২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কঠিন চ্যালেঞ্জে পোশাক খাত

প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ

-

বাংলাদেশে তৈরী পোশাক খাত বিগত বছরগুলোতে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক সহায়তা করেছে। তখন আমরা পোশাক খাতকে পেয়েছি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে। সেই সাথে এটি দেশের নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রধান খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই ২০১৩ সালেই প্রধানত নারী শ্রমিকদের শ্রমের সুবাদে আমরা আয় করতে সক্ষম হই ১৯০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা। তৈরী পোশাক হয়ে ওঠে আমাদের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত। সর্বাধিক পোশাক রফতানিকারক দেশ চীনের পরই হয় আমাদের অবস্থান; কিন্তু আজ আর সে অবস্থা নেই। মাঝে মধ্যেই খবর পাই অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমনকি শ্রমিকদের পাওনা না মিটিয়েই হুট করে মালিকরা এসব কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আজ আমাদের তৈরী পোশাক খাত।
পোশাক শিল্পকারখানার মালিকরাও যেন আমাদের এই শিল্প খাতে বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখন ভিয়েতনাম। গত কয়েক বছরে এ খাতে দেশটির উত্থান চোখে পড়ার মতো। পোশাক খাতের বড় রফতানিকারক চীনের শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় সে দেশ থেকে উদ্যোক্তারা ভিয়েতনামে কারখানা সরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে সেখানকার সবচেয়ে বড় শিল্পকারখানাটি একজন বাংলাদেশীর। যদিও এই কারখানা স্থাপনের মূলধন বাংলাদেশ থেকে যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ডপত্রে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। শুধু ভিয়েতনামেই নয়, বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের একটি শ্রেণী এখন মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আফ্রিকায়ও বিনিয়োগ করছে। এ ক্ষেত্রে ইথিওপিয়া অনেকের কাছে প্রথম পছন্দ। এ খাতের অন্যতম কাঁচামাল তুলা ও যন্ত্রপাতি প্রায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা এখন বিদেশমুখী বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই আমদানিনির্ভরতা কমাতে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিইনি বলে আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ভিয়েতনামকে যুক্তরাষ্ট্র তৈরী পোশাক খাতে শুল্ক সুবিধা দিচ্ছে। এ কারণে দেশটির পোশাক রফতানি গত কয়েক বছরে বেশ বেড়েছে। ২০১৭ সালের বিশ্ববাজারে ভিয়েতনামের এ খাতে বাজার অবদান ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ; ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ সালে বিশ্ববাজারে তৈরী পোশাক খাতে বাংলাদেশের অবদান ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে। কয়েক বছর ধরে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবদান কমে আসছে। বাংলাদেশে লোকসানি পোশাক কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। বন্ধ হচ্ছে বিপুল কারখানা। বেকার হচ্ছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে তৈরী পোশাক শিল্পকারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাত বিশাল চাপের মুখে আছে। রফতানি ক্রমেই কমছে। আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছি। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে; কিন্তু বাংলাদেশের টাকা একই জায়গায় রয়েছে। তা ছাড়া ভিয়েতনাম ও ইথিওপিয়ায় পোশাক খাতের উন্নয়নের কারণ হচ্ছে এসব দেশ উদ্যোক্তাদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।
তৈরী পোশাক শিল্প খাত অস্তিত্ব হারানোর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ নানামুখী। কারণগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে তা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে এ খাতের ধ্বংস ঠেকানো যাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement