২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেশ বাঁচাতে হলে কৃষককে বাঁচাতে হবে

অবিলম্বে ধানের ন্যায্য দর নিশ্চিত করুন

-

ধানের দাম নিয়ে সারা দেশে যেন হাহাকার চলছে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষুব্ধ। চলতি বোরো মওসুমে দেশের সবখানে ধানের দাম এত কম যে, ধান চাষ করে প্রতি বিঘায় চাষিদের দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আগের মওসুমে ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকেরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। এবার তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। পাকা ধানের ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে নজিরবিহীন প্রতিবাদের পথ বেছে নিচ্ছেন অনেক কৃষক। ন্যায্য দাম না পেয়ে রাস্তায় ধান ফেলে দেয়া এবং বিনা মূল্যে প্রতিবেশীদের দিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
টাঙ্গাইলের বাসাইলে ১২ মে এবং কালিহাতি উপজেলায় ১৩ মে কৃষক পাকা ধানের ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ করেন। তাদের এই প্রতিবাদ সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে যেন আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। সবখানেই প্রতিবাদ হচ্ছে। ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে গত ১৩ মে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাজপথে ধান ছিটিয়ে প্রতিবাদ করেছেন কয়েক শ’ ছাত্র। ডাকসুর ভিপি এ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
মওসুমের শুরুতেই বোরো ধানের দাম স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। সারা দেশেই গড়ে প্রতি মণ ধানের বাজারদর এখন ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা। কোথাও কোথাও আরো কম। দিনাজপুর অঞ্চলে এক মণ ধানের দাম আর এক কেজি গরুর গোশতের দাম সমান। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বোরোর বাম্পার ফলন ফলানোর কারিগর, কৃষকের এখন মাথায় হাত। সত্যিই, ধান নিয়ে এতটা বিপদে আর পড়েননি এ দেশের কৃষকেরা। সরকার সংগ্রহ অভিযানের ঘোষণা দিলেও খাদ্য অধিদফতর মাঠপর্যায়ে ধান ক্রয় এখনো পুরোদমে শুরু করেনি। সরকারি সংগ্রহ মূল্য মণপ্রতি এক হাজার ৪০ টাকা। ওই মূল্য পেলে পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না।
পবিত্র রমজান মাসে পাটকল শ্রমিকদের মতোই সারা দেশের কৃষকেরা উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন। জানা গেছে, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকেরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে বিক্ষুব্ধ। কেউ হতাশা প্রকাশ করছেন; কেউ বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করছেন। বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরা ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
পত্রিকার খবর অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান চাষে কৃষকের যে ব্যয় হয় তাতে এটা স্পষ্ট যে, প্রতি মণ ধানের উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে কৃষকের লোকসান হচ্ছে গড়ে ৩০০ টাকা।
ধানের দাম কম হওয়ার পেছনে বিভিন্ন জায়গায় মজুদদার ও মিল মালিকদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। চলতি বোরো মওসুমে এখনো সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ করা হয়নি। মাঠপর্যায়ে খাদ্য কর্মকর্তারাও ধান সংগ্রহে অনেকটা নির্লিপ্ত বলে অভিযোগ আছে। কেউ কেউ বলছেন, মাঠপর্যায়ের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও মিলার বা মজুদদার অপেক্ষায় আছেন আরেক দফা বৃষ্টির। তখন কৃষকেরা মাঠের পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়লে ধানের দাম আরো কমে যাবে, আর মিলাররা কম দামে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে চাল বানিয়ে সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ নেবেন।
বিশেষজ্ঞরা সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়াগত ত্রুটি দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছেন। বিশেষ করে চাল সংগ্রহের নামে মিলার-ডিলারদের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের সুযোগ করে দেয়ার পদ্ধতি বাদ দিয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকারি সংগ্রহ মূল্যমণপ্রতি এক হাজার ৪০ টাকা খুবই ইতিবাচক। এটাকে কৃষকবান্ধব দর বলা গেলেও বাস্তবে এই দাম কৃষকের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। কারণ, মিলাররা কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছেন ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে। ফলে সরকারি দামের অর্ধেকও পান না কৃষক। ওই টাকা যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে। আর মিলাররা ধান শুকানোর মানের অজুহাত তুলে কৃষককে বঞ্চিত করছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি লোকজনও ধান শুকানোর মান নিয়ে কারসাজির সুযোগ করে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই বাস্তবতা মাথায় রেখে কৃষক বাঁচাতে সরকারের তরফ থেকে অবিলম্বে উদ্যোগ নেয়া দরকার। দেশ বাঁচাতে হলে কৃষকদের বাঁচাতে হবে। এ জন্য দরকার বিশেষত রাজনৈতিক সদিচ্ছা। ধানের উৎপাদন ধরে রাখতে এবং কৃষক বাঁচাতে ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতেই হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement