০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কারাবন্দী প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

সংশোধনের জন্য সহায়ক

-

আমাদের দেশের কারাগারগুলোতে অপরাধীদের সংশোধনের তেমন কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। বরং কারাগারে বসবাসের সময় এর ভেতরে যে নানা অনিয়ম এবং অপরাধীদের প্রতি কায়েমি দমন-পীড়ন অন্যায়, অত্যাচার চলে, তা এদের আরো অপরাধী করে তুলতেই সহায়তা করে। এর ওপর কারাগারগুলোতে অতিরিক্ত সংখ্যায় বন্দী রাখার ফলে কারাবন্দীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে কারাগারে ধারণক্ষমতার চার গুণ বন্দী রয়েছে। দেশে ৬৮টি কারাগার রয়েছে। ১৩টি কেন্দ্রীয় ও বাকি ৫৫টি জেলা কারাগার নামে পরিচিত। এসব কারাগারে ধারণক্ষমতা ৪০,৬৬৪ জন হলেও বর্তমানে দ্বিগুণ আসামি অর্থাৎ ৯০ হাজারের মতো বন্দী রয়েছে। এর ফলে কারা কর্তৃপক্ষ এদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
এমনি পরিস্থিতিতে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় দণ্ডিত অপরাধীদের কারাগারের বাইরে রেখে সংশোধন সংক্রান্ত ‘প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৬০’-এর বিধানাবলি প্রয়োগ ও প্রতিপালনে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে এক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত পরশু প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, কারাগারের বাইরে আসামি রেখে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে আমাদের ‘প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৬০’ নামে একটি আইন রয়েছে। কিন্তু আইনটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্বল্প সাজার আসামিরা কারাগারে বড় বড় অপরাধীদের সাথে থেকে ভবিষ্যতে বড় অপরাধী হয়ে উঠছে।
উল্লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়Ñ ‘দেশের ফৌজদারি বিচারে প্রথা সব ক্ষেত্রেই দণ্ডিত অপরাধীদের সাজা ভোগের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। এতে দেশের কারাগারগুলোতে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াসহ দেশের প্রচলিত একটি আইনকে সরাসরি অবজ্ঞা করা হয়েছে। এতে কারাগারের পরিবেশসহ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এমনি প্রেক্ষাপটে, এই নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ কারাগার পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং একই সাথে অপরাধীদের সংশোধনের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তা ছাড়া এই আইন বাস্তবায়নের মধ্যে কারাগারে ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ নীতির বাস্তবায়নেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে একটি সময়োপযোগী নির্দেশ হিসেবে বিবেচনা করে স্বাগত জানাই। একই সাথে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানাব, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ কার্যকর করার ব্যাপারে সচেতন দৃষ্টি দেবেন। এর মাধ্যমে আমাদের অপরাধীদের সংশোধনের সুযোগ দেয়ার কাজটি শুরু করতে পারি। একই সাথে আমাদের ভাবতে হবে কারাগারগুলোকে সত্যিকারের সংশোধনাগার করে তোলার ব্যাপারে। এ ব্যাপারে আরো কী কী নতুন পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা ভাবার সময় এখনই।


আরো সংবাদ



premium cement