ঝিনাইদহের মহেশপুরের সীমান্তবর্তী ইছামতির নদীর শাখা এক সময়কার প্রমত্তা কোদলা নদীর পুরো ২৫ কিলোমিটার অংশ দখল করে নিয়েছে এলাকার প্রভাবশালীরা। সেখানে করছে মাছের চাষ, দিয়েছে পুকুর লীজও। শুধু পুকুর নয় লাগিয়েছে গাছ, গড়ে তুলেছে বসতি-পাকা স্থাপনাও।
ইছামতির শাখা এই কোদলা নদীতে দীর্ঘ ২ যুগেরও বেশী সময় ধরে এমন অবস্থা চললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসক বা ভূমি অফিসও নেয়নি কোন পদক্ষেপ।
স্থানীয়দের অভিযোগ নদীটির প্রবাহ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে ৮ থেকে ১০টি খাল-বিলের পানি ও মহেশপুর উপজেলার ১৫৬ মৌজার মধ্যে ১২৩টি মৌজার কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতায় ধানসহ কোন ফসল হচ্ছে না।
কোলাগ্রামের মুজিবর রহমান সহ কয়েকজন জানান, চৈত্র মাসে সাঁতার কাটা হতো মহেশপুরের কোদলা নদীতে। এটি একটি পুরাতন নদী কিন্তু ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকতাদের ম্যানেজ করে নদীটি এখন পুকুরে পরিণত করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ নদীকে পুকুর করায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে আবাদ হচ্ছে না। এসব জমিতে আমন, ইরি, বোরো ধানের চাষ করা হতো।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোদলা একটি সীমান্ত নদী। এটি ভারত সীমান্ত থেকে বের হয়ে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার কিছু অংশ হয়ে আবার ভারতে চলে গেছে।
মহেশপুর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড়, ন্যাপা, কাজিরবেড়, বাঁশবাড়িয়া ও যাদবপুর ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। নদীটি বাংলাদেশ সীমান্তে দৈর্ঘ্য আনুমানিক ২৫ কিলোমিটার।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, কোদলা নদীটি ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে আবার ভারতে চলে যাওয়ায় বছরের সব সময়ই প্রচুর পানি থাকতো। এখনও ভারতের মধ্যের অংশে প্রচুর পানি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমানায় দখলের পর দখল হওয়ায় নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য যে খাল আকৃতির রয়েছে সেই স্থান দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, নদীর বাঁশবাড়িয়া অংশে বেশি দখল করা হয়েছে। এই অংশে শতাধিক দখলদার বড় বড় পুকুর কেটেছেন। সেই সঙ্গে তারা নদীর মধ্যে বৃক্ষ রোপন করেছেন। যেগুলো বড় হয়ে নদীকেই আড়াল করে ফেলেছে। আর এই দখলের কারণে বেশ কিছু গ্রামের কৃষকদের চাষযোগ্য জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে তারা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারেন না।
এ ব্যাপারে গত মৌসুমে বাঁশবাড়ীয়া গ্রমের হাজারখানেক লোক নদীমুক্ত করতে মানববন্ধন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও অদৃশ্য কারণে কোন ফল পায়নি।
অন্যদিকে দখলদাররা বলছেন, পুকুর কেটে মাছের চাষ করায় এলাকার মানুষের বিশাল উপকার হচ্ছে। তারা আরো বলেন নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ চাষ করা হচ্ছে।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, নতুন খতিয়ান খুলে জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ড করে ভূমিদস্যুরা সবটুকু কোদলা নদী দখল করেছে। এই কোদলা নদী দিয়েই বেশ কয়েকটি নদী ও বিলের পানি বের হয়।
এছাড়া বড়বিল, কেউরোর বিল, ঢলঢলে বিল, তিথির বিল, পুটিমারি বিলসহ বেশ কয়েকটি বিলের পানি খালে নামে। সেই খাল থেকে পানি চলে যায় কোদলায়। আর এই গোটা এলাকায় ৫ শতাধিক গ্রাম রয়েছে। যে গ্রামের ও গ্রামগুলোর মাঠের পানি কোদলা দিয়ে নিষ্কাশন হয়ে তাকে।
চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক আরো জানান, কোদলা নদীটির প্রস্ত ১৪০ থেকে ১৫০ ফুট। কিন্তু দখলের কারণে তা কমে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ফুট আছে। কোনো কোনো স্থানে এর থেকেও কমে মাত্র ১০ ফুট দাঁড়িয়েছে। তার ইউনিয়ন এলাকাতেই বেশি দখল হয়েছে। এই এলাকাতে শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। যা স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। অবশ্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভন্ন দপ্তরে এই দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদী খননের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম জানান, নদীর জায়গা দখলের সুযোগ নেই। তবে অনেকে বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে জমি দাবি করছেন। আরএস রেকর্ড সম্পন্ন না হওয়ায় এখনই বলা যাচ্ছে না নদীর জায়গা কেউ দখল করেছে কি না।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সবুজ বললেন, নদী সরকারি সম্পত্তি এবং সিএস রেকর্ডে নদী হিসাবে আছে, কিন্তু আরএস রেকর্ড ভূমি দস্যূরা এই রেকর্ড করছে। এটি ভূমি অফিস বলতে পারবে জানিয়ে তিনি বললেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা পুকুর উচ্ছেদ করে ছোট নদী-খাল, জলাশয় পূনঃখনন প্রকল্পের আওতায় নদীটি খনন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় সব দখল হয়ে গেছে স্বীকার করে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানিয়েছেন, ম্যাপ অনুযায়ী কোদলা ভারত থেকে আসা একটি সীমান্তবর্তী নদী। ভারত সীমান্ত থেকে আসা নদীগুলো সাধারণত পানি থাকে না, আস্তে আস্তে এটি দখলমুক্ত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা