১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন

জাতিসঙ্ঘকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিন

-

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে। আগেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযানের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে দেশটি। কিন্তু জাতিসঙ্ঘকে পাশ কাটিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হলে তারা আবারো নিপীড়নের শিকার হতে পারে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত ৩০ ও ৩১ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মিয়ানমারের তৃতীয় বৈঠকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রত্যাবাসন শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুরুতে ৪৮৫টি পরিবারের দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারও উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ায় প্রতি সপ্তাহে ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত জুন মাসে রোহিঙ্গাদের সব রকম সুবিধা নিশ্চিত করে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একটি স্মারক স্বাক্ষর করেছে। তবে জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ইউএনএইচসিআরের সাথে কোনো আলোচনা করেনি। এমনকি এ ঘোষণা আসার আগে রোহিঙ্গা শরণার্থী যাদের পাঠানো হচ্ছে, তাদের সাথে আলোচনা করা হয়নি। জতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এ পরিকল্পনাকে তাড়াহুড়া ও অকালপক্ব বলে আখ্যায়িত করে এর বিরোধিতা করেছে। জাতিসঙ্ঘ বলছে, রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অবস্থা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য সহায়ক নয় বলে আমরা মনে করি। ইউএনএইচসিআর এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠাবে না।
বাস্তবতা হচ্ছে, তড়িঘড়ি করে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে আবারো শোচনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। রোহিঙ্গারা যে সহিংসতা ও নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসেছে, মিয়ানমারে ফিরে গেলে আবারো একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করার জন্য বাংলাদেশ অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারছে না। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা বহন করা বাংলাদেশের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ছে। আমরা মনে করি, এ মাসে যে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করতে সব পক্ষকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। রোহিঙ্গারা যেন আবার ফিরে না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সব ধরনের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল