উদ্ধার করতে হবে নৌপথ
- ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
নদীর ওপর বাংলাদেশের মানুষের জীবন নির্ভরশীল। এ দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের জীবন ও জীবিকাও নদী দ্বারা প্রভাবিত। দুর্ভাগ্য হলো, জালের মতো ছড়ানো-ছিটানো নদনদী আমরা রক্ষা করতে পারিনি; বরং আমরা নদীকে যেন শত্রু বানিয়েছি। ফলে একে একে হারিয়ে গেছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী। যেগুলো বেঁচে আছে আজো, সেগুলোর ওপর মানুষের নিপীড়ন চলছে। এখন প্রতিদিনের খবর হচ্ছেÑ এক ধরনের ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী, দূষণের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে নদী কিংবা বাঁধ দিয়ে শেষ করে ফেলা হচ্ছে নদীর ক্ষীণ স্রোতধারাও। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি নদীকে ব্যবহার করা হয়েছে পথ হিসেবে। এক সময় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার প্রধান অবলম্বন ছিল নৌপথ। এখন তা একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। যতটুকু বর্তমানে সচল রয়েছে, সেগুলো পরিকল্পনাহীন স্থাপনা নির্মাণের কারণে মরণাপন্ন হয়ে উঠছে।
নৌপথ কমে আসার একটি বড় কারণ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদী দখল করে গড়ে তুলছেন বাড়িঘরসহ বাণিজ্যিক বিভিন্ন স্থাপনা। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একই কাজ করছে। নির্মাণ করা হচ্ছে ব্রিজ-কালভার্ট। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের গুরুতর অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক নাব্য ধরে রাখা ও তার স্রোতধারা যথেষ্ট বজায় থাকবে কি না, সেটি দেখা হচ্ছে না। এমন উচ্চতায় ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ হচ্ছে, বর্ষায় পানি বাড়লে তার নিচ দিয়ে নৌযান চলা সম্ভব হয় না। বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিকল্পনাহীনতা দেখা যায়। নৌপথ সঙ্কুচিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছিল যারা এ ব্যাপারে কিছু সুপারিশ করেছেন। তারা প্রধানত দেশের নৌপথগুলোতে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। দেশের ৩১টি নৌপথকে প্রথম শ্রেণীর, ৪৯টিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর, ১০টিকে তৃতীয় শ্রেণীর এবং তিনটিকে চতুর্থ শ্রেণিভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে নদীর ওপর স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে একটি গাইডলাইন পাওয়া যাবে। এখন পরিকল্পনাহীন স্থাপনা নৌ-চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করলে নৌপথ রক্ষা পাবে বলে আশা করা যায়। এদিকে চলছে নদী দূষণ, দখল, ভরাট ও অবকাঠামো নির্মাণের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা। এ ব্যাপারে ২০১০ সালের অভ্যন্তরীণ জলপথ ও তীরভূমিতে স্থাপনাদি নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা রয়েছে। এটিকে যেমন মানা হচ্ছে না, অন্য দিকে এর রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি এ ব্যাপারে কিছু সংশোধনী এনেছে। এগুলো সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে রয়েছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের সুদিন ফিরে আসুক, এটা সবাই চান। কিন্তু দখল ও দূষণ বন্ধ করার জন্য যে কার্যকর উদ্যোগ দরকার সেটি নেই। ফলে নদী মরে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় নৌপথ সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধার করা অনেক কঠিন কাজ। নৌপথ পুনরুদ্ধারের প্রকল্প হাতে নিলে অনেক নদী জীবন ফিরে পাবে। অনেক নদী পাবে তার পুরনো নাব্য। এ জন্য সমন্বয় দরকার। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় যে গাইডলাইন তৈরি করেছে, সেটি সংশোধন করে দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এ জন্য দরকার হবে ব্যাপক প্রচারণা। উদ্ধার করতে হবে প্রভাবশালীদের হাত থেকে নদী। অন্য দিকে নতুন করে ব্রিজ-কালভার্ট ও বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের সময় গাইডলাইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা