২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফেনী নদীর পানিচুক্তি

সঙ্কটে পড়বে মুহুরী প্রকল্প

-

সীমান্তঘেঁষা ফেনী নদী বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ, যার শতভাগ মালিকানা আমাদের। নদীটির ওপর অন্য কোনো দেশের অধিকার থাকার কথা নয়। আমাদের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি উপজেলার মধ্যবর্তী ‘ভগবান টিলা’ নামের পাহাড় থেকে এর উৎপত্তি। এর পানির ওপর নির্ভরশীল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প মুহুরী প্রকল্পের চাষাবাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি না হলেও ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি দিতে রাজি হয়ে গেছে বাংলাদেশ। অথচ এ নদীতে ভারতের অধিকার নেই। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতাস্মারক অনুযায়ী, ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি সে দেশের ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে সরবরাহ করা হবে, যাতে সেখানে পানির প্রয়োজন মেটানো যায়। ঢাকার তরফ থেকে জানানো হয়, ‘সম্পূর্ণ মানবিক কারণে’ প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতকে চুক্তি অনুযায়ী পানি দিলে শুষ্ক মওসুমে মুহুরী প্রকল্পের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ফেনী নদীর পানিসংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পর খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা, ফেনী জেলা ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কৃষকদের মধ্যে হতাশা ও তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মিরসরাই ও রামগড় ছাড়াও ফেনীর ছয়টি উপজেলায় ফেনী নদীর পানি দিয়ে প্রায় এক লাখ টন ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। শুষ্ক মওসুমে পানিপ্রবাহ কম থাকায় এমনিতেই প্রতি বছর অনেক জমি অনাবাদি থাকে। এ অবস্থায় ভারত আরো পানি তুলে নিলে সঙ্কট তীব্রতর হবে। বহুলালোচিত এ চুক্তি নিয়ে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত এ নদীকে কেটে ত্রিপুরার একটি গ্রামে প্রবেশ করালেও এ অংশের প্রায় ১৭ একর জমির মালিকানার প্রশ্ন আজো অমীমাংসিত। এ জমি বাংলাদেশের হলেও ভারত তা দাবি করে আসছে অন্যায়ভাবে। ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি শহর সাব্রুমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অজুহাতে ২০০২ সাল থেকে ভারত ফেনী নদী থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি তুলে নিচ্ছে। ৩৬টি পাম্প দিয়ে ফেনী নদীর পানি তুলছে ভারত। এ হিসাবে ভারত পানি তুলছে ৬৮ থেকে ৭২ কিউসেক। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, বর্ষা মওসুমে এ নদীতে পানির প্রবাহ থাকে ৮-১০ হাজার কিউসেক। শুষ্ক মওসুমে তা মাত্র ৫০ কিউসেকে নেমে আসে।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণাংশে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ এই সেচ প্রকল্পের স্লুইস গেট অবস্থিত। আর মুহুরী প্রকল্পের পানির প্রধান উৎস হলো ফেনী নদী। এর ভাটিতে ফেনী নদী, মুহুরী নদী ও কালিদাস পাহালিয়া নদীসহ যৌথ প্রবাহকে আড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বিরাট মুহুরী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ১৯৮৫-৮৬ সালে শেষ হয়। ফলে ২০ হাজার ১৯৪ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসে। সম্পূরক সেচসুবিধা পায় ২৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমি। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকরা শুষ্ক মওসুমে এ নদীর পানির ওপরই নির্ভরশীল। এ ছাড়া নদীর দুই পাশের চরে রয়েছে ৩৫-৪০ হাজার মাছ চাষের প্রকল্প। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে ২৫ হাজার জেলে পরিবার। নদীটির বঙ্গোপসাগর থেকে রামগড় পর্যন্ত ৮০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় সারা বছর পানি থাকে। ফেনী নদীর ওপর এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। এ নদীর পানি ভারতকে দেয়া হলে শুষ্ক মওসুুমে পানিসঙ্কট আরো বাড়বে। ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প অকার্যকর হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি ভারতকে পানি দিতেই হয়, তাহলে এ নদীতে পানিপ্রবাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ জন্য নদীটি খনন করে নাব্যতা বাড়াতে হবে। তাতে শুষ্ক মওসুুমে প্রবাহ কিছুটা বাড়বে। তবে এই খননকাজ করতে যে ব্যয় হবে তা ভারতের কাছে থেকেই নিতে হবে বাংলাদেশকে।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট

সকল