২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা

দূর করতে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা প্রয়োজন

-

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রভাব একসময় পড়ে দেশের কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেই সূত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা দাবি জানালেও সরকার সে দাবি মেনে নেয়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রের জামিন আবেদনও নাকচ হয়েছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকার এখনো শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে একধরনের আতঙ্ক। তা ছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে একধরনের অচলাবস্থা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সড়কে নামার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অনাকক্সিক্ষত এ পরিস্থিতি এড়াতে ঈদের আগে আগাম ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ৬ আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করে দেয়া হয়। একই সাথে বহিরাগতদের হামলা ও পুলিশের গ্রেফতার অভিযানের কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ দিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে আদালতে। গত ৬ আগস্ট নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, আহসানউল্লাহসহ আরো কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ৪ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর জিগাতলায় দুর্বৃত্তদের হামলা চালানোর পর এ দিন প্রতিবাদ দমাতে অ্যাকশনে নামে পুলিশ। তাদের সাথে যোগ দেয় বহুল আলোচিত হেলমেট বাহিনী। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। তবে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের আগে সেমিস্টার ফাইনাল হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন ঈদের পরে নেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রায় সব ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো খোলা রাখা হয়েছে। তবে ক্লাস চলছে ঢিলেঢালাভাবে। নোটিশ দিয়ে সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি। গত ৬, ৭, ৮ আগস্ট সব পরীক্ষার সময়সূচি পিছিয়ে ঈদের পর ২৭ আগস্ট হওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এভাবে প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের ক্যাম্পাসও নিরাপদ নয়। যেভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে হামলা চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গত বুধবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ও এর আশপাশে এক হাজার পুলিশ ব্লক রেইডে অংশ নেয়। এই অভিযানে ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা না হলেও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
আমরা মনে করি, শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারকে আগ্রাসী ভূমিকা পরিত্যাগ করতে হবে। অবিলম্বে কারাগারে পাঠানো ২২ শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে হবে। পুলিশের ভূমিকা এমন হওয়া উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের অবসান ঘটে। ছাত্রদের স্বাভাবিকভাবে ক্লাসে ও পরীক্ষার হলে ফিরে আসতে দিতে হবে। না হলে ঈদের পর অচলাবস্থার অবসান না ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দমন-পীড়ন কোনো আন্দোলন দমানো উত্তম উপায় নয়। এ উপলব্ধি রেখেই সরকারকে এর ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement