০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সালমা ইসলামের অভিযোগের ব্যাপারে যা বললেন সালমান এফ রহমান

সংবাদ সম্মেলনে সালমা ইসলাম ও তার স্বামী নুরুল ইসলাম বাবুল এবং ডানে সালমান এফ রহমান - ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সালমান এফ রহমানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সালমা ইসলাম ভোট বর্জন করেছেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন প্রতিপক্ষ সালমান এফ রহমানও। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন :

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরগাড়ি প্রতীকের অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি ভোট জালিয়াতির অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছেন। আজ রোববার দুপুর ১২টায় নবাবগঞ্জ উপজেলার কামারখোলায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
এ সময় সালমা ইসলাম তার কর্মীদের ওপর হামলা, পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, জাল ভোট প্রদানসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। একই সাথে অবিলম্বে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে এ আসনে আবারো নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোববার দুপুর ১২টায় নবাবগঞ্জ উপজেলার নিজ বাড়ী কামারখোলায় এক সংবাদ সম্মেলনে সালমা ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

নুরুল ইসলাম বলেন, আজ ৩০ ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির লোক। আমার প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র হলেও তিনিও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির লোক।

তিনি আরো বলেন, ঢাকা-১ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সালমান এফ রহমান। এ আসনে নির্বাচনী প্রচারে আমার প্রার্থী কখনই সমান সুযোগ পায়নি। নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই প্রতদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নিজস্ব বাহিনী দ্বারা আমার প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ কর্মীদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট অব্যাহতভাবে চালিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনী মাঠে ছিলাম। কিন্তু গত তিন দিন ধরে সেই পরিস্থিতি অসহনীয় ও অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে।

নুরুল ইসলাম বাবুল বলেন, আজ নির্বাচনের দিনও তার প্রভাব বিস্তার দেখা গেছে। এ আসনে (নবাবগঞ্জ-দোহার) ১৭৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১৫০ কেন্দ্রেই মোটরগাড়ি প্রতীকের কোনো এজেন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাকি কেন্দ্রগুলোতে যেসব এজেন্ট যেতে পেরেছিলেন, তাদের বেলা ১১টার মধ্যেই জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এজেন্টবিহীন মোটরগাড়ি প্রতীকের নির্বাচন অব্যাহত রাখা কীভাবে সম্ভব?

নুরুল ইসলাম বলেন, যেহেতু পরিবেশ অনুকূলে নেই, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারছে না এবং ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে এজেন্ট খুঁজে পাচ্ছে না-তাই এ নির্বাচনে থাকা না থাকা সমান কথা।

তিনি আরও বলেন, এখানের নির্বাচন বিতর্কিত না করলেও হতো। কারণ, আমরা দুজনই আওয়ামী লীগ। একজন নৌকা মার্কা আরেকজন মোটরগাড়ি মার্কার। আমরা গত নির্বাচনে মহাজোটে ছিলাম। এবারও যদি পাস করতাম তাহলে আওয়ামী লীগেরই হতো এ আসন। আর নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থীর পাস করা সমস্যা ছিল না। আমার ধারণা, যদি ৫০ ভাগও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো তাহলে আমরা অন্তত ১ লাখ ভোট বেশি পেয়ে পাস করতাম।

নুরুল ইসলাম বলেন, আমি জানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ভালো জানেন। আমিও সবসময় তার অবস্থান সম্মানের সঙ্গে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সেই সম্মান এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির প্রতি আমার অকুণ্ঠ সমর্থন আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

‘কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আমার মোটরগাড়ি প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে আর নির্বাচন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই চলমান এ নির্বাচন থেকে আমি আমার প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, আমার প্রার্থী স্বতন্ত্র। শুনেছি বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট আমার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। এ ধরনের সমর্থন যেকোনো প্রার্থীর অবস্থান শক্তিশালী করে। কিন্তু আমি কারও সমর্থন চাইতে যাইনি। কারও সমর্থনেরও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ আমার প্রার্থীর এলাকায় নাম, সম্মান, উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তা সবদিক থেকেই ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাছাড়া যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, তাদের সমর্থন আমার প্রার্থী কেন নিতে যাবে?

গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে নুরুল ইসলাম বলেন, আমি এ সংবাদ সম্মেলনে যে তথ্য উপস্থাপন করলাম, আপনাদের গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রতি আহ্বান করছি-আপনারা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে যান, পর্যবেক্ষণ করুন। আমার এ তথ্য উপস্থাপনের সঙ্গে বাস্তবতার মিল আছে কিনা-এটি আপনাদের বিবেকের ওপরই ছেড়ে দিলাম।

এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম, পরিচালক (অর্থ) আবদুল ওয়াদুদ প্রমুখ।

নিশ্চিত পরাজয় জেনেই নির্বাচন নির্বাচন বর্জন করেছে সালমা : সালমান এফ. রহমান
এদিকে, ঢাকা জেলা দক্ষিণ সংবাদদাতা ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে মোটরগাড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের ভোট বর্জন করা সম্পর্কে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সালমান এফ. রহমান বলেছেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সালমা ইসলাম নির্বাচন থেকে বর্জন করেছে।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এ আসনের কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটারদের বাধা দেয়া হয়নি। সকাল থেকেই ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করেছে। কাউকে জোর করা হয়নি। মোটরগাড়ির কর্মিরাও ভোট দিয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পর যখন তিনি দেখেন পরাজয় অবধারিত তখনই তারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। এটা হাস্যকর বলে অভিহিত করেন।

এসময় সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নির্বাচনী প্রচারে কখনই সমান সুযোগ পায়নি, নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নিজস্ব বাহিনী দ্বারা আমার প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ কর্মীদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট, কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা সম্পর্কে স্বামী যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাবুলের মন্তব্য সম্পর্কে সালমান বলেন, আপনারা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন। কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা? আমার কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য জানা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement