বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর তোয়াক্কা করছে না দেশের প্রায় অর্ধশত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আইনের মূল শর্ত ‘নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অস্থায়ী অনুমোদন পাওয়ার তারিখ থেকে ন্যূনতম সাত বছরেরর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এক একর পরিমাণ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য অন্যূন দুই একর পরিমাণ নিষ্কণ্টক, অখণ্ড দায়মুক্ত জমিতে অবকাঠামো নির্মাণপূর্বক স্থায়ী নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়ে তুলে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’ আইনের এ শর্তটিই মানছে না বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
আইন অনুসারে, কেবল চ্যান্সেলর নিযুক্ত বৈধ ভাইস চ্যান্সেলরই তার মেয়াদকালে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উত্তীর্ণ ডিগ্রির সনদে সই করতে পারেন। অথচ বহু বিশ্ববিদ্যালয় চলছে বৈধ ভাইস চ্যান্সেলর ছাড়াই। ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষাকার্যক্রম চালু আছে ৯২টিতে। এই ৯২টির মধ্যে ২৩টিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত কোনো ভাইস চ্যান্সেলর নেই। প্রো ভাইস চ্যান্সেলর নেই ৭১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর কোষাধ্যক্ষ নেই ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ ওই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়া উচ্চশিক্ষা দানকারী কোনো প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। কোষাধ্যক্ষ ছাড়া কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ চিত্রকে দেশে উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে ‘হতাশাজনক’।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার অগ্রগতি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউজিসির প্রণীত বেসরকারি বিশ্বদ্যালয়গুলোর সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ ও আংশিক শিক্ষাকার্যক্রম নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাসে চালু করেছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ১৯টি। ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দুই যুগ আগে অনুমোদন পেলেও এখন পর্যন্ত নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলেনি। গত ১৬ আগস্ট ওই ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটিকে পৃথক চিঠি দিয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনুমোদিত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ দিকে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন না মানা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শুধু চিঠি দিয়েই চাপে রাখা হচ্ছে। ভোটের কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই ইউজিসির কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে।
ইউজিসির সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১০৩টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়র মধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো নিয়ম না মানার এবং আইনের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, বেসরকারি ইবাইস ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। বোর্ড অব ট্রাস্টি দুই ভাগে বিভক্ত এবং তাদের মধ্যে রয়েছে একাধিক মামলা। দ্বন্দ্ব নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইউজিসির নেয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দু’পক্ষেরই আদালতে মামলা রয়েছে।
বোর্ড অব ট্রাস্টি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
বিভিন্ন অভিযোগের কারণে সরকার ২০০৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা বন্ধ ঘোষণা করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিট পিটিশন দাখিল করলে আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টি আবার চালুর অনুমতি দেয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।
পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ঠিকানা হলো সৃষ্টিগড়, শিবপুর, নরসিংদী। আর অস্থায়ী ক্যাম্পাস ৩/২ ব্লক-এ, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি অননুমোদিতভাবে উত্তরায় ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। একইভাবে অননুমোদিত ক্যাম্পাস রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস বনানীর ‘বি’ ব্লকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি বনানীর ‘সি’ ব্লকে অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।
বিভিন্ন অনিয়মের কারণে কুইন্স ইউনিভার্সিটিও বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এক বছরের জন্য সাময়িকভাবে শর্তসাপেক্ষে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের ফের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন না মানা এবং আইনের মূল শর্ত লঙ্ঘনের ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, কমিশন তার দায়িত্ব শতভাগ পালন করে যাচ্ছে। আইন মেনে চলতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অব্যাহত চাপে রাখা হয়েছে। আইন ভঙ্গের সাথে জড়িতদের বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সচেতন হলে আইন না মানা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসময় বন্ধ হতে বাধ্য হবে। এগুলো একসময় কেবল সার্টিফিকেট বিক্রির দোকানে পরিণত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা