০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত

সংশয়ে রয়েছে উহানে অবরুদ্ধরা
-

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অবরুদ্ধ করে রাখা চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য চীন সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতির ভিত্তিতে বাস্তবতার নিরিখে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
উহান শহরকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ জানুুয়ারি থেকে এই শহরে ঢুকা বা বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রায় ৫০০ বাংলাদেশী উহানে আটকা পড়েছে, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গতকাল এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, চীন থেকে যেসব বাংলাদেশী দেশে আসতে চান তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা চীন সরকারের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছি। কী প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হবে তা বাস্তবতার নিরিখে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সম্মতির ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাই আমাদের মূল লক্ষ্য। দেশে ফিরতে আগ্রহীদের তালিকা প্রণয়নে আজ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।
হুবেই প্রদেশের হুয়াজং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমশিয়াত শরীফ গতকাল উহান থেকে নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী শিক্ষকরা পরিবার নিয়ে আটকা পড়েছেন। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের হয়ে বাংলাদেশীরা আদৌ দেশে ফিরতে পারবে কি না, চীন সরকার এই অনুমোদন দেবে কি নাÑ এটা নিয়ে সবাই সংশয়ে রয়েছে। তবে সুযোগ পেলে বাংলাদেশীরা দেশে ফিরতে চান।
তিনি বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উহানে বাস, ট্রেন, বিমানসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানোর ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। চীনের নাগরিকরা তাদের সরকারের নিদের্শনা মানার ব্যাপারে খুবই সচেতন। এ কারণে শহরের একটা ভুতুরে অবস্থা বিরাজ করছে। দোকান-মার্কেট সব বন্ধ। মূল সমস্যাটা হচ্ছে খাবার। অনেকের মজুদ খাবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে কিনতে পারছে না। এ অবস্থায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যান্টিনে দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে শিক্ষার্থীদের বাসে করে নির্দিষ্ট কোনো সুপার সপে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
ইমশিয়াত শরীফ বলেন, বর্তমানে চীনের নববর্ষ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটি চলছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এই ছুটিকে সরকার ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। নববর্ষের ছুটি উপলক্ষে চীনারা হয় কোথাও বেড়াতে যায় অথবা অগ্রিম বাজার করে রাখে। এ কারণে এখন পর্যন্ত খাবারের সমস্যা তীব্র হয়ে দেখা দেয়নি। খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় সরকার দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেবে বলে চীনারা বিশ্বাস করেন। উহানের চিকিৎসাব্যবস্থাকে খুবই ভালো হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য উহানে এক সপ্তাহের মধ্যে এক হাজার শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে যোগ দিতে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চীনের সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে।
বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন মাসুদুর রহমান জানান, আমরা কয়েক দিন ধরে চীন সরকারের নির্ধারিত কর্মকর্তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্যাসেফিক ব্যুরোর ডেপুটি-ডাইরেক্টরের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। হুবেই প্রদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তাও দায়িত্বে রয়েছেন। একটি নোট ভারবালের মাধ্যমে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার আমাদের সরকারের ইচ্ছার কথাটি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। চীন সরকারের মুখপাত্র সম্প্রতি বলেছেন, আটকে পড়া বিদেশীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে হতে হবে। শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সের এ-সংক্রান্ত উদ্যোগ এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ দিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা চীনে দ্রুতই বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত ৮১ জন মারা যাওয়ার খবর এসেছে। এর মধ্যে চিকিৎসাকর্মীরাও রয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের ১৩টি শহর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
এশিয়ার কয়েকটি দেশ ছাড়াও করোনা ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়েছে। হংকংয়ে সর্বোচ্চ মাত্রায় জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনায় বাংলাদেশের বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে হটলাইন খোলা হয়েছে, যার নাম্বার (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫।


আরো সংবাদ



premium cement