সুরমা-কুশিয়ারার গ্রাস থেকে বাঁচান
- ০৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা সুরমা-কুশিয়ারার ক্রমাগত ভয়াল ছোবলে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে হাজার হাজার মানুষ আবাদি জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। তাদের অনেকে বাধ্য হয়ে সপরিবারে অন্যদের বাড়িতে, এমনকি হাটবাজারে দোকানঘরের বারান্দায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাদের এখনো বসতবাটি নদীভাঙনের কবলে পড়েনি, তারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মাঝে সময় অতিবাহিত করছেন এবং তাদের রাত কাটছে নির্ঘুম। সিলেটের একটি দৈনিক পত্রিকা সচিত্র প্রতিবেদনে প্রসঙ্গক্রমে জানিয়েছে, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে সুরমা-কুশিয়ারার বুকে এযাবৎ ২০০ কোটি টাকার সম্পদ হারিয়ে গেছে’। অপর দিকে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য, ‘বিলীন হয়ে যাওয়া এ সম্পদের দাম ৩০০ কোটি টাকার কম হবে না।’
জানা যায়, বিশেষ করে, অর্ধশতাব্দী ধরে কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর ব্যাপক ভাঙন অব্যাহত আছে। এর ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশ ক্রমেই ভূমি হারাচ্ছে এবং ভারতের ভূখণ্ডে জমি বাড়ছে। সেই সাথে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নদীর গতিপথ এবং বাংলাদেশের মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে। সুরমা নদীর ভাঙনে অন্তত তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বহু ফসলি জমি ও বসতভিটা এবং পূর্ব সিলেটের একটি বড় হাটের একাংশ বিলীন হয়েছে। অপর দিকে, কুশিয়ারার ভাঙনে একই উপজেলার অন্য তিনটি ইউনিয়নের অনেক আবাদি জমি, স্কুল ও বাজার ছাড়াও এক হাজারের মতো বাড়িঘর নদীতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত জনপদের অসহায় মানুষজনের অভিযোগ, তাদের আহাজারি ও আর্তনাদ শোনার কেউ নেই। এ কারণে যতটুকু জমি ও ঘরবাড়ি এখনো ভাঙনের শিকার হয়নি, সেগুলো রক্ষায় পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। সরেজমিন অভিজ্ঞতা থেকে আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি বছর নদীভাঙন রোধে কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়; কিন্তু এর বেশির ভাগই ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে লুট করা হচ্ছে বলে ভাঙনপ্রতিরোধে তেমন কোনো কাজ হয় না। পাউবোর দায়িত্বশীল সূত্র স্বীকার করেছে, বিশেষত কুশিয়ারার ভাঙনে জায়গা কমছে বাংলাদেশের এবং বাড়ছে প্রতিবেশী দেশের। এই ভাঙনে বিলুপ্ত হয়ে বাংলাদেশের ছয় একর জমি ভারতীয় সীমানার মধ্যে জেগে উঠেছে। এ দিকে, ১৭টি স্থানে সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙন মোকাবেলার জন্য এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প এবার হাতে নেয়া হয়েছে এবং ২৪টি প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, ‘শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে’।
তবে এই বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতায় জনগণের চরম দুর্গতি রোধের নিশ্চয়তা যেমন নেই, তেমনি ভাঙনসংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তা হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের শত শত কোটি টাকা ‘পানিতে ঢালাই’ সার হবে এবং ভাঙন রোধের সত্যিকার পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে না।
আমাদের প্রত্যাশা, জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্বের কথা উপলব্ধি করে হলেও এখন থেকে যথাযথ উদ্যোগ গৃহীত হবে সুরমা ও কুশিয়ারার গ্রাস থেকে জকিগঞ্জকে রক্ষা করার জন্য। এ জন্য সব ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও গাফিলতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা