২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এনজিওর জালে গ্রামের মানুষ

ব্যাংক কার্যক্রম জরুরি

-

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে এনজিও কার্যক্রম বেড়েছে। পাঁচ দশকে এখন তা দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে জালের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দেশে অগণিত এনজিও গজিয়ে ওঠে। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে রাতারাতি গজিয়ে ওঠা এসব এনজিওর মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী প্রতারিত হয়েছে এবং আজো হচ্ছে। তবে এ কথা বলার যৌক্তিকতা নেই যে, এনজিও কার্যক্রম দেশের উন্নয়নে কোনো অবদান রাখেনি কিংবা রাখছে না।
স্বাধীনতা-পূর্ব সময় থেকে বাংলাদেশে এনজিও কার্যক্রম চলছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সেই কার্যক্রমে ব্যাপক গতি আসে। তবে অভিযোগ রয়েছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনিয়ম-দুর্নীতির খোঁড়া অজুহাতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সরকারের সমান্তরাল শক্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এনজিওগুলোকে অনুদানের নামে অর্থসহায়তা দিয়ে থাকে, যাতে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করা সহজ হয়। এ অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যায় না অনেক ক্ষেত্রে। কারণ অতীতে দেখা গেছে, পরাশক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে অনেক দেশে তাদের অনুগত লোকজন দিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করিয়েছে, যাতে পছন্দের পুতুল সরকার গঠন করা যায়।
আমাদের দেশে মূলত দুই ধরনের এনজিও কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে। কিছু এনজিও বিদেশী অনুদানে শুধু সেবাধর্মী কাজ করে থাকে। আর বেশির ভাগ এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালায়। এই ক্ষুদ্রঋণ দৃশ্যত ‘সহজ শর্তে’ পাওয়া যায় বলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এসব সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। কিন্তু এই ঋণের সুদ ব্যাংকগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। একবার কেউ এনজিওর ঋণের জালে জড়িয়ে পড়লে তা থেকে বেরিয়ে আসা হয়ে পড়ে দুরূহ। এবার এর সত্যতা মিলেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, গ্রামে ব্যাংকগুলোর শাখা থাকলেও সেগুলো জনগণের কাছাকাছি পৌঁছতে না পারায় ঋণ প্রদানে এনজিওর প্রাধান্য আজো বিদ্যমান। বেশির ভাগ মানুষই এনজিওর জালে আটকা পড়ছেন। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, পল্লী এলাকার ৬৩ দশমিক ২৮ শতাংশ লোক এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন ২৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, মহাজনদের কাছে থেকে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং আত্মীয়স্বজন থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ। এ ঋণ নেয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফসল আবাদ করা। পল্লী এলাকার মানুষের ৬২ দশমিক ১৫ শতাংশই ঋণ নেন এ জন্য। এ ছাড়া পশুপালনের জন্য ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বাড়ি নির্মাণ বা মেরামতের জন্য ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, চিকিৎসার জন্য ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ, শিক্ষার জন্য ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, বিয়ের জন্য ৪ দশমিক ১১ শতাংশ এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে ঋণ নিচ্ছেন ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ মানুষ। জরিপে বলা হয়েছে, চার কোটি ৭০ লাখ ১৯ হাজার ৭২ জন কর্মরত জনসংখ্যার মধ্যে কৃষিতে কর্মরত দুই কোটি ৪৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৮ জন। তাদের মধ্যে কৃষি শ্রমিক ৭২ লাখ ৯১ হাজার ৮৪০ জন। গড়ে একজন কৃষি শ্রমিক সপ্তাহে ৫ দশমিক শূন্য ২ দিন এবং দিনে ৭ দশমিক ৭৬ ঘণ্টা কাজ করেন। গড়ে প্রতিদিন ৩৮৬ টাকা মজুরি পান।
আমরা মনে করি, এনজিওগুলোর চড়া সুদের অক্টোপাস থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করতে হলে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের শাখা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্থাপন করা জরুরি। ব্যাংকগুলোর অন্তত এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের দ্রুত প্রসার সময়ের দাবি। এতে গ্রামের মানুষ এনজিওর করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে পারেন। একই সাথে, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যেতে পারে, যাতে করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহজে ঋণ সুবিধা পেতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement