২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস

ভয়াল সে কালো রাত আজো তাড়া করে

-

আজ সোমবার ২৫ মার্চ। ভয়াল এক কালো রাতের স্মৃতিবিজড়িত দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর কাপুরুষোচিত ও পৈশাচিক হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সেই রাতে তারা যেন উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে। ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে একচেটিয়া বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে ভুট্টো-ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেই মুহূর্তে শাসকগোষ্ঠী রাতের আঁধারে নানা ধরনের মারণাস্ত্র নিয়ে বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদরত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। এ ছিল বাঙালির রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার শামিল।
১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর স্বাভাবিকভাবেই সরকার গঠনের কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন দলটির। সে ক্ষেত্রে বাদ সাধে পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড প্রতিবাদী হয়ে ওঠে বাঙালিরা। সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্টি হয় গুরুতর রাজনৈতিক অচলাবস্থা। এর নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে ঢাকায় নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে হত্যা করা। তারা নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে অসংখ্য সাধারণ মানুষকে। নির্মম এই হত্যাযজ্ঞই কার্যত বাঙালিদের বাধ্য করেছিল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করতে। নির্মমতার সমুচিত জবাব দিয়ে আমরা ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি স্বাধীন-স্বদেশ বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ তথা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে দুই বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করতে অস্ত্র দিয়ে দমনের চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যা শুরু করার দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিকভাবেও দিনটি পালনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসঙ্ঘে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সে প্রস্তাব এখনো স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে।
২৫ মার্চের কালরাতের সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজো দেশবাসীকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি এই গণহত্যা দিবস পালন করবে সারা দেশে।


আরো সংবাদ



premium cement