২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেড় মিনিটের পথে লাগে ৩০ ঘণ্টা!

একবিংশ শতাব্দীতে অবিশ্বাস্য সত্য

-

মহাসড়কে নানাবিধ ব্যস্ততা, তদুপরি হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম উৎসব দুর্গা পূজার স্বাভাবিক তোড়জোড়। অথচ জনজীবনের এত কর্মতৎপরতার মাঝেই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে সংস্কারের নামে।
একটি জাতীয় দৈনিকের নিজস্ব প্রতিবেদনের শুরুতেই এ কথা জানিয়ে একটি ছবিতে দেখানো হয়েছে খুঁড়ে রাখা মহাসড়কে জনদুর্ভোগের নমুনা। এতে দেখা যাচ্ছে, খুলনার ডুমুরিয়াতে বেহাল মহাসড়কের এক পাশে সারিবেঁধে ট্রাকের পর ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। পাশ দিয়ে নারী-শিশুসহ লোকজন হাতে মালপত্র নিয়ে কোনোমতে চলাচল করছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উপজেলা সদরের সন্নিকটে গুটুদিয়ায় দুই মাসেও আধা কিলোমিটার সড়ক সংস্কার সম্পন্ন করা হয়নি। তাই এখানে দেড় মিনিটের রাস্তা পার হতে এখন লেগে যায় ৩০ ঘণ্টারও বেশি। মোট কথা, এ কারণে সাধারণ মানুষের দুর্গতির শেষ নেই। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে খুব মন্থরগতিতে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলে জনগণের চলাচলে সমস্যা আরো বেড়ে যায়। সড়কের অর্ধেক খুঁড়ে সেখানে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এতে চলাচলের অসুবিধা না কমে বরং বেড়ে গেছে। সড়কের বাকি অর্ধেকাংশে অপরিসর জায়গা দিয়ে দ্বিমুখী যানবাহন চলাচল যানজট বাড়িয়ে দিয়েছে। এই জটের একটি দৃষ্টান্ত হলো, গত ১২ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাস, মালবাহী ট্রাক, রোগীবাহী সরকারি-বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, তেলবাহী ট্যাংকার প্রভৃতি পরদিন শনিবার দুপুর পর্যন্ত যানজটে আটকা পড়েছিল। এর পাশাপাশি চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীসমেত জনসাধারণের কষ্ট ও দুর্ভোগের কথা তো বলাই বাহুল্য। অন্য দিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, মহাসড়কের এ জায়গায় অর্ধকিলোমিটারের মাটি ‘ভালো নয়’, তাই কাজে সময় লাগছে বেশি। ডুমুরিয়ার ইউএনও সড়ক সংস্কারে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ কাজে অগ্রগতি নেই। যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ।’ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, ‘সওজ সড়কের কাজ করছে, তবে এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদকে জানানো হয়নি। সড়কের কাজ ও যানজটের প্রসঙ্গে জেলার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বৈঠকে একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও কাজ হয়নি।’ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য জানার জন্য ওই পত্রিকার প্রতিবেদক বারবার চেষ্টা চালালেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দেশের মানুষের জন্যই যাবতীয় উন্নয়ন। তাই জনগণের সমস্যা বাড়িয়ে নয়, তাদের জীবনযাত্রা যতটা সম্ভব অুণœ রেখে সড়ক সংস্কারসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা উচিত। সড়ককে বলা হয়, ‘সভ্যতার স্নায়ু’। একটি দেশের জন্য সড়ক নেটওয়ার্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে যেখানে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান এবং গত কয়েক দশকে লক্ষণীয় অগ্রগতিও হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সড়কের মতো অবকাঠামো পর্যাপ্ত ও মানসম্মত থাকা অপরিহার্য। তবে সব কিছু করতে হবে জনগণের সার্বিক কল্যাণকে সর্বোর্ধ্বে স্থান দিয়ে।
এই শতাব্দীর ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সাথে দেশকে বিশ্বসভায় তুলে ধরা এবং জাতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য উন্নয়নকাজে যথাযথ দায়িত্ববোধ ও সমন্বয় থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। সরকার সত্যিকারভাবে গণতন্ত্রমনা হলে এবং জনমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে জনগণ উন্নয়নকাজে অনুকূল ভূমিকা রাখবে বৈকি। যা হোক, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের উল্লিখিত কাজ যতটা শিগগির সম্ভব এবং মান বজায় রেখে সম্পন্ন করার প্রতি আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


আরো সংবাদ



premium cement