ভারতের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার প্রতিফলন চাই
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ এম আবদুল মোমেন তিন দিনের ভারত সফর শেষে শনিবার দেশে ফিরেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে তিনি দিল্লি যান। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে বৈঠক এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। নতুন সরকার গঠনের পর এটিই ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর। তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করাই ছিল তার এ সফরের মূল উদ্দেশ্য।
রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ভারতকে নতুন প্রস্তাব নিয়ে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করারও আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘নিরাপদ এলাকা’ তৈরি করে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের সেখানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ওই এলাকায় রোহিঙ্গারা নির্ভয়ে, নিরাপদে, টেকসই জীবন নির্বাহ করতে পারছেন কিনা, তা দেখভালের দায়িত্ব নিতে পারে মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র ভারত, চীন আর আসিয়ান সদস্যভুক্ত দেশগুলো। ড. মোমেন জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই নতুন প্রস্তাবটিকে একটি ‘উদ্ভাবনমূলক’ ভাবনা বলে মন্তব্য করেছেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার গুরুভার বহন করা বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব কঠিন। এর সাথে শুধু বাংলাদেশের নয় বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিষয়ও জড়িত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান না হলে এ অঞ্চলে চরমপন্থা ও অনিশ্চয়তা বিস্তার লাভ করতে পারে, যা বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারত প্রস্তাবটিকে সাধুবাদ জানিয়ে এ জন্য কাজ করবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে।
এ বিষয়ে আমাদের কিছুটা সংশয়ের কারণ আছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এর আগে আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারত বা চীন উভয়েই বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো ভূমিকা না রেখে নেতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন রাখাইনে একটি ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করছেন, সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয় দেখভালের দায়িত্ব নেয়ার জন্য নাম প্রস্তাব করেছেন ভারত, চীন এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর। কিন্তু জাতিসঙ্ঘের কোনো ভূমিকা এতে যুক্ত করা হচ্ছে না। সম্ভবত ভারত যেটা পছন্দ করবে, সেদিকে লক্ষ করেই প্রস্তাব করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে রোহিঙ্গারাও তাতে আশ্বস্ত হবে বলে মনে হয় না। বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাই।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ভারতে প্রশিক্ষণ, ওষুধ শিল্প ও দুর্নীতি দমনে সহযোগিতা এবং মংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগসংক্রান্ত চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর আওতায় বাংলাদেশের ১৮০০ সরকারি কর্মকর্তাকে ভারত বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবে। বাংলাদেশের দুদককে সহযোগিতা দেবে ভারতের সিবিআই। আর মংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ আকর্ষণে ‘বেজা’কে সহযোগিতা দেবে ভারতের হীরানন্দনী গ্রুপ। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ছাড়াও উন্নত দেশগুলোতে এসব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে তা বেশি কার্যকর হবে বলে আমাদের ধারণা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর কতটা সফল হলো, তা বোঝা যাবে এই সফরে তিনি যে প্রস্তাব দিয়েছেন এবং যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন, সেগুলো কতটা কার্যকর হচ্ছে তার ওপর। বৃহৎ প্রতিবেশী এবং বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আমরা ভারতের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার প্রতিফলন দেখতে চাই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা