত রাখা সবার দায়িত্ব। কেউ যদি অছাত্রদের নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে ঝামেলা করে তার দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না। তবে যে হামলার ঘটনা হয়েছে সে বিষয়ে আমাদের ইতোমধ্যে বৈঠকও হয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি দেখবে। তিনজন সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা যে কাজ করছে সেসব কাজে যদি কেউ বাধা দেয় তবে তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তারা বলেন, ছাত্রলীগ থেকে কাউকে হামলা বা মারধরের আদেশ দেয়া হয়নি। অতি উৎসাহী কিছু ছাত্র এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা