নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা দরকার
- ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে পুড়ে এক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৩৫ জন। প্লাস্টিকের কারখানা সব সময়ই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে আগুনের জন্য। এর কাঁচামাল এবং এতে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ উচ্চ দাহ্য পদার্থ। আগুনের সামান্য সংস্পর্শে এলে মুহূর্তের মধ্যে এগুলোতে আগুন ধরে যায় এবং ছড়িয়ে পড়ে বিদ্যুৎবেগে। অন্য দিকে প্লাস্টিক পণ্যে লাগা আগুন নেভানো অনেক কঠিন। তাই যেকোন দাহ্য পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময় বাড়তি নিরাপত্তা সতর্কতা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় উপর্যুপরি বেশ কিছু আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর প্রতিকারের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা নেয়া হয়নি। কেরানীগঞ্জের ঘটনাটি আবারও আমাদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা হয়ে এসেছে। বাংলাদেশে এখন অসংখ্য প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। এগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে হবে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ওই প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে গত বুধবার বিকেলে। ৪টা ১০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত। এই সময় ১০-১৫ জন দৌড়ে কারখানা থেকে বের হন। আটকা পড়ে যান ৫০ জনের মতো শ্রমিক। কয়েকজন জ্বলন্ত অবস্থায় কারখানা থেকে দৌড়ে বের হন। আগুন লাগার ২০ মিনিটের মধ্যে ফায়ার ব্রিগেড আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। ফায়ার ব্রিগেডের ১০টি ইউনিট প্রায় সোয়া ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে সফল হয়। আহতদের সবাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের শরীরের শত ভাগ পুড়ে গেছে। দু’জনের পুড়ে গেছে ৯০ শতাংশ শরীর। অন্যদের ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে। আহতদের প্রায় সবার শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
কারখানাটিতে কাজ করেন ২০০ শ্রমিক। এর যে ইউনিটে আগুন লেগেছে, সেখানে শ্রমিকের সংখ্যা ৮০ জন। খবরে জানা যাচ্ছে, এ কারখানায় বারবার আগুন লেগেছে। এর আগে আগুন লাগলে কারখানার মালিক উধাও হয়ে যান। এবারও মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় আগুন লেগে ৭০ জন নিহত হয়। সেখানে আগুন লাগা এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণ উচ্চ দাহ্য পদার্থ। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে রয়েছে ছোট ছোট প্লাস্টিক কারখানা; রয়েছে উচ্চ দাহ্য পদার্থের গুদাম। ভয়াবহ এসব ঘটনা আমাদের জন্য কোনো শিক্ষা নিয়ে আসেনি। ফলে বারবার একই ধরনের দুর্ঘটনা সহজে ঘটতে পারছে।
বাংলাদেশ পুরোটাই এখন প্লাস্টিকে সয়লাব হয়ে গেছে। প্লাস্টিকের হাজারো পণ্যে বাজার ছেয়ে গেছে। মাছের বাজার থেকে ভারী কলকব্জার ব্যাগ পর্যন্ত প্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্য পচে-গলে মাটির সাথে মিশে যায় না। ফলে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয়কর। ঢাকার জলাশয় ও নদীগুলোকে বলতে গেলে প্লাস্টিক বর্জ্য ধ্বংস করে দিয়েছে। একবার প্লাস্টিক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল; কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেটি খুব একটা কাজে লাগেনি। আর প্লাস্টিক কারখানায় যে ধরনের নিরাপত্তা গ্রহণ করার কথা, সেটি তারা গ্রহণ করছে না। ফলে অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকরা প্রাণ হারাচ্ছেন। আমরা পরিবেশগত কারণে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন সীমিত করার আহ্বান রাখব। আর যদি কারখানাগুলো চলে, তাহলে এগুলোর অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। কেরানীগঞ্জের ঘটনাটি নিয়ে পূর্ণ একটি তদন্ত হোক। তার ভিত্তিতে সুপারিশমালা তৈরি হোক, যা অন্যান্য প্লাস্টিক উৎপন্নকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা