২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ঢাকা-৫ আসনের একটি কেন্দ্র শহীদ জিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। যাত্রাবাড়ীর এ বিদ্যালয়ে পুরুষ ও নারী ভোটারদের জন্য পৃথক দুটি কেন্দ্র করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার দুই হাজার ১৬০টি ও নারী ভোটার ৩ হাজার ৩৯২টি। নীচ তলা থেকে চার তলা পর্যন্ত ১১টি বুথ কক্ষে একযোগে ভোট নেয়া হচ্ছে।

বিকেল তিনটায় গিয়ে সেখানে দেখা যায়, ভোট কেন্দ্র পুরোটাই ফাঁকা। নৌকার এজেন্ট ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর এজেন্ট নেই। তখন পর্যন্ত ওই দুই কেন্দ্রে ৪০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে বলে জানান পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার একে এম মাইনুল হক। তার মতে, ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধানের শীষের প্রার্থীর কোনো এজেন্ট আসেননি। তাদের এজেন্ট ছাড়াই সকাল থেকে ভোট চলছে। তবে ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হচ্ছে।

দেখা যায়, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও নৌকা মার্কার এজেন্টদের কেউ কেউ ঝিমাচ্ছেন। ফাঁকা কেন্দ্রেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জোরদার। প্রবেশ পথে ও ভেতরে পুলিশ ও আনসারবাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তা। কেউ কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে তারা অনেকটা অস্বস্তিবোধ করছেন। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, প্রিসাইডিং অফিসার স্কুলের নীচতলায় দাঁড়িয়ে পুলিশের সাথে গল্প করছেন। তার নির্ধারিত কক্ষটি বন্ধ থাকলেও কোনো তালা দেয়া নেই। সেখানেও পুলিশের কঠোর তদারকি। সাংবাদিক শুনলেই চমকে উঠেন। ভেতরে দেখার কোনো উপায় নেই, সেখানে কি হচ্ছে। নীচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত একই চিত্র। পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যে সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে। কজন পুলিশ সদস্য এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সারাক্ষণ ছিলেন। তাদের আচরণ পুরোটাই রহস্যঘেরা। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য রফিক বলেন, এটা ওপরের নির্দেশ আছে।

শহীদ জিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের কেন্দ্রের নাম শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। পৌনে তিনটায় গিয়ে ওই কেন্দ্রের চিত্র একই রকম দেখা যায়। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ব্যাপক তৎপরতা। ভেতরে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারি। সাংবাদিক শুনলেই অস্বস্তিবোধ করছেন দায়িত্বরত সকলেই। ওই কেন্দ্রে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট নেই।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মৃণাল কান্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, ৪টি বুথ কক্ষে ভোট নেয়া হচ্ছে। এখানে ২ হাজার ১৫৬টি ভোট রয়েছে। তখন পর্যন্ত ভোট পড়েছে এক হাজার। ভোট কেন্দ্র থেকে বের হয়ে গেটে আসামাত্র দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা প্রিসাইডিং অফিসারকে ডেকে তাকে শাসাচ্ছেন- এটা সহজেই বোঝা যাচ্ছিলো।

এরআগে সকালে ঢাকা-৪ আসনের শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে প্রিসাইডিং অফিসার বাচ্চু মিয়া গেটে এসে পরিচয় দেয়ার পর ভেতরে নিয়ে যান। কিন্তু তার নির্ধারিত কক্ষটি বন্ধ থাকলেও তালাবদ্ধ ছিল না। সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। তবে সেখানে প্রিসাইডিং অফিসারের অনুপস্থিতে কি করছেন তা বোধগোম্য নয়। বিভিন্ন বুথ ও কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ধানের শীষের কোনো এজেন্ট নেই। প্রিসাইডিং অফিসার বাধা প্রদান প্রসঙ্গে বলেন, ওপরের নির্দেশ আছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

পাশের কটন মিলস আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়সহ প্রায় সব কটি কেন্দ্রে একই চিত্র দেখা যায়। বাইরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপক তৎপরতা। প্রশাসন কড়া নিরপত্তায় ভোট নিচ্ছেন। কিন্তু ভেতরে তার উল্টো চিত্র। ধানের শীষের এজেন্ট থেকে শুরু করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।


আরো সংবাদ



premium cement