৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রভাবমুক্ত হলে জনবান্ধব হবে

স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংস্কার জরুরি

-

দেশের তৃণমূলের মানুষের জীবনে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার এবং এর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। জনগণের সুখ-দুঃখে, বিপদ-আপদে এই জনপ্রতিনিধিরাই পরিবারের পর সবার আগে গিয়ে বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ান। উভয় পক্ষ ভাগাভাগি করেন নিজেদের আনন্দ। তবে দেশের সব পর্যায়ের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় এখন ক্ষমতাসীন দলের প্রবল প্রাধান্য বিদ্যমান। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা জনপ্রতিনিধি হয়ে আসেন, তারা স্বাধীনভাবে কোনো সেবামূলক কাজ করতে পারেন না। স্বাধীন দেশে এখনো স্থানীয় সরকারব্যবস্থা চলছে ঔপনিবেশিক আমলের মতো। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংসদ সদস্যদের প্রভাব প্রত্যক্ষ ও প্রবল। অথচ আইনপ্রণেতা হিসেবে তাদের প্রধান কাজ আইনসভায় আইন তৈরি করা। কিন্তু তারা বেশি আগ্রহী স্থানীয় সরকারের উন্নয়নকাজে সম্পৃক্ত হতে। এই আগ্রহের প্রধান কারণ, স্থানীয় পর্যায়ে নিজের পছন্দের লোকজনকে সুবিধা করে দেয়া এবং গোষ্ঠীস্বার্থ সংরক্ষণ।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে কোনো সরকারই স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি; কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায় সারতে চেয়েছে। সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতিশ্রুতি পূরণ করে স্থানীয় সরকারকে সবল ও সক্ষম করে তোলা। দুঃখজনক হলো, সেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না আজো। উল্টো ক্ষমতাসীনেরা স্থানীয় সরকারের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এটি আরো স্পষ্ট হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে যেকোনো পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে বিরোধী দলের কেউ নির্বাচিত হলে, তাকে পদে পদে ও প্রতিনিয়ত বাধা দেয়া হয়েছে, যাতে স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন। অনেককে করা হয়েছে ঠুনকো অজুহাতে বরখাস্ত। এমন অবস্থায় এখন চলছে একতরফা উপজেলা নির্বাচন।
দেশে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সবচেয়ে নিচের ধাপে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ। এর ওপরে উপজেলা পরিষদ। তার ওপরে জেলা পরিষদ। অনেক স্থানে আছে পৌরসভা। বড় নগরে সিটি করপোরেশন। দেশের স্থানীয় পরিষদগুলোতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন প্রায় ৬৭ হাজার।
একটি সহযোগী দৈনিক ‘স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শাসক দলের কব্জায়’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছেপেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানই ক্ষমতাসীনদের প্রভাবমুক্ত নয়। সেবামূলক কাজ তত্ত্বাবধানের সব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই। নেই প্রশাসনের সাথে সমন্বয়। বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের মধ্যে সমন্বয় নেই; চলছে আলাদা আইনে। বাজেট কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল। কর আদায় সীমিত।
সময়ের প্রয়োজন মেটাতে আধুনিক বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেভাবে কার্যকর স্থানীয় সরকার গড়ে তুলেছে, সেসব নমুনা দেখে এ দেশের স্থানীয় সরকার ঢেলে সাজিয়ে জনবান্ধব কাঠামো দাঁড় করানো সবার দাবি। এ জন্য প্রথমেই ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। স্থানীয় সরকারের হাতে তৃণমূলসংশ্লিষ্ট সেবা খাতগুলো ছেড়ে দিতে হবে। এসব কাজ বাস্তবায়নে যে অর্থ প্রয়োজন তা বরাদ্দ দিতে হবে এবং সময়মতো সরবরাহ করতে হবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় ও সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। জটিলতামুক্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে কাজের গতি বাড়াতে।
অবশ্য বলা যত সহজ, কাজ করা ততই কঠিন। তবু বসে থাকলে চলবে না, শুরু করতে হবে। পথে হাঁটলেই একসময় লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব। দেশে একটি গতিশীল ও কার্যকর স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গড়তে এসব সংস্কার আনতে হবে। তাহলেই আমাদের স্থানীয় সরকারব্যবস্থা কার্যকর শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে। এটাই সব পক্ষেরই কল্যাণ বয়ে আনবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement