আর পেছানো না হলে সংসদ নির্বাচনের সময় বাকি আছে মাত্র ১০-১২ দিন। ইতোমধ্যে টান টান উত্তেজনা নিয়ে ভোটপ্রার্থীদের অপেক্ষা শুরু হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও দল-জোট ও ফ্রন্ট সদস্যরা সেটি আর দেখাতে চান না। তাই একধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চললেও তার বহিঃপ্রকাশ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে ভোটের মাঠ এখনো প্রস্তুত হয়নি। নির্বাচন কমিশন বা ইসির সক্ষমতা নিয়ে এন্তার প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রচারণার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। বিশেষত, বিরোধী দল একটি অসমযুদ্ধের ময়দানে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হয়েছে। জনমনে এখনো বিপুল শঙ্কা ও সংশয়, শেষ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচন হবে তো? জনগণের ভোটের আমানত রক্ষা পাবে তো?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন বা ভোটকে কখনো এতটা শঙ্কা ও সংশয় নিয়ে দেখা হয়নি। এর প্রধান কারণ, ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতা না ছেড়েই নির্বাচন করছে। তারা সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে চলেছেন। ইসির ব্যর্থতা এ ক্ষেত্রে অপরিসীম। ইসির সদস্যরা সম্ভবত এখনো নিজেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনে করছেন বলে তাদের ভূমিকায় মনে হয় না। ইসির সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করলে তারা যে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারতেন, সেটি তারা যেন মনেও করতে পারছেন না। এমনটি করার গরজও তাদের নেই বলে জনগণের ধারণা। জাতিকে একটি সুষ্ঠু-সফল, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং মোটামুটি সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য সংসদ নির্বাচন উপহার দেয়ার ইচ্ছা, যোগ্যতা, আগ্রহ ও দৃঢ়তা যেন ইসির সদস্যরা দেখাতে মোটেও প্রস্তুত নন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির হাস্যকর নির্বাচন যেভাবে নির্বাচনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক কাঠামো নষ্ট করে দিয়েছে, তারপর স্থানীয় নির্বাচনগুলো নিয়ে যেভাবে নাগরিকদের ভোটের অধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে, এর ফলে ভোটাররা নির্বাচনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন; তেমনি নির্বাচন কমিশন নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিকতার কথা ভুলে গেছে কিংবা তাদের ওপর সরকারের নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের যে মনস্তাত্ত্বিক চাপ পড়েছে, সেটি যেন কমিশন ভুলতে পারছে না। অর্থাৎ অযৌক্তিক অদৃশ্য ভীতি তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তাই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সত্তা আর ধারণ করতে চাচ্ছে না বলে মনে হয়। তবে এবার নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নসংক্রান্ত আপিলগুলো নিষ্পত্তির ব্যাপারে তারা কিছুটা স্বকীয়তা ও সাহস দেখানোর চেষ্টা করেছেন। এর মাধ্যমে তারা ভোটারদের মনে আশাবাদ কিংবা আস্থার পরিধি বাড়ানোর কাজ করেছেন বলে মনে করা যায়। তবে শুধু এর মাধ্যমে সচেতন নাগরিক, বোদ্ধা মানুষ, বুদ্ধিজীবী এবং নির্বাচন সম্পর্কে অভিজ্ঞরা সান্ত্বনা পেতে চান না। কারণ, নির্বাচনের মাঠ বাস্তবিকই সমতল করা, প্রার্থীদের সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, নির্বাচন কর্মীদের সর্বপ্রকার হয়রানি বন্ধ করার মতো জরুরি বিষয়গুলোর ব্যাপারে ইসি যেন এখনো নিস্পৃহ ও অসহায়। এই নির্বাচন কমিশনকে জনগণের আস্থার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মতো অনেক কাজ বাকি। তার ওপর, ভোটের প্রস্তুতির বিষয় যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে বলে মনে হয় না। এখানেও জনমনে সংশয়-শঙ্কা যেমন কাজ করছে, তেমনি ইসির দুর্বল ও সীমাবদ্ধতাও কারো দৃষ্টি এড়াচ্ছে না।
আমরা আশা করি, আসন্ন নির্বাচনের আগেই ইসি নিজেকে সক্ষম, সাংবিধানিক ক্ষমতাধর এবং সোজা মেরুদণ্ডের অধিকারী বলে প্রমাণ করতে পারবে। নয়তো ভোটের নিছক আনুষ্ঠানিকতা হবে সুকৌশলে সরকারের সাজানো বাগানে ইসির প্রবেশাধিকার থাকবে শুধু লোক দেখানো। জনগণ এ ব্যাপারে আস্থাশীল হতে চায় যে, কমিশন আসলেই সক্ষম ও ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান; যারা একটি সফল ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার সামর্থ্য রাখে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা