২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেশে দারিদ্র্য কমছে ধীরগতিতে

উন্নয়নের সুবিধাভোগী মুষ্টিমেয়

-

বাংলাদেশের অর্থনীতির কলেবর বাড়ছে। তবে প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে দারিদ্র্যের হার কমছে না। গত তিন বছরে দারিদ্র্য কমে আসার গতি অনেকটাই মন্থর। একইভাবে মন্থর হয়েছে অতি দরিদ্র কমার হারও। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সংশ্লিষ্ট জরিপের ফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখনো দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তিন কোটি ৪৯ লাখ। শতাংশের হিসাবে ২১.৮ শতাংশ। আর হতদরিদ্রের হার এখন ১১.৩ শতাংশ বা এক কোটি ৮০ লাখ। এর আগে ২০১৬ সালে বিবিএস যখন প্রাথমিকভাবে খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্য দিয়েছিল, ওই সময় দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪.৩ শতাংশ। ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ শতাংশ। ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যে হারে দারিদ্র্যের হার কমেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেই হারে কমেনি। বিবিএসের ২০০৫-২০১০ জরিপ অনুযায়ী, ওই সময়ে দেশে বার্ষিক দারিদ্র্যের হার কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। আর ২০১০-২০১৬ সালে কমেছে বার্ষিক ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে।
এর আগে বিদেশী দু’টি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতি ধনী বৃদ্ধির তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশ রয়েছে প্রথমে। অন্য দিকে, বিশ্বে অতি দরিদ্র মানুষের বসবাসের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে বাংলাদেশ। এসব প্রতিবেদন ও জরিপ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের উন্নয়নে বর্তমানে ভারসাম্য নেই। অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠলেও এর সুবিধাভোগী মাত্র মুষ্টিমেয় কিছু লোক। রাতারাতি এসব ব্যক্তি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছেন। তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি অবিশ্বাস্য গতিতে বাড়ছে। দেশে এই অসম উন্নতি তথা প্রকট বৈষম্যের কারণে দারিদ্র্যের হার কাক্সিক্ষত মানে কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে যে উন্নয়ন হচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর সুবিধাভোগী হতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। উন্নয়নের বরাদ্দ উপচে পড়লেও তা অধরাই থেকে যাচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে। বিবিএসের জরিপে আরো যে তথ্য দৃষ্টি কেড়েছে, তা হলোÑ দেশের মানুষের আয় ও ভোগ ব্যয় বাড়লেও কমেছে খাদ্য গ্রহণের হার। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে আয়ের বেশির ভাগ খরচ করছে মানুষ।
আলোচ্য জরিপ অনুযায়ী, দেশের খানাপ্রতি মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা; ২০১০ সালে ছিল ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা। মাথাপিছু আয় ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৪০ টাকা, যা ২০১০ সালে ছিল দুই হাজার ৫৫৩ টাকা। সর্বশেষ হিসাবে পরিবারভিত্তিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা। ২০১০ সালে তা ছিল ১১ হাজার ২০০ টাকা। এ দিকে, মাথাপিছু আয় ও ব্যয় বাড়লেও খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমেছে। বলা হয়েছে, ২০১০ সালে মাথাপিছু ৪১৬ গ্রাম ভাত গ্রহণ করা হলেও এর পরিমাণ নেমে এসেছে ৩৬৭ গ্রামে। মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ২০১৬ সালে দুই হাজার ২১০ কিলোক্যালরিতে নেমে এসেছে; যা ২০১০ সালে ছিল মাথাপিছু গড়ে দুই হাজার ৩১৮ কিলোক্যালরি। স্বাধীনতার পর থেকে আয়ের বড় অংশ খাদ্যে ব্যয় করা হলেও এবার খাদ্যবহির্ভূত খাতে বেশি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে পরিবারগুলোর গড় অর্থ ব্যয়ের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে খাদ্যে। এ সময়ে খাদ্যবহির্ভূত খাতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৩০ শতাংশে। অথচ ২০১০ সালে খাদ্য খাতে ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও অন্য খাতে ৪৫ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, প্রবৃদ্ধি বাড়লেও মানুষের শ্রম আয় না বাড়লে দারিদ্র্যের হার সেই হারে কমবে না। শ্রম আয় বাড়লে সাধারণত দারিদ্র্য কমে আসে। গত কয়েক বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যে হারে বেড়েছে, দেশে শ্রম আয় সেই হারে বাড়েনি। ফলে দারিদ্র্য কমার হার প্রত্যাশার চেয়ে কম।
দেশের সব নাগরিকের সমান সুযোগের ভিত্তিতে যদি একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং টেকসই অর্থনীতি দাঁড় করানো না যায়, তাহলে দেশে ইনসাফভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠা সুদূরপরাহত। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি না হলে আর্থসামাজিক অস্থি’রতা দূর হবে না। দিন দিন তা বাড়বে। উৎকট বৈষম্য নিয়ে কোনো জাতি বেশি দূর এগোতে পারে না।


আরো সংবাদ



premium cement
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই

সকল