২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বনামে ফিরছে বুকার : ম্যান বুকারের লংলিস্ট

-

সুবর্ণজয়ন্তী পালনের পরপরই জ্যোতি বা জৌলুশ হারাতে চলেছে ম্যান বুকার পুরস্কার ও ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার! সে রকমই আভাস মিলছে বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গনে। নোবেল পুরস্কারের পর বিশ্বে সবচেয়ে মর্যাদাবান পুরস্কার হিসেবে স্বীকৃত এ পুরস্কার। ১৯৬৯ সালে শুরু হয়ে গত বছর ৫০ বছরপূর্তিতে দেয়া হয়েছে গোল্ডেন বুকার প্রাইজও। যুক্তরাজ্য থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সেরা উপন্যাসের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। ইংরেজিতে ‘বেস্ট অরিজিনাল নোবেল’ বলা হলেও বাংলায় সেরা উপন্যাস বললেই মনে হয় চলে, সেরা মূল উপন্যাস বলার দরকার হয় না। শুরুতে এর নাম বুকার ম্যাক কনেল প্রাইজ ছিল। কিন্তু সবাই বলত বুকার প্রাইজ। ম্যান কনেল লিমিটেড ছিল এর স্পন্সর। ২০০২ সালে ম্যান গ্রুপ স্পন্সর হওয়ার পর এর নাম হয় ম্যান বুকার প্রাইজ। এই সংস্থা পুরস্কারের অর্থ মূল্যও ২১ হাজার পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার পাউন্ড করে। ফলে এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৮ বছর স্পন্সরশিপের পর ম্যান গ্রুপ বলতে গেলে সরে দাঁড়াচ্ছে। গত ১৩ মার্চ ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজের লংলিস্ট প্রকাশের পর জানা যায় এসব পরিবর্তনের কথা। আগামী ১ জুন থেকে ম্যান বুকার পুরস্কার নাম আর থাকছে না। এর স্থলে আবার ‘বুকার পুরস্কার’ বা ‘বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ নামে নামকরণ করা হবে এ পুরস্কারের। পাঁচ বছরের জন্য মাইকেল মরিট কেবিই সংস্থায় চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ক্লাংক স্টার্ট এই পুরস্কারের স্পন্সরের দায়িত্ব নিচ্ছে। এর পর আরো পাঁচ বছরের জন্য স্পন্সরের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টিদের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
২০০৫ সালে ম্যান গ্রুপ ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ প্রবর্তন করে। এর পর প্রতি দুই বছরে একবার কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত সেরা উপন্যাস বা ছোটগল্পের সঙ্কলনের জন্য এ পুরস্কার দেয়া হয়ে আসছিল। এর সাথে ছিল আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েও। ২০০৫ সালে প্রথমবারের পুরস্কার পান আলবেনিয়ার ইসমাইল কাদারে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর দেয়া হচ্ছে এই ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ।
এ বছর ১০৮টি উপন্যাস ও ছোটগল্প গ্রন্থ থেকে ১৩টি বইয়ের লংলিস্ট প্রকাশিত হয়েছে গত ১৩ মার্চ। গত বছর পুরস্কার জয়ী পোল্যান্ডের ওলগ টোকারজুরসহ ১২টি দেশের ১৩ জন লেখকের মধ্যে আটজনই মহিলা। ফ্রান্সের দু’জন ছাড়া বাকি দেশগুলোর একজন করে লেখক-লেখিকা রয়েছেন। বলতে গেলে ওলগা ছাড়া খুব নামকরা আর লেখক-লেখিকা নেই এই তালিকায়। এতে মনে হয়, এর জৌলুশ কিছুটা কমছে। এই তালিকায় আছেন আরব দেশ ওমানের জোখা আলহারথিÑ তার উপন্যাসের নাম ‘সেলেশ্চিয়াল বডিজ’, চীনের ক্যান জুয়েÑ বইয়ের নাম ‘লাভ ইন দি মিলেনিয়াম’, ফ্রান্সের এনি আরনক্সÑ বইয়ের নাম ‘দি ইয়ার্স’, দক্ষিণ কোরিয়ার হোয়াং সোক ইয়ংÑ বইয়ের নাম ‘অ্যাই ডাস্ক’, ফিলিস্তিনের মাজেন মারুফÑ বইয়ের নাম ‘জোকস ফর দি গানম্যান’, ফ্রান্সের হুবার্ট সিংগ্রালি বইয়ের নাম ‘ফোর সোলজার্স’, জার্মানির মরিসন পোচম্যানÑ বইয়ের নাম ‘দি পাইন আইল্যান্ডস’, আর্জেন্টিনার সামান্তা সাচওয়েবলিনÑ বইয়ের নাম মাউথফুল অব বার্ডস, সুইডেনের সার স্টিডসবার্গÑ বইয়ের নাম ‘দি ফ্যাকাল্টি অব ড্রিমস’, পোল্যান্ডের ওলগা টোকারজুকÑ বই ‘ড্রাইভ ইউর প্লাউ ওভার দি বোন দি বোলস অফ দি ডেড’, কলম্বিয়ার হুয়ান গ্যাব্রিয়েল ভাসকুয়েজÑ বই ‘দি শেপ অব দি রুইন্স’, নেদারল্যান্ডের টমি উইরিংগফ বইÑ দি ডেথ অব মুরাত ইদ্রিসি এবং চিলির আরিয় ট্রাবুকো জিবানের বই ‘দি রিমেইন্ডার’।
এবার বইয়ের মধ্যে মাত্র দু’টি বই নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিতÑ বাকিগুলো প্রকাশিত হয়েছে নিজ নিজ উদ্যোগে বা স্থানীয় ছোট প্রকাশকের দ্বারা। ফলে বলতে হবে আগামী প্রকাশকের প্রকাশ করা বই থেকেই হয়তো এবার কেউ পাবেন ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ।
লংলিস্ট প্রকাশ করেন বিচারক প্যানেলের প্রধান লেখক ইতিহাসবিদ বিটানি হিউজ। সদস্যরা হলেন বোন সদস্য নেইরেন ফ্রিলি, দার্শনিক অধ্যাপক অ্যাঙ্গ হবস, ঔপন্যাসিক ও স্যাটায়ারিস্ট এলনায়ান জন এবং প্রাবন্ধিক উপন্যাসিক পংকজ মিত্র।
বিটানি হিউজ বলেনÑ ১৩টি বইয়ের লংলিস্ট করতে আমাদের বেশ কষ্ট করতে হয়েছেÑ কেননা লেখার ধরনে ও বিষয়বস্তুতে ছিল নানা বৈচিত্র্য।
আগামী ৯ এপ্রিল লন্ডনের সমারস্টে হাউজে এক অনুষ্ঠানে ছয়টি বইয়ের শর্টলিস্ট প্রকাশ করা হবে আর ২০১৯ সালের পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ৩১ মে লন্ডনের রাউন্ড হাউন্ডের এক মনোরম নৈশভোজ অনুষ্ঠানে। পুরস্কারের অর্থ মূল লেখক ও অনুবাদকের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া হবে। আর লংলিস্টভুক্ত প্রত্যেক লেখক পাবেন এক হাজার পাউন্ড করে। ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজের ক্ষেত্রে অনুবাদকদেরও মূল লেখকের সমান মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে। কেননা পাঠকপ্রিয়তা পেতে অনুবাদকের ভূমিকাও কম নয়। আর এটাই যে হবে শেষ ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ, সে কথা তো বলাবাহুল্য। হ


আরো সংবাদ



premium cement