২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বক্তৃতা না দিয়ে ভাতা গ্রহণ

প্রসঙ্গ : ইসির অনৈতিকতা

-

একাদশ জাতীয় সংসদ ও এর পরে উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণ উপলক্ষে ‘বিশেষ বক্তৃতা’ দেয়ার নামে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবসহ ১৩ কর্মকর্তা দেড় কোটি টাকা সম্মানী ভাতা নিয়েছেন। এর বাইরে ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে তৎকালীন ইসি সচিব একাই নিয়েছেন ৪৭ লাখ টাকা। বক্তৃতা না করেই তারা সম্মানী ভাতা নিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সাংবিধানিক পদের অধিকারীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন। এ ঘটনার পর তাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করাই স্বাভাবিক।
জানা যায়, বিগত সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বা ইসির তরফ থেকে প্রশিক্ষণে ৬১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। উপজেলা নির্বাচনের জন্য এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সাবেক ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেননি। এ ক্ষেত্রে ‘কোনো অনিয়ম হয়নি’ বলে তার দাবি। সংসদ আর উপজেলা নির্বাচনে প্রশিক্ষণে অতীতে ‘বিশেষ বক্তা’ বা ‘কোর্স উপদেষ্টা’ বলে কিছু ছিল না। গত নির্বাচনের সময় এটা সৃষ্টি করা হয়।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘বিশেষ বক্তাদে’র বক্তৃতা বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঢাকায় এনে ভাগবাটোয়ারা করা হয়। এ প্রশিক্ষণের ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে দেখানো হয় তদানীন্তন ইসি সচিবকে। তিনি প্রতি প্রশিক্ষণ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ৫২০টি প্রশিক্ষণ বাবদ ২৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। অথচ এ প্রশিক্ষণে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের যাতায়াতভাতা হিসেবে মাত্র ৫০০ টাকা এবং পোলিং অফিসারদের ৪০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ সব সময় থাকে। তবে সেই প্রশিক্ষণ দেন জেলা ও উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা। ঢাকা থেকে কমিশনার বা সচিবেরা আগে সে উপলক্ষে যেতেন না।
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ৯ জন ‘বিশেষ বক্তা’ ৭ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ অর্থাৎ ১৮ দিনে জেলা ও উপজেলার ৫২০ জায়গায় বক্তৃতা দিয়েছেন। প্রতিটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে চারজন ‘বিশেষ বক্তা’ উপস্থিত থাকার কথা। প্রত্যেক ‘বিশেষ বক্তা’কে দিনে কমপক্ষে ১৪টি স্থানে বক্তৃতা দিতে হয়েছে। বাস্তবে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ থেকে বোঝা যায়, বক্তৃতাস্থলে উপস্থিত না থেকেই তারা টাকা নিয়েছেন। বলা যায়, সিইসি, চারজন নির্বাচন কমিশনার ও চার কর্মকর্তা এভাবে দেশজুড়ে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ালে সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের বাকি কাজ বন্ধ রাখতে হতো।
ইসির ইতিহাসে এমন ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণ আর হয়নি। আগে সাংবিধানিক এসব পদে থেকে কেউ প্রশিক্ষণে বক্তৃতা দিয়ে ভাতা নিয়েছেন বলে জানা নেই। কিন্তু এবার ঘটেছে সম্পূর্ণ বিপরীত, যা নৈতিকতার মানদণ্ডে কোনোভাবেই টেকে না। যা ঘটেছে তা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের মারাত্মক নজির। এ জন্য অবশ্যই জড়িত কর্মকর্তাদের দায় নিতে হবে। বলা অত্যুক্তি হবে না, প্রশিক্ষণের নামে রীতিমতো ‘হরিলুট’ হয়েছে। কমিশনের এ কাজ পুরোটাই বেআইনি। কারণ, প্রশিক্ষণের অর্থ হলোÑ নির্ধারিত প্রশিক্ষণকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে খাতায় সই করতে হবে। টাকা নেয়ার সময়ও সই দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেটি করা হয়েছে কি না, তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করা জরুরি। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে ইসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অর্থ গ্রহণ করা কতটুকু সঙ্গত? আর ‘কোর্স উপদেষ্টা’ পদের বিষয়টি যতটা না আইনি, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন নৈতিকতার। কারণ, নৈতিকভাবে এ ধরনের কাজ মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। নির্বাচন পরিচলনা করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোথাও বক্তৃতা দিলেও সেটি নির্বাচনী কাজেরই অংশ। এ বাবদ ভাতা নিতে হবে কেন? পুরো ব্যাপারটিই অন্যায় ও অনৈতিক বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement