২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডাবলিনে শিরোপা জয়

নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশের ক্রিকেট

-

গত পরশু ডাবলিনে আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক ওয়ানডের ফাইনালে জিতে আমরা ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নয়া ইতিহাস গড়লাম। নতুন উচ্চতায় উত্তরণ ঘটল বাংলাদেশের ক্রিকেটের! সেই সাথে পূরণ হলো আমাদের স্বপ্ন। কারণ, এর আগে ওয়ানডে, টি-২০ মিলিয়ে ছয়টি ফাইনালে খেলেও আমরা শিরোপা জিততে পারিনি। ফলে এ ধরনের ফাইনালে জয় পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের ছিল প্রবল আকাক্সক্ষা। গত পরশু ডাবলিনে পূরণ হলো সেই স্বপ্নময় আকাক্সক্ষা। আমরা এক দুর্দান্ত জয় পেলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
এই জয়যাত্রার সূচনাটি করেন সৌম্য। আর এর সমাপ্তি টানেন মোসাদ্দেক। এ দুই তরুণের ঝড়ো ব্যাটেই মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। সৌম্যের ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরির পর ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন মোসাদ্দেক। এ দুই ঝড়ো ইনিংসেই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে এই ইতিহাস গড়ার ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায় ৫ উইকেটে।
এই বিজয় অর্জনের কাজ মোটেও সহজ ছিল না, বরং আগের ছয়বারের চেয়ে এবারের ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য অনেক দিক থেকেই কঠিন ছিল। কিন্তু সেই কঠিনকে সহজ করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করল, হ্যাঁ বাংলাদেশ পারে। প্রয়োজন ছিল ২০ ওভারে ২১০ রান তোলা। কিন্তু বাংলাদেশ ৭ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে জয় পেল। সপ্তমবারে এসে ফাইনালে জয় পাওয়ার দুর্ভোদ্য বাধা অতিক্রম করল বাংলাদেশ। শুরুতেই দুরন্ত সাহস ভর করেছিল সৌম্য সরকারের ব্যাটে। ৪১ বলে ৬৬ রানের সেই সাহস সৌম্য সঞ্চালন করে দিয়েছেন মোসাদ্দেকের মধ্যে। মাত্র ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা মোসাদ্দেক ২৪ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকলেন। বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম ফিফটি করার দিনে পাঁচটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন, চার রয়েছে দু’টি। দুই তরুণের অসম সাহসিকতার দিনে পথ দেখালেন দুই সিনিয়র। মুশফিক ২২ বলে করলেন ৩৬ রান। ২১ বলে মাহমুদুল্লাহর ১৯ রানের ইনিংসটিও সময় বিবেচনায় হয়ে উঠল মহা গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টির কারণেই কমেছে আকার। বৃষ্টি নামার আগে ২০.১ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১৩১ রান। ৫ ঘণ্টার বেশি সময় বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকার পর ম্যাচ হয়ে যায় ২৪ ওভারের। বাকি ৩.৫ ওভারে ক্যারিবীয়রা হাত খুলে মেরে ২১ রান যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেটে ১৫২ রানে থামে। ডাকওয়ার্থ সুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশকে টার্গেট দেয়া হয় ২৪ ওভারে ২১০ রানের। টি-২০-এর জমানায় ২৪ ওভারে এই টার্গেটে পৌঁছা কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশ অসম্ভব হওয়া সে বিষয়টিকেই সম্ভব করে তোলে ডাবলিনে গড়ল ইতিহাস।
ডাবলিনের ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টি করা এ বিজয় নিশ্চিতভাবে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ক্রিকেট মর্যাদা আরো বাড়িয়ে তুলবে। সেই সাথে নতুন করে উজ্জীবিত করবে আমাদের ক্রিকেটারদের। তবে এই নয়া ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি ক্রিকেটারদের ওপর নতুন করে দায়িত্ব এলো এই অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষার। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ক্রিকেটে আমাদের বিজয় ও নৈপুণ্য প্রদর্শনের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে বেশ কয়েকবার। হয়তো আগের ম্যাচে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন, কিন্তু এর পরের ম্যাচেই লজ্জাজনক ব্যর্থতা। এমনটি যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে আমাদের ক্রিকেটারদের আরো সচেতন হওয়া দরকার। নইলে এ ধরনের ইতিহাস গড়ার গৌরব ধরে রাখা যাবে না আমাদের ক্রিকেট অঙ্গনে।


আরো সংবাদ



premium cement