২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চট্টগ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা দরকার

-

গ্যাসজনিত বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠছে। মাত্র ক’দিন আগেই রাজধানীর রূপনগরে গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মারা গেছে ছয় নিষ্পাপ শিশু। বিস্ফোরণ ঘটছে বাসাবাড়িতে, গাড়িতে, কলকারখানায়, রাসায়নিক গুদামে। মারা যাচ্ছে পথচারী, শিশু, গৃহিণী, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ, গত রোববার চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় একটি পাঁচতলা ভবনে আকস্মিক বিস্ফোরণে মারা গেছেন সাতজন। আহত ১৭ জন। সকাল ৯টায় কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের ‘কুঞ্জমনি’ ভবনে এ ভয়াল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাঁচতলা ভবনের নিচতলা এবং ভবনের একাংশের দেয়াল ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, তাদের বেশির ভাগই পথচারী। আহতদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষিকা, একজন গৃহিণী, একটি শিশু ও একজন শ্রমিক এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের সময় ১৬ ফুট চওড়া ওই সড়কে অনেক মানুষ আর রিকশা ছিল। বিস্ফোরণে ভবনের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে রাস্তায় মানুষের ওপর পড়ে। ভাঙা দেয়ালের টুকরো ছুটে গিয়ে মানুষের মাথায় আঘাত করেছে।
গ্যাস লাইনের পুরনো পাইপের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেই বাড়ির গৃহিণী সন্ধ্যা নাথ (৪০) বলেছেন, সকালে পূজার ঘরে গিয়ে মোমবাতি ধরাতে ম্যাচের কাঠি জ্বালানোর সাথে সাথেই বিস্ফোরণ ঘটে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গ্যাস লাইনের ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। তবে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করেছেন, ‘গ্যাস লাইনে কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি’। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ কোম্পানির এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাস লাইনে ত্রুটি থাকার ‘কোনো প্রমাণ তারা পাননি।’ দ্বিতীয় যে কারণে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে সেটি হলো, ভবনের সেপটিক ট্যাংকে জমে ওঠা গ্যাস। সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি সিডিএ’র নিয়ম ও বিধি মোতাবেক নির্মাণ করা হয়নি। তিনি বলেন, যথাযথ ডিজাইন না হলে সেপটিক ট্যাংকে বিপজ্জনক গ্যাস জমে যায়। ট্যাংকের পাশে কিচেন, গ্যাসের রাইজার। অবশ্য এগুলো সবই অনুমান মাত্র। সেপটিক ট্যাংকে সত্যিই গ্যাস জমেছিল কি না, কিংবা সেই গ্যাসে এতটা শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটা সম্ভব কি না, তা জানা যাবে কেবল সুষ্ঠু তদন্তের পর।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করব, সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে এবং অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। বলা দরকার, গ্যাস লাইনের ত্রুটির বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্মকর্তারা যে দাবি করেছেন, সেটিও তদন্ত করেই বলতে হবে। তদন্ত ছাড়া কারো বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। সেপটিক ট্যাংক যদি নিয়ম না মেনে বানানো হয়ে থাকে, তাহলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। কারো গাফিলতির কারণে প্রাণহানির ঘটনা চলতেই থাকবে তা মেনে নেয়া যায় না। অতীতে এ ধরনের অনেক ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে খুবই কম। আর এই দায়মুক্তির অপসংস্কৃতির কারণেই অহরহ এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর দৃশ্য আমাদেরকে দেখতে হচ্ছে। চট্টগ্রামের ঘটনা যেন একইভাবে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে না যায়, সেই নিশ্চয়তা চাই সর্বাগ্রে।


আরো সংবাদ



premium cement