২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভারতে নাগরিকত্ব আইন

ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী

-

ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেবে। সেই লক্ষ্যেই এই আইন সংশোধনের উদ্যোগ।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বারবার বলছে, বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু ভারতে যাবে, তাদের সম্পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়া হবে এবং দেশ ভাগের পর থেকে যেসব উদ্বাস্তু ভারতে স্থায়ীভাবে বাস করছে তাদের বের করে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ছয়টি ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যারা নির্যাতনের অভিযোগে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিলে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এই তিনটি দেশের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিষ্টানদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ভারত সরকার তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এই অজুহাতে যে, তারা ওই তিনটি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হাতে নির্যাতনের শিকার।
এ বিল নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে সমভাবে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ উদারনীতিক বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকেরা বলছেন, এই বিল পাস করার অর্থ হবে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র পাল্টে দেয়া। এর মাধ্যমে ভারত একটি হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত হবে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এই বিল নিয়ে বাংলাদেশেও সংখ্যালঘুদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছে ভারতেরই সংবাদমাধ্যম। ভারতীয় পত্রিকা ফার্স্টপোস্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল হিন্দুদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের প্রথম সারির হিন্দু নেতারা মনে করেন, ভারতের পার্লামেন্টে যদি শেষ পর্যন্ত বিলটি পাস হয়, তাহলে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী শক্তি এ দেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করতে উৎসাহী হয়ে উঠবে। তারা কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই হিন্দুদের জমি ও সহায়সম্পত্তি দখল করে নেবে।
এ বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমটির সাথে কথা বলেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত, ঐক্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, (ভারতের) এই আইনি পদক্ষেপ বা অ্যাকশন আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদি এই আইন সংশোধনের একটি উদ্দেশ্য হয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের আইনগত নিরাপত্তা দেয়া, তাহলে এর ঠিক উল্টোটা ঘটতে পারে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থান আরো দুর্বল হবে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ভারতের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিলকে দুধারী তলোয়ারের সাথে তুলনা করে বলেন, সাধারণভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বিশেষ করে হিন্দুরা বাংলাদেশে তাদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এখন ভারতে এই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্য আছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই আরো খর্ব হবে এবং দেশের ভেতরে তাদের দীর্ঘমেয়াদি যে ভবিষ্যৎ আছে তাকে হালকা করে দেবে। বিজেপি সরকারের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্তও। তিনি বলেছেন, এই বিল পাস হলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী শক্তি সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে দিতে উৎসাহিত হবে। পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন, এই বিল পাস হলে তা বৈষম্যমূলক ও বিভক্তির রাজনীতি উসকে দেবে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির বিরুদ্ধে যায়। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, চূড়ান্তভাবে মানবতার জয় হবে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী কোনো নাগরিক এই বিলকে আইনে পরিণত হতে দেবে না বলেও মনে করেন তিনি।
আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ রয়েছে তা যেকোনো পরিস্থিতিতে অব্যাহত থাকবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ সাধারণভাবে উগ্রতা ও ধর্মান্ধতার বিরোধী। ভারতে গরুর গোশত খাওয়ার অপরাধে মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যা করা হলেও বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়ায় কোনো হিন্দুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। আমরা আশাবাদী যে, বাংলাদেশের সরকার ও প্রশাসনও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় যথেষ্ট আন্তরিক ও সক্ষম। সর্বোপরি এ বিলটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।


আরো সংবাদ



premium cement