এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় ছাত্রলীগের দুইপক্ষ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, রড, রিভালভার, হকিস্টিক, ইটসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও আল বেরুনী হলের মধ্যে সঙ্ঘটিত এই সংঘর্ষের সময় দুই রাউন্ড গুলিও ছোড়া হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল চত্বর ও মুন্নি সরণী এলাকায় রাত এগারটা পয়ঁতাল্লিশ থেকে একটা পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষে ছাত্রলীগের প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া পুরো ক্যাম্পাস ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় চলমান ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
এদিকে এ হামলার ঘটনায় মীর মশাররফ হোসেন হলকে দায়ী করে আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে হামলার বিচারের দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনে তালা দেয় তারা। আল বেরুনী হল ছাত্রলীগের দাবি তাদের উপর ‘সন্ত্রাসী’র মত বর্বোরোচিত হামলা করা হলেও প্রশাসন নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবিতে চলমান ভর্তি পরীক্ষা প্রতিহত করতে জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনে তালা দেয় তারা।
বুধবার সারাদিনই জীববিজ্ঞান অনুষদের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার থাকলেও পরীক্ষার নির্ধারিত স্থানে আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ তালা দেয়ায় পরীক্ষার প্রশ্ন আটকা পড়ে। এছাড়াও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ভর্তি পরীক্ষার্থীদেরকে পুরাতন কলা ও বিজনেস অনুষদে ভবনে ঢুকতে না দিয়ে পথবন্ধ করে দেয় আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ। ফলে পরীক্ষা নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ার পাশাপাশি সারাদেশ থেকে আসা পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভোগান্তির শিকার হন।
এপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা ও সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা ও আক্রমণকারীদের সনাক্ত করে দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেয়ার পর অবরোধ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যেই পরীক্ষার নির্ধারিত সময় আধাঘন্টা পার হয়ে গেলে সিডিউল ভেঙে নয়টার পরীক্ষা সাড়ে নয়টায় শুরু হয়। এ কারণে সারাদিনের পাঁচটি সিডিউলের পরীক্ষাই আধা ঘণ্টা করে পিছিয়ে দেয়া হয়।
সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী মোড়ে অবস্থিত শাখা ছাত্রলীগের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ক ‘শেখ জামাল তথ্য সহায়তা কেন্দ্র’ থেকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৫ ব্যাচের দুই ছাত্রলীগকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে ইভটিজিং করে। তখন ছাত্রীটি মুঠোফোনে আল-বেরুনী হলে থাকা তার বন্ধুদের জানালে আলবেরুনী হলের ৪৬ ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মীর কাছে ইভটিজিংয়ের কারণ জানতে চান। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত দুইজন ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করে। এতে তারা আহত হয়ে পড়লে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে রাত বারোটার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পাল্টা হামলা চালালে উভয় হলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় মুন্নি চত্ত্বর, চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের সময় উভয় হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, রড, রিভালভার, হকিস্টিক, ইট, বোতলভাঙ্গা ব্যবহার করে। এসময় প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলিও ছোড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে দুই হলের প্রায় ৫০জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হয় বলে জানান চিকিৎসক আবু জাফর মো.সালেহ। আহত ৫০ এর মধ্যে ৪৫ জনই আল বেরুনী হলের। গুরুতর আহত নয় জনকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল থেকে উন্নত চিাকৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে সংঘর্ষ শেষে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী খালিদের মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রটারীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এ বিষয়ে মীরমশাররফ হোসেন হল গেইটের এক নিরাপত্তাপ্রহারী বলেন,‘রাতে ৩০-৪০জন ছাত্রলীগকর্মী উত্তেজিত অবস্থায় ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প এবং লাঠি নিয়ে বের হয়।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা বলেন,‘সাধারণ একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এমন অভ্যন্তরীণ কোন্দল মোটেই প্রত্যাশিত নয়। ছাত্রলীগ ভর্তিপরীক্ষা উপলক্ষ্যে অনেক ইতিবাচক কাজ করলেও সংঘর্ষের মাধ্যমে যারা আমাদের অর্জন ও কর্মকে মলিন করছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে সাংগঠনিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে অন্য এক ঘটনায়,গত সোমবার রাত এগারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা চত্বরে মওলানা ভাসানী হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল ছাত্রলীগের মধ্যে হাতাহাতি, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা