০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ধার করা বুট নিয়ে মাঠে নেমেছিল ইরানিরা

রাশিয়ার কাজানে অনুশীলনে ইরানি ফুটবলাররা - ছবি : এএফপি

বুধবার রাত ১২ টায় ফেবারিট স্পেনের বিরুদ্ধে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে এশিয়ার দেশ ইরান। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শেষ মূহুর্তের গোলে মরক্কোর বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিলো তারা। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রেকে হারানোর পর সেটি ছিলো বিশ্বকাপে প্রথম জয় দলটির। শেষ মূহুর্তে মরক্কোর এক ডিফেন্ডার হেড করে নিজেদের জালে বল ঢুকিয়ে জয় উপহার দেয় ইরানকে! অবশ্য ম্যাচে খেলার মানগত দিক থেকেও এগিয়ে ছিলো ইরান। অপেক্ষাকৃত ভালো দল হিসেবেই তার জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।

প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে তাই ফুরফুরে মেজাজে আজ মাঠে নামার কথা ইরান ফুটবল দলের। কিন্তু তারা কি তা পারছে? এই বিশ্বকাপ খেলতে এসে নানাবিধ ঝামেলার মুখোমুখী হতে হচ্ছে দলটিকে। আর সব সমস্যাই রাজনৈতিক। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কালো ছায়া এসে পড়ছে বিশ্বকাপের ইরান দলের ওপর। তার একটি নজির হচ্ছে, প্রথম ম্যাচে দলটির অনেক খেলোয়াড়কেই ধার করা বুট পরে মাঠে নামতে হয়েছিলো। কিন্তু কেন?
বিশ্বকাপে ইরান ফুটবল দলের বুট বা জুতোর স্পন্সর বিখ্যাত ক্রীড়া সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নাইকি; কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিটি শেষ মূহুর্তে বেঁকে বসে ইরান দলকে জুতা সরবরাহ করার বিষয়ে। ম্যাচের মাত্র একদিন আগে নাইকি এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইরান দলকে বুট সরবরাহ করবে না। কারণ হিসেবে বলা হয়, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কথা।

২০১৫ সালে ইরানের সাথে ছয় জাতির পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের ঘোষণার (৮ মে) দিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যদিও ছয় মাসের সময়সীমা পূর্তিতে এখনো পাঁচ মাস বাকি। তাই নাইকি হয়তো ইচ্ছে করলে ইরানকে বুট সরবরাহ করতে পারতো। এর আগে ২০১৪ বিশ্বকাপে নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকা অবস্থাতেও ইরানকে বুট সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি; কিন্তু এবার তারা বেঁকে বসেছে খেলার মাত্র একদিন আগে।

বাধ্য হয়ে ইরানি খেলোয়াড়দের বিকল্প পথে বুট ম্যানেজ করতে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। সাধারণত যে ধরনের বুট পরে তারা খেলতে অভ্যস্থ তার বাইরে নতুন করে অন্য কোন ব্রান্ডের বুট পরে বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামাও কষ্টকর। ইরান দলের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইএসপিএন জানিয়েছে, এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ইরানি খেলোয়াড়দের অনেকে তাদের ক্লাব পর্যায়ের ভিনদেশী সতীর্থদের দারস্থ হয়েছেন। অনেকে তাদের কাছ থেকে নাইকির বুট ধার করেছেন। কেউ কেউ তাদের বন্ধুদের শরণাপন্ন হয়েছেনে, কেউ রাশিয়ার কোন শপিং মলে গিয়ে কিনে নিয়েছেন বুট।

শুধু এটি নয়, রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে রাশিয়ায় আরো অনেক সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে ইরান ফুটবল দলকে। ইরানি ফুটবলাররা সাধারণত জার্মানির ক্রীড়া সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসের জার্সি পরেন; কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি ইরান দলকে স্পন্সর করে না, তাই ইরানি ফুটবল ফেডারেশনকে বিশ্বকাপের আগে জার্সি কিনে নিতে হয়েছে অ্যাডিডাসের কাছ থেকে। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে যা বিরল ঘটনা। ইরান দলকে স্পন্সর না করার পেছনেও রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ইউরোপের দেশ জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র।

বিশ্বকাপের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ ইরানকে বাতিল করতে হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। একেবারে শেষ মূহুর্তে গ্রিসের সাথে তাদের প্রস্তুতি ম্যাচটি বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া রাশিয়া হোটেল বুকিং, ফ্লাইটের টিকিট বুকিংসহ অর্থ লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে ইরান দলকে সমস্যায় পরতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সাথে অর্থ লেনদেন করতে চায় না অনেক প্রতিষ্ঠান। তবু সব সমস্যা জয় করেই ইরান প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে। বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচেও তারা স্পেনকে রুখে দিতে চায়।

আরো পড়ুন :  আফ্রিকান হুঙ্কার দিচ্ছে সেনেগাল!
ঝড়ের ইঙ্গিত কি মিলতে শুরু করল? ফিরে আসছে সেই ২০০২ সালের বিশ্বকাপে আফ্রিকান সিংহের হুঙ্কার ? পোলান্ডকে দুমড়ে দেয়ার পরই ফের সেনেগালকে ঘিরে এমনই প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে৷ ১৬ বছরের পর ফের শিরোনামে সেনেগাল৷ প্রথম শুরুতেই জয়৷ যেমনটা হয়েছিল জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের আসরে৷ ফরাসিদের ঝকমকে ফুটবলের গতি রুদ্ধ করে দিয়ে বড়সড় অঘটন ঘটায় সেনেগালিরা৷

২০০২ সালটি সেনেগালের ক্রীড়া ইতিহাসে সর্বাধিক সোনালি বছর হিসেবেই বিবেচ্য হয়ে আসছে৷ সেই বছরেই আফ্রিকা কাপ অফ নেশনসে রানার্স হয় দেশটি৷ তারপরেই বিশ্বকাপের আসরে আচমকা সেনেগালের দুরন্ত গতির ঝলক৷ সেই ধাক্কায় ১-০ গোলে হেরেছিল ফ্রান্স৷

সেই শুরু, গ্রুপ পর্বের পরপর খেলায় গোলের বদলা গোল করেই প্রতিপক্ষকে জবাব দিয়েছিল সেনেগাল৷ ডেনমার্কের সঙ্গে ১-১ এবং উরুগুয়ের মতো দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে ৩-৩ গোলে সমতা বজায় রেখেই বারবার শিরোনামে এসেছিল দেশটি৷ দ্বিতীয় পর্বেও সেই আফ্রিকান সিংহের হুঙ্কার ছিল মাঠময়৷ সুইডেনকে ২-১ গোলে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালের রাস্তা পরিষ্কার করে নেয় সেনেগাল৷ সেই মুহূর্তে আফ্রিকার রঙে রঙিন বিশ্বকাপের আসর৷
কিন্তু ঝড়কেও একসময় গতি হারিয়ে মিলিয়ে যেতে হয়৷ সেই ধারা বজায় রেখেই কোয়ার্টার ফাইনালেই তুরস্কের কাছে পরাজিত হয় আফ্রিকার দেশটি৷

ততদিনে বিশ্বজুড়ে সেনেগালের মারাত্মক উপস্থিতি ঘিরে চমক লেগেছে৷ দেশে ফিরে বিপুল সংবর্ধনায় আপ্যায়িত করা হয় ফুটবলারদের৷ বিশাল সেই সাফল্য পরবর্তী সময়ে কর্পূরের মতোই উবে গিয়েছিল৷ এক দশকের বেশি সময় পার করে আবারও বিশ্ব ফুটবলের আসরে এসেছে দেশটি৷ আর শুরুতেই সেই পুরনো চমক৷


আরো সংবাদ



premium cement