২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নারী শ্রমিকদের অভিবাসন

নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি

-

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা এখন এক কোটির মতো। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হলেন নারী। সবাই যে ভালো চাকরি নিয়ে বিদেশের সমাজের সাথে একীভূত হয়ে যাচ্ছেন এমন নয়; বরং বিপুল বাংলাদেশী যাচ্ছেন সাধারণ শ্রমিক হিসেবে এবং ছোটখাটো কাজকর্ম নিয়ে। তবে আমাদের জাতীয় জীবনে এই অদক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকদের অবদান কম নয়। আমাদের অতি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগ সরবরাহ করেন এই ‘সাধারণ’ ক্যাটাগরির ‘অসাধারণ’ শ্রমজীবীরা। তারা জায়গাজমি বিক্রি করে প্রায় নিঃস্ব হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করতে অথবা ভাগ্যোন্নয়নের আশায়।
এটা সত্য, দেশে উন্নয়নের যত কথাই জোরগলায় বলা হোক না কেন, প্রতি বছর যে ২০ লাখের মতো নতুন শ্রমশক্তি আমাদের শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে, এর কর্মসংস্থানের সুযোগ আমরা তৈরি করতে পারছি না। তাই অভিবাসন এ দেশের কর্মসংস্থানের একটি অপরিহার্য মাধ্যম। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ চাকরি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে বিদেশে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে অনেক নারীও আছেন। গত তিন বছরে শুধু সৌদি আরবেই কাজ করতে গেছেন দুই লাখেরও বেশি নারী। কিন্তু তাদের অনেকেই বেতনভাতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতারণা ছাড়াও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। অনেকের অকালে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটছে, অনেকে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, কেউ বা নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। বিভিন্ন কারণে ছয় হাজার নারী শ্রমিক ফিরে এসেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।
অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা সূত্রে জানা গেছে, গত সাড়ে তিন বছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৩১১ জন নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। তাদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে ৫৩ জন আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ আছে। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২০ জন আর দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৬ জন।
অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অবদান আমাদের অর্থনীতিতে সামান্য নয়। একজন পুরুষ শ্রমিক জাতীয় অর্থনীতিতে যতটুকু আর্থিক অবদান রাখেন, নারী শ্রমিকের অবদান তার প্রায় সমান। এ দিকে, আরো নারী শ্রমিক অভিবাসী হিসেবে পাঠানোর সম্ভাবনাও আছে। নারীরা শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাওয়ার আগে যাতে দালালের খপ্পরে পড়ে ভোগান্তির শিকার কিংবা বিদেশের মাটিতে অসহায় অবস্থায় নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার না হন এবং পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে সেখানে কাজ করে চাকরির মেয়াদ শেষে নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এ জন্য নারী শ্রমিকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পরামর্শ এসেছে, নারী শ্রমিকেরা কোনো দেশে যাওয়ার আগে তারা যেন সেই দেশের কর্মপরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ও প্রকৃত তথ্য জানতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের শ্রম শাখায় নারী কর্মকর্তা নিয়োগের পরামর্শও এসেছে। কারণ, পুরুষ কর্মকর্তার কাছে নারীরা তাদের সব ধরনের সমস্যার কথা খোলাখুলি বলতে পারেন না। তাই কর্মকর্তা নারী হলে নারী শ্রমিকদের অবশ্যই সুবিধা হবে।
বাংলাদেশে প্রায় সব বিষয়েই যথাযথ আইনকানুন ও বিধিবিধান রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর প্রয়োগ নেই বা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আছে দুর্বলতা। তেমনি প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নীতিমালাও আছে, যা অনেকটাই যুগোপযোগী এবং মোটামুটি কাক্সিক্ষত মানের। এই নীতিমালা যদি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব অভিবাসী কর্মী উপকৃত হবেন।
নারীসহ সব শ্রেণীর শ্রমজীবীর জটিলতা আর দালাল এড়িয়ে স্বল্প খরচে বিদেশে যাওয়া, নিরাপদে সে দেশে পৌঁছা, ঠিকমতো কাজ পাওয়া এবং ভালোভাবে দেশে ফিরে আসা নিশ্চিত করা আসলে রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। তবে অভিবাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরও দায়িত্ব রয়েছে নিঃসন্দেহে।
নারীরা যেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে কারো লালসা-রিরংসার শিকারে পরিণত না হন, সেটি দেখার দায়িত্ব জাতি হিসেবে বাংলাদেশীরই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

সকল