২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পুঁজিবাজারে ধস

বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় উদ্যোগ নিন

-

২০১৯ সালজুড়ে পুঁজিবাজারে টানা পতনের পর নতুন বছরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই ভয়াবহ ধস নেমেছে পুঁজিবাজারে। পরিস্থিতি এমন, ২০১০ সালের ধসের পর এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় শেয়ারবাজার। কেবল গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে এক লাখ কোটি টাকা। অব্যাহত দরপতনে দেশের দুই বাজারের সব সূচক নেমে গেছে ভিত্তি পয়েন্টের নিচে। পতন থামবে কি না তা কারো জানা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের যেভাবে দরপতন চলছে, তা অযৌক্তিক। ভালো কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামের যেভাবে দরপতন ঘটছে, এর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এই মুহূর্তে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে না এলে অবস্থার উন্নতি হবে না।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সোমবার লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি ৮৯ পয়েন্ট কমে নেমে আসে ৫৬ মাস আগের অবস্থানে। তবে সূচক প্রায় পাঁচ বছরের কম হলেও বেশির ভাগ শেয়ারের দাম ৯ বছর আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের অবস্থান হয় চার হাজার ১২৩ পয়েন্ট। মঙ্গলবার ফের ৮৭ পয়েন্ট কমে সূচকের। এতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ৪০৫৫ ভিত্তি পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে সূচক। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ১৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। গত মঙ্গলবার দিনশেষে তা নেমে আসে তিন লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়।
প্রতিদিন বাজার পতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি প্রায় নিঃশেষিত। এ ছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তাদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, যা গত বছর কমে হয় সাত হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। এই দুই বছরেই বিদেশীরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন অনেক বেশি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অদক্ষতা, বাজারে সুশাসনের অভাব, ডিএসইর এমডি নিয়োগে জটিলতা ইত্যাদি বিষয়গুলোও পুঁজিবাজারকে গভীর খাদে নামানোর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের যে চেহারা, তার সাথে পুঁজিবাজারের বৈপরীত্য দৃশ্যমান। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নানা উদ্যোগ নিয়েও বাজারের ন্যূনতম স্থিতি ধরে রাখতে পারেনি। কারণ, সরকারের আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার ভালো হবে, হচ্ছে, এমন প্রতিশ্রুতি শুনে লাখ লাখ মানুষ বাজারে বিনিয়োগ করে এখন প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
একটি দেশের অর্থনীতি কেমন তা যাচাইরের অন্যতম একটি নির্দেশক হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার ভালো না মন্দ এর ওপর অকেনখানি নির্ভর করে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেশের বর্তমান অর্থনীতি কেমন তা সহজেই অনুমেয়। একই সাথে পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভর করে বিদেশী বিনিয়োগ। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সাধারণত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সূচক ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির তথ্য পর্যালোচনা করেন। বর্তমানে শেয়ারবাজারের যে অবস্থা, তা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে খারাপ বার্তা পৌঁছাচ্ছে।
অতীতে যখন বাজারে অস্থিরতা দেখা দিত, তখন বিনিয়োগকারীরা পুঁজি রক্ষায় ভালো মানের কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন। এবার ঘটছে ঠিক উল্টো। সাম্প্রতিক দরপতনে ভালো মানের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বর্তমান বিএসইসির সময়কালে বাজারে সবচেয়ে বেশি বাজে কোম্পানি এসেছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর আস্থা পুরোপুরি হারিয়েছেন।
২০১১ সাল থেকে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব পালন করলেও বাজারের উন্নতি তো দূরের কথা, স্বাভাবিক অবস্থাও ধরে রাখতে পারেনি। এ জন্য এই মুহূর্তে বিএসইসির পুনর্গঠন ছাড়া বাজারের এ পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। ২০১০ সালে ধসের পর স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকের কাজটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় কয়েক শ’ লোকের হাতে এখনো শেয়ারবাজারের লেনদেনের নিয়ন্ত্রণ রয়ে গেছে। পুঁজিবাজর চাঙ্গা করতে হলে বিএসইসির শীর্ষ পদে অত্যন্ত দক্ষ, সৎ ও আইন প্রয়োগে আপসহীন ব্যক্তিকে বসাতে হবে, যিনি শেয়ারবাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোটারি স্বার্থ ভাঙতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement