২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি

কঠোর ব্যবস্থা নেয়াই সময়ের দাবি

-

দীর্ঘ দিন ধরে এসএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অনেক বেশি অর্থ অন্যায়ভাবে আদায়ের খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। সুদূর মফস্বলের আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে খোদ রাজধানীর সচ্ছল ও সুপরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত এই অনিয়ম চলে আসছে অবাধে। সাধারণত চাপ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এভাবে বহু টাকা আদায় করা হচ্ছে। উচ্চ, মধ্য ও নি¤œবিত্ত নির্বিশেষে অভিভাবকেরা বাধ্য হচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের এসব অনৈতিক দাবি পূরণ করতে। এবারো এই দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে বলে জানা যায়।
অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কয়েক দিন আগে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব স্বাক্ষরিত পত্র মারফত এ অনুরোধ জ্ঞাপন করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, এসএসসি এবং এর সমমানের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য সরকার যে পরিমাণ ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে, বিভিন্ন স্থানে তার চেয়ে বেশি আদায় করার অভিযোগ আসছে দুদকের কাছে। উল্লেখ্য, এসএসসির সমমানের পরীক্ষাগুলোর মধ্যে আছে এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং মাদরাসার দাখিল ও দাখিল ভোকেশনাল। চিঠিতে দুদক বলেছে, দুর্নীতিপরায়ণ কিছু শিক্ষক পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন। এ ব্যাপারে দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে প্রতিদিনই বহু অভিযোগ আসছে। সম্প্রতি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে এর প্রমাণ পেয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে, অর্থাৎ দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে, ফরম পূরণ করতে দেয়া হচ্ছে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদেরও। এ জাতীয় তৎপরতা সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইমেজ ও সুনাম নষ্ট করছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর এবং মাঠ প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে এটা অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে দুদকের অভিমত। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দুদক এই চিঠির কপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলাগুলোর ডিসিসহ বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছে।
দুদক জানায়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার ফি’র নামে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সারা দেশ থেকে এ সম্পর্কে অভিযোগ আসতে থাকে। দিনে শতাধিক অভিযোগও আসছে এ বিষয়ে। দুদক শিক্ষা খাতে নৈরাজ্য ঠেকাতে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করছে। দুদক এ জন্য আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়ার পাশাপাশি নিজেরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে এই সংস্থার অভিযান প্রয়োজনে আবারো পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়।
আমরা মনে করি, ভুক্তভোগী জনগণের স্বার্থে এবং সবার মধ্যে সততা ও নৈতিকতার পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে, আইনগত ব্যবস্থার সাথে কার্যকর প্রচারণা ও সচেতনতাও জরুরি। শুধু শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নয়, দায়িত্ববোধ ও নৈতিক চেতনাও সৃষ্টি করতে হবে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অবক্ষয় রোধ করতে। এই প্রেক্ষাপটে প্রশাসন আইনের যথার্থ প্রয়োগ এবং আবশ্যকীয় কঠোরতা অলম্বনে দ্বিধা করবে না বলেই দেশের জনগণের প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement